বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মারা গেছেন

বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। সোমবার (২৪ নভেম্বর) ভোরে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সংবাদ প্রকাশ করেছে ফিল্মফেয়ার। বার্তা২৪

ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুসারে, দেওল বাড়ির সামনে পৌঁছে গেছে অ্যাম্বুল্যান্স। অভিনেতার বাড়ি থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে ইতিমধ্যেই ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। দেওল পরিবারে বলিউউ তারকাদের ভিড় জমেছে। এছাড়াও মুম্বাইয়ের শ্মশানের বাইরে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছেন বলিউড সেলিব্রেটিরা।

হি-ম্যান ও ধরম পাজি, বীরু নামে খ্যাত এই অভিনেতা ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে তার অভিনয় জীবনে অতুলনীয় কিছু কাজ রেখে গেছেন। এর আগে শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতার কারণে নভেম্বরের মাসের শুরুতে তাকে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ১১ নভেম্বর অভিনেতার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। এর দু-দিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন ধর্মেন্দ্র।

পুরো নাম ধর্মেন্দ্র কেওয়াল কৃষণ দেওল। ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার লুধিয়ানাতে (পাঞ্জাব) এক জাঠ পরিবারে জন্ম ধর্মেন্দ্রর। বাবা ছিলেন স্কুলের হেডমাস্টার। পড়াশোনার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না হেডমাস্টারের ছেলের। দিলীপ কুমার ও মতিলালের অভিনয় দেখে স্বপ্ন দেখতেন রূপালি পর্দার নায়ক হওয়ার।

কৈশোরেই ধর্মেন্দ্রর রূপ ছিল দেখবার মতো। সুদর্শন পুরুষ ছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও আর্থিক অনটনের জেরে মাঠে-ঘাটে কাজ করেছেন ধর্মেন্দ্র। গ্রামের ছোট্ট গণ্ডিতে আটকে থাকতে চাননি তিনি। পরিবার তাকে বেঁধে রাখতে ১৯ বছরেই বিয়ে দিয়ে দেয় প্রকাশ কৌরের সঙ্গে। তাতেও তার স্বপ্ন উড়ান থেমে যায়নি।

১৯৫৮ সালে ফিল্মফেয়ারের ট্যালেন্ট হান্ট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের জন্য চিঠি পাঠান ধর্মেন্দ্র। সেই চিঠিই ভাগ্য ফেরায় তার। মুম্বাই থেকে ডাক আসে। সুদর্শন, সুপুরুষ ধর্মেন্দ্রর ভাগ্য তাকে নিয়ে আসে মায়ানগরী মুম্বাইতে। নিজের ট্যালেন্টের উপর ভর করেই এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন ধর্মেন্দ্র।

এই প্রতিযোগিতা দিয়ে বিমল রায়ের নজরে আসেন। ‘বন্দিনী’ সিনেমার জন্য নির্বাচিত হন ধর্মেন্দ্র। ‘বন্দিনী’ ধর্মেন্দ্রের অভিনীত প্রথম সিনেমা হলেও তা রিলিজ হতে সময় লেগেছিল। ফলে বন্দিনীতে কাজ করার পরই প্রযোজকদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হত ধর্মেন্দ্রকে। হাতে টাকা ছিল না, জুটত না দু-বেলার খাবার। একটা সময় হাল ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন, তাকে আটকান মনোজ কুমার।

পরে ১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ ছবির দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় ধর্মেন্দ্রের। যদিও ছবিটি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে শোলা অউর শবনম (১৯৬১) ছবিটি সাফল্যের মুখ দেখে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৬৬ সালে ‘ফুল ও পাথ্থর’ ছবির সঙ্গে তিনি বলিউডের এক নম্বর ‘অ্যাকশন হিরো’ হয়ে ওঠেন। এরপর একে একে জীবন মৃত্যু, ইয়াদো কি বারাত, চারাস, চুপকে চুপকে, সীতা অউর গীতা, শোলে, দোস্ত, আজাদ, ডি বার্নিং ট্রেন ধর্মেন্দ্র ফিল্মোগ্রাফিতে ব্লকবাস্টার ছবির সংখ্যা অগুণতি।

ব্যক্তিগত জীবনেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি ধর্মেন্দ্রর। অভিনয় ক্যারিয়ার শুরুর আগে বিয়ে করেছিলেন ধর্মেন্দ্র। প্রকাশ কৌরের সঙ্গে তার চার সন্তান।দুই পুত্র সানি ও ববি প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। মেয়ে বিজেতা। হেমা মালিনীর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। জিতেন্দ্রর সঙ্গে হেমার বিয়ে ভেঙে দেন। মেয়ের পরকীয়ায় সায় ছিল না পরিবারের। হেমার বাবার মৃত্যুর পর, ১৯৮০ সালে বিয়ে করেন দুজনে। তবে নিজের প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেননি ধর্মেন্দ্র। হেমা ও ধর্মেন্দ্রর দুই কন্যা – এষা ও অহনা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × 4 =