সালেক সুফী: টুঙ্গিপাড়ার অজ পাড়াগাঁয়ে জন্ম নেওয়া বাংলার মাটি আর মানুষের সর্বযুগের সেরা বাঙালির আজ জন্মদিন। বাংলাদেশ যাঁর ছিল ধ্যান, স্বপ্ন, দর্শন। জেল জুলুম, মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে সেই মানুষটি নিরস্ত্র বাঙালিকে দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ট সেনাবহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর অঙ্গুলি হেলনেই ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লক্ষ প্রাণের মূল্যে অর্জন করেছিল স্বাধীনতা। পাকিস্তান জেলে মৃত্যুর প্রহর গোনা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তান সরকার। দেশে ফেরার আগেই বন্ধু ভারত সরকারের নিকট থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিলেন।
ঝরা পালকের ভস্মস্তূপ থেকে দেশ গড়ার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার। এরই মাঝে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গোটা পরিবার (শেখ হাসিনা, রেহানা কাছে না থাকায় বেঁচে যান) সহ শাহাদাত বরণ করেন কিছু কৃতঘ্ন বাংলাদেশির হাতে। আজ ৪৭ বছর পরেও তাঁর আদর্শ সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। বিশ্ব সংকটের পথ ধরে যখন বাংলাদেশেও ঘনিয়ে আসছে সংকট তখন জাতি বুঝতে পারবে বঙ্গবন্ধুর মহাশূন্যতা।
কৈশোরে সুযোগ হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য হওয়ার। দেশপ্রেমের কাজল চোখে পরেছিলাম তার অনুপ্রেরণায়। আর তাই বাংলাদেশে ১৯৭৭-২০০৫ পর্যন্ত মাঠে ময়দানে কাজ করার সময় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছি। ১৭ বছর প্রবাস জীবনেও বাংলাদেশকে নিয়েই ভাবি। সুযোগ পেলেই কিছু করার চেষ্টা করি। অনেকেই নানা কথা বলেন। মুখে বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু জিকির তুলেন, কিন্তু বাস্তবে তাঁর আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত। না হলে এই সময় দুর্নীতি আর আমলাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে পদে পদে বাধাগ্রস্থ হতো না উন্নয়ন প্রয়াস। তবুও খাদ্যে সয়ম্ভরতা, অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন, সবাইকে আলোয় আলোকিত করার কাজে অগ্রগতি কম পাওয়া নয়। আজ বাংলাদেশকে মর্যাদার চোখে দেখে সারা বিশ্ব।
জীবনপণ চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী। চারপাশে বঙ্গবন্ধুর সোনার মানুষগুলো যদি থাকতো? শ্রমিক, মজুর, মাঝি, কৃষকরা নীরবে দেশ সেবা করে চলেছেন। যদি জনসংখ্যার ৮৫% যুবকরা মুক্ত পরিবেশে দেশ সেবার সুযোগ পেত, যোগ্যদের যথাযথ স্থানে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যেত; তাহলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার প্রয়াস গতি পেতো।
আজ বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিনে তার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করছি।