আতংকিত বাংলাদেশের লজ্জাজনক ধবল ধোলাই

সালেক সুফী: যেমনটা ভাবা হয়েছিল কাল, সেন্ট জর্জেস পার্কে চতুর্থ দিন সকালে এক ঘন্টার মধ্যে আফ্রিকার সাদা সিংহের আক্রোশেই বাংলাদেশকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিলো মহারাজ-হার্মার যুগল। ৮০ রানে গুটানো বাংলাদেশ হেরে গেলো ৩৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে। সঙ্গে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই।

বৈরী  পরিবেশ,  তুখোড় পেস বোলিং অজুহাত দেয়া যাবে না। যেভাবে বাংলাদেশের বিশেষত অভিজ্ঞ সিনিয়র ব্যাটসম্যানরা আত্মাহুতি দিয়েছে তা দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় ওদের বহুমূল্যের কোচিং স্টাফ দেয়া হয়,  রাজার হলে রাখা হয়।

খেলায় জয়-পরাজয় আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২ বছর খেলা একটি দল পর পর দুই টেস্টে স্পিন বোলিংয়ে ৫৩ এবং ৮০ রানে গুটিয়ে যাবে তার কোনো অজুহাত চলে না। উপরন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে ৮ জন প্রথম সারির খেলোয়াড় ছাড়া।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট অভিজ্ঞতা বিভীষিকাময়।  আগের সিরিজ গুলোর অধিকাংশ টেস্ট হেরেছিল ইনিংসের ব্যাবধানে। এবারের সিরিজে বড় ব্যাবধানে হেরে বাংলাদেশের পরাজয়ের ষোলোকলা পূর্ণ হলো। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে সামনে পাবে বলে মনে হয় না।

প্রথম টেস্ট পরাজয়ের পর আশা ছিল শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়াবে। তামিম,  তাইজুল ফিরে আশা ভরসা জুগিয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাত্মক মাইন্ড সেট থেকে আবারো চার বোলার নিয়ে খেললো বাংলাদেশ। মেহেদীকে নিয়ে ৭+১= ৮ জন ব্যাটসম্যান।  কি লাভ হলো বাংলাদেশের।  ৮০ রানের অল আউট ইনিংসে ৮ জন ব্যাটসম্যান দুই অংকে পৌঁছাতে পারেনি। প্রথম ইনিংসে ৫ জন বোলার থাকলে হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস ৩৫০-৪০০ বেঁধে রাখা যেত। তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন হতেও পারতো।

দক্ষিণ আফ্রিকার ৪৫৩ রানের জবাবে বাংলাদেশ ইনিংসে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তামিম (৪৭),  মুশফিক ( ৫১) যেভাবে উইকেটে স্থিতু হয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে তা থেকে ওদের চরম দায়িত্বহীনতাই প্রকাশ পেয়েছে। অন্তত একজন থাকলেও বাংলাদেশ ইনিংস ২১৭ থেকে বেড়ে ৩২৫-৩৫০ হতে পারতো। সেটিও কিন্তু খেলার রসায়ন পাল্টে দিতো।  টেস্টের  অর্জন বলতে উপেক্ষিত বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলের উভয় ইনিংসে মাইলফলক ২০২ রানে ৯ উইকেট। কি অজুহাত আছে ওকে প্রথম টেস্ট না খেলানোর।

ইচ্ছা করলে বাংলাদেশকে ফলো অন করিয়ে আরো একটি ইনিংস পর্যায়ের লজ্জা দিতে পারতো এলগার। হয়তো অপেক্ষা করেছে উইকেটে স্পিন ধরার। প্রথম টেস্টে স্পিন মোকাবেলায় নড়বড়ে বাংলাদেশিদের দেখে এলগার জানতো দাঁড়াতে পারবে না ওরা।  এই পেশাদার যুগে যারা স্লেজিংয়ে ভড়কে যায় তাদের মানসিক শক্তি অনুমেয়।

যাহোক ১৭৬/৬ করে যখন ওরা দান ছেড়ে দিলো বাংলাদেশের সামনে রানের পাহাড়। লিখেছিলাম হুইল চেয়ারে চড়ে মাউন্ট এভারেস্টে উঠতে হবে। ৮০ রানে গুটিয়ে পাদদেশে পৌঁছতে পারলো না, শোচনীয় পরাজয়।

দলের সঙ্গে ম্যানেজার, চার পরিচালক (ক্রিকেট অপারেশন), টীম ডিরেক্টর,  অন্যতম নির্বাচক ছিল। টেস্ট দলটির অধিকাংশ সদস্য  গ্যারি কার্স্টেন একাডেমিতে অনুশীলন করেছে। সব চেষ্টা মাঠে মারা গেলো। জানিনা বিপর্যস্ত এই দলটি দেশে আসন্ন শ্রীলংকা-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজে কি করবে?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × 4 =