ঐতিহাসিক অর্জনের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

সালেক সুফী: ২০ মার্চ ২০২২ দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম তিলোত্তমা শহর জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারর্স মাঠে ইতিহাসের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ২০ বছরের অবসানে  সকল ফরমেট মিলিয়ে ২০টি ম্যাচ খেলার পর ১৮ মার্চ ২০২২ সেঞ্চুরিয়ানের সুপারস্পোর্টস পার্কে দাপুটে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। অর্জনের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত  হয় সাকিব, লিটন, তামিম, ইয়াসির, তাসকিন, মেহেদী, শরিফুল সহ পুরো দলের সম্মিলিত অবদানে। ৩১৪/৭ উইকেট বিশাল স্কোর ছিল। লিটন (৫০)  তামিমের (৪১) ওপেনিং জুটি সাকিব, ইয়াসির সহ পুরো দলের জন্য লঞ্চিং প্যাড দিয়েছিল। নিজের সেরা দক্ষতায় জ্বলে উঠেছিল সাকিব (৭৭), নবীন ইয়াসির (৫০) উপহার দিলো ভয়হীন ইনিংস। রিয়াদ ( ২৫), মিরাজ (১৯*), আফিফ (১৭) মোমেন্টাম ধরে রেখেছিল। হয়তো অর্ধেক অর্জন বাংলাদেশ ইনিংসেই হয়ে গিয়েছিল। এরপর ভালো বোলিং ফিল্ডিং করে ঘরের দলকে ২৭৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৩৮ রানে জয় ছিনিয়ে নিলো।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ জয় করে ১-০ আগুয়ান বাংলাদেশের সামনে আজ সিরিজ জয়ের হাতছানি। আজ জয় আসলে বাংলাদেশের বিশাল অর্জন হবে। কাজটি যে আদৌ সহজ নয় বলার অপেক্ষা রাখে না।কিন্তু প্রথম জয়ের মোমেন্টাম দলকে অনেক ভরসা দিবে। দেশে এবং প্রবাসে ১৭ কোটি বাংলাদেশি আজ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে সৃষ্টি সুখের উল্লাসের জোয়ারে ভেসে যেতে।

৩১৪/৭ বিশাল স্কোর দলের ‘করবো না হয় মরবো’ চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন ছিল। উইকেট ব্যাটিংবান্ধব ছিল। প্রয়োজন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুতে আঘাত হেনে স্থবিরতা সৃষ্টি। শরিফুলের সুইং আর বাউন্স, তাসকিনের দুরন্ত গতি হকচকিয়ে দিয়েছিল প্রোটিয়াদের। তিনটি তিনটি উইকেট প্রথম পাওয়ার প্লেতে হারানোর ফলে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলো ঘরের দল। সেখান থেকেই স্বপ্নের জাল বোনা। ভান্ডার ডু সেন আর অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। টেম্বা ফায়ার গেলেও ডুসেন মিলারকে সাথী করে লক্ষ্য মঞ্জিলে আগুয়ান ছিল। কিন্তু কৃতকল্প বাংলাদেশ লড়াই চালাতে থাকল।

তাসকিন ফিরে এসে মোক্ষম সময়ে ফিরিয়ে দিল। এরপর অনেকটাই একাকী যুদ্ধ জারি রেখে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলো মিলার। সাধারণত কিপ্টে বোলিং করা মেহেদী মিরাজ জুৎসই কিছু করতে পারছিল না। হঠাৎ করে কোনো বাউল বাতাস ওর বাহুতে বাহুবলীর শক্তি এনেদিল। চার চারটি উইকেট নিয়ে মিরাজ কক্ষচ্যুত করলো প্রতিপক্ষকে। তবুও সমস্যা ছিল। সারাদিন ভালো বোলিং করতে থাকা শরিফুলের পেশির টান পড়ে ৬ষ্ঠ  বোলার প্রয়োজন হলো। শেষ উইকেটে শামসি আর রাবাদা লড়াই করছিল। রিয়াদ এসে শেষ উইকেট তুলে নিয়ে  অনেক আকাঙ্ক্ষিত বিজয় তুলে নিলো। ৩৮ রানে জয়। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দ্বিপাক্ষিক ম্যাচে প্রথম জয়।

আজকের ম্যাচটি উভয় দলের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। চলমান আইসিসি ওডিআই লিগে ১৫ ম্যাচে ১১টি জয়ে ১১০ পয়েন্ট অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত পয়েন্টস তালিকার শীর্ষে অবস্থান। আজ জয় পেলে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি শীর্ষ অবস্থান সংহত হবে। ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে বাকি থাকবে সফরে আয়ারল্যান্ড এবং দেশে ইংল্যান্ড দলের মধ্যে দুটো সিরিজ। বাংলাদেশের ২০২৩ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। অন্যদিকে তালিকায় ৯ম থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা আজ ঘুরে দাঁড়ানোর মরণপণ যুদ্ধ করবে। বাংলাদেশকে সেই সুযোগটি নিতে হবে। বাংলাদেশের চার অভিজ্ঞ তারকার সঙ্গে তরুণ তুর্কিরা ভূমিকা রেখে অর্জনের পাহাড় চূড়ায় উঠে আসন্ন মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে আনন্দ জোয়ারে ভাসাবে বলে বিশ্বাস রাখি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 − two =