গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত ক্রিকেটার এন্ড্রু সাইমন্ডস

গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার এন্ড্রু সাইমন্ডস। অস্ট্রেলিয়ার দুইবার বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের বয়স হয়েছিল ৪৬ বছর।  স্ত্রী লরা ও দুই শিশু সন্তান ক্লোয়ি ও বিলিকে রেখে গেছেন এই ক্রিকেটার।

স্থানীয় কুইন্সল্যান্ড পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ১১টায় অ্যালিস রিভার ব্রিজ থেকে বাঁ-দিকে যাবার সময় গাড়িটি উল্টে যায়।

এক বিবৃতিতে পুলিশ বলছে, ‘প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, রাত ১১টার হার্ভে রেঞ্জ রোডের উপর দিয়ে গাড়িটি যাচ্ছিল। অ্যালিস রিভার ব্রিজের কাছে বাঁ-দিকে বাঁক নেওয়ার সময় গাড়িটি উল্টে যায়। টাউন্স ভিল শহরের ৫০ কিলোমিটার দূরে সংঘটিত দুর্ঘটনার পর জরুরি পরিষেবার দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাইমন্ডসকে শুশ্রষা দেওয়ার চেষ্টা করে।  কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।’

২০০৩ ও ২০০৭ সালে বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য ছিলেন সাইমন্ডস। ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। রডনি মার্শ ও শেন ওয়ার্নের পর এ বছর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সাইমন্ডসকে হারালো অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে। গত ৪ মার্চ একই দিনে মারা যান মার্শ ও ওয়ার্ন।

সাইমন্ডসের মৃত্যুতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) চেয়ারম্যান লালচান হেন্ডারসন বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট আরো একজন সেরা ক্রিকেটারকে হারাল। সাইমন্ডস ছিলেন একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার।  অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ে তার অসাধারন অবদান ছিল।   কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি।’

১৯৭৫ সালের ৯ জুন, ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে জন্ম জন্ম গ্রহণ করেন সাইমন্ডস। বার্মিংহামে জন্ম নেয়ায় ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারতেন তিনি। কিন্তু ১৯৯৫ সালে ইংল্যান্ড ‘এ’র হয়ে খেলার অফার ফিরিয়ে দেন সাইমন্ডস। পরে ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হয় তার।

অভিষেকের পর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন ফর্মেটেই  খেলেছেন সাইন্ডস।  ২৬ টেস্টে ১৪৬২ রানের পাশাপাশি  ও ২৪ উইকেট শিকারেন তিনি। এ ছাড়া ১৯৮ ওয়ানডেতে  ৫০৮৮ রান ও ১৩৩ উইকেট এবং ১৪টি টি-টোয়েন্টিতে ৩৩৭ রান ও ৮টি উইকেট রয়েছে  এ অলরাউন্ডারের।

এসব রেকর্ড-পরিসংখ্যান খুব বেশি ভারী না হলেও, সাইমন্ডস ছিলেন ‘আল্টিমেট’ অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী-ভয়ডরহীনভাবে খেলতেন। বোলিংয়ে ব্রেক-থ্রু এনে দেয়াতে পটু ছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষের ব্যাটারের দুর্বলতাকে মাথায় নিয়ে কখনও মিডিয়াম পেস, আবার কখনও অফ-স্পিন বোলিংও করেছেন সাইমন্ডস। ফিল্ডিংয়ে ছিলেন ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরাদের একজন।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে নিজের জাত চেনান সাইমন্ডস। জোহানেসবার্গে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ব্যাট করে ৮৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে দলকে ৮ উইকেটে ৩১০ রানের পুঁিজ এনে দেন ছয় নম্বরে নামা সাইমন্ডস। পাকিস্তানের সেরা পেস বোলিং অ্যাটাক ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার, আব্দুর রাজ্জাকদের বিপক্ষে ১২৫ বলে ১৮টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১৪৩ রান করেছিলেন তিনি।  ম্যাচে ৮২ রানের জয় পায়  অসিরা।

টেস্টেও দু’টি মহাকাব্যিক সেঞ্চুরি রয়েছে সাইমন্ডসের। ২০০৬ সালে অ্যাশেজের বক্সিং ডে টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৬ রান ও ২০০৮ সালে সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৬২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। মারমুখী ব্যাটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে বেশ কার্যকরী ছিলেন সাইমন্ডস। দেশের হয়ে ১৬৯ স্ট্রাইক রেট ও ৪৮ ব্যাটিং গড় আছে তার।

টেস্টে ২টি সেঞ্চুরি-১০টি হাফ-সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে ৬টি সেঞ্চুরি-৩০টি হাফ-সেঞ্চুরি ও টি-টোয়েন্টিতে ২টি হাফ-সেঞ্চুরি করেছেন সাইমন্ডস।

তবে মাঠের বাইরে বিতর্ক ছিলো সাইমন্ডসের নিত্যসঙ্গী। উশৃঙ্খল আচরণ, মদ্যপ অবস্থায়  বিভিন্ন বিতর্কিত  কর্মকান্ডের দায়ে দল থেকে বেশ কয়েকবার বাদও পড়েন তিনি। ২০০৮ সালে ঘরের মাঠে ভারতের স্পিনার হরভজন সিংয়ের সাথে বাগযুদ্ধে জড়ান সাইমন্ডস। স্লেজিং-পাল্টা স্লেজিংয়ে মাঙ্কিগেট বিতর্কের জন্ম হয়। ক্রিকেটে এখনও এটি ‘মাঙ্কিগেট’ কেলেঙ্কারি হিসেবে এটি পরিচিত।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) প্রথম আসরে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ডলারে সাইমন্ডসকে দলে নিয়েছিলো ডেকান চার্জাস। দ্বিতীয় আইপিএলে ডেকানের শিরোপা জয়ে অবদান ছিলো তার।

২০১২ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সাইমন্ডস। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ধারাভাষ্য বক্সে নিয়মিত দেখা গেছে তাকে।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five + nine =