
প্রতাপশালী ভারতকে নিজেদের মাঠে পর্যুদস্ত করে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই করেছে বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়ন্স দক্ষিণ আফ্রিকা।
উইকেট প্রস্তুতিতে স্বাগতিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারত দেশের মাঠকে দুর্গম দুর্গে পরিণত করেছিল। সেই দুর্গম দুর্গকে বধ্যভূমি বানিয়ে ভারত বধ করলো দক্ষিণ আফ্রিকা। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে হাড্ডাহাডি লড়াইয়ের প্রথম টেস্ট জয়ের পর গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ভারতকে ৪০৮ রানের বিশাল ব্যাবধানে হারিয়ে ধবল ধোলাইয়ের লজ্জা দিলো।
যে উইকেটে প্রথম ইনিংসে পোর্টিয়ানরা করেছে ৪৮৯ রানের বিশাল স্কোর সেই উইকেটেই প্রথম ইনিংসে ভারত করে ২০১। দ্বিতীয় ইনিংসেও দক্ষিণ আফ্রিকা সাচ্ছন্দে খেলে ২৬০/৫ করে ৫৮৯ রানের মাউন্ট এভারেস্ট তুলে ধরে। বিপর্যস্ত হতাশ ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪০ রান করে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করেছে।
একসময়ে নিজ দেশে অজেয় ভারত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গেলো আসরে নিউজিলান্ডের কাছে (০-৩ ) ধবল ধোলাইয়ের পর এবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন্স দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে (০-২) ধবল ধোলাই হলো। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান পর্বে একদিকে যেমন ভারতের অবস্থান সঙ্গিন হলো অপরদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান হলো সুদৃঢ়।
জানি ভারতের এই পতন নিয়ে অনেক চুল চেরা বিশ্লেষণ হবে। স্কোয়াড নির্বাচন, একাদশ নির্বাচন নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট বিশেষ করে হেড কোচ গৌতম গম্ভীরের মুন্ডুপাত করা হবে। কলকাতার কথা বাদ দিলাম গৌহাটিতে যে একাদশ খেলেছে, যেভাবে ব্যাটসম্যানরা উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে তাতে সাধারণ বিশ্লেষণে বলতেই হবে ভারতের পরিকল্পনা এবং কৌশলে মারাত্মক ভুল ছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিং, বোলিং ফিল্ডিং সকল ক্ষেত্রেই ভারতকে খেলা শিখিয়েছে। গৌহাটি উইকেটে টার্ন ছিল। কিন্তু আহামরি কিছু না। এই উইকেটের মেজাজের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে উভয় ইনিংসে চমৎকার ব্যাটিং করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের পেস বা স্পিন কোন বোলিং খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
অন্যদিকে সাইমন হার্মার উইকেট এবং ম্যাচ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ভারতের অস্ত্র স্পিন দিয়েই কুপোকাত করেছে ভারতকে। দক্ষিণ আফ্রিকা দুটি টেস্টে প্রমাণ করেছে টেস্ট সিরিজ নিয়ে তাদের নিবিড় পরিকল্পনা ছিল। স্কোয়াড নির্বাচন এবং একাদশ নির্বাচনে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। ৎ
ভারত নিজেদের পাতা ফাঁদে ধরা পরে বিপর্যস্ত হয়েছে। জানিনা কি অজুহাত দিবে ভারত? ভারত স্পিন কেন, মার্কো জানসেনের পেস খেলতে পারেনি। ভারতের উইকেটে ভারতের স্পিনার্সদের ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের থেকেও ভালো খেলেছে বাটসমানরা। যেখানেই রচিত হয়েছে ব্যাবধান.দলের মূল স্ট্রাইক বোলার ক্যাগিসো রাবাদা ছাড়াই সহজেই দুটি টেস্ট জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আমি দক্ষিণ আফ্রিকাকে পাকিস্তান ভারতে দুটি কঠিন সিরিজে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সাফল্যের জন্য সাধুবাদ দিবো। প্রশংসা করবো অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার উপমধর্মী অধিনায়কত্বের। নিজের দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে কালো বামন বলে উপহাস করা মানুষটি। গোটা দল তার পেছনে একাট্টা হয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। দল হিসাবে এই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা সব দৃষ্টিকোন থেকেই ছিল শ্রেষ্টতর। অভিনন্দন দক্ষিণ আফ্রিকা। অভিনন্দন ‘বেটে কালো বামন’ টেম্বা বাভুমাকে ভারত জয়ের সাফল্যে।

ভারত -দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ
দ্বিতীয় টেস্ট। গৌহাটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস ৪৮৯ অল আউট (সিনুরান মুথুসামি ১০৯, মার্কো হ্যানসেন ৯৩, ত্রিস্তান স্টাব ৪৯, কাইল ভেরেনি ৪৫, টেম্বা বাভুমা ৪১, মারকরাম ৩৮, রিকেলটন ৩৫, কুলদীপ যাদব ৪/১১৫, জাসপ্রিত বুমরা ২/৭৫, জাদেজা ২/৯৪, সিরাজ ২/১০৬)
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস ২৬০/৫ ডিক্লারেড (ট্রিস্টান স্তাব ৯৪, টনি ডি জর্জি ৪৯, রায়ান রিকেলটন ৩৫, উইলান মুল্ডার ৩৫*, রাভিন্দ্রা জাদেজা ৪/৬২)
ভারত প্রথম ইনিংস ২০১ অল আউট (যশোভি জায়েসওয়াল ৫৮, ওয়াশিংটন সুন্দর ৪৮, মার্কো জানসেন ৬/৪৮, সাইমন হারমার ৩/৬৪)
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ১৪০ অল আউট (রবীন্দ্র জাদেজা ৫৪, সাইমন হারমার ৬/৩৭, কেশব মহারাজ ২/৩৭)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০৮ রানে টেস্ট জয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ সিরিজ জয়।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়: মার্কো জানসেন (৬/৪৮, ১/২৩)
সিরিজের সেরা খেলোয়াড়: সাইমন হারমার ১৭ উইকেট।