রবিবার ক্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ২১ রানে হেরেছিলো টাইগাররা। টপ-অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার পরও শেষ দিকে নুরুল হাসান সোহানের ক্যামিও ইনিংসে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। সোহান ১২ বলে অনবদ্য ২৫ রান করেন। ১৩৭ রানে পুঁিজ নিয়ে লড়াই করতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। ১৩ বল বাকী রেখে টার্গেট স্পর্শ করে আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম জয় পায় নিউজিল্যান্ড। নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিলো কিউইরা।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে একাদশে তিন পরিবর্তন নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে বিশ্রামে থাকা সাকিব আল হাসান একাদশে ফিরেন। তার সাথে একাদশে সুযোগ পান নাজমুল হোসেন শান্ত ও শরিফুল ইসলাম। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচের একাদশ ধেকে বাদ পড়েন সাব্বির রহমান, মুস্তাফিজুর রহমান ও নাসুম আহমেদ।
টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। শান্তকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম ওভারে ৫ রান তুলতে পারেন শান্ত ও মিরাজ। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে চার মারেন মিরাজ। এই শটেই থামতে পারতো মিরাজের ইনিংস। সূর্যের আলো পড়ায় মিরাজের নেয়া শটের ক্যাচটি নিতে পারেননি ফিল্ডার।
তবে চতুর্থ বলেই বিদায় নেন মিরাজ। সাউদির বলে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়া এ মেকশিফট ওপেনার ৫ বলে ৫ রান করেন। তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ইনিংসে নিজের প্রথম চার মারেন শান্ত। ট্রেন্ট বোল্টের করা ঐ ওভারের শেষ বলে জেমি নিশামকে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান তিন নম্বরে নামা লিটন দাস।
চতুর্থ ওভারে ৭ রান নেন শান্ত-লিটন। বাউন্ডারি দিয়ে পঞ্চম ওভার শুরুর পর পরের পাঁচ বলে কোন রানই নিতে পারেননি শান্ত। অবশ্য পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ১১ রান তুলেন লিটন ও শান্ত। ফলে ৬ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৪১ রান পায় বাংলাদেশ।
সপ্তম ওভারেও ১টি করে চার-ছক্কায় ১২ রান নেন লিটন ও শান্ত। এতে রানের গতি বাড়তে শুরু করে। তবে অষ্টম ওভারে নিজের ভুল শটে উইকেট বিলিয়ে দেন দু’বার জীবন পাওয়া লিটন। প্রথমবারের মত আক্রমনে আসা মাইকেল ব্রেসওয়েলকে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন লিটন। ২টি চারে ১৬ বলে ১৫ রান করেন তিনি। শান্তর সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৫ বলে ৪১ রান যোগ করেন লিটন।
নবম ওভারে প্রথমবারের মত বোলিং আসেন নিউজিল্যান্ডের স্পিনার ইশ সোধি। ব্রেসওয়েলের মত প্রথম ওভারেই উইকেট পেয়ে যান সোধি। ওভারের শেষ বলে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দেন শান্ত। শান্তকে শিকার করে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৭৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতে ১শ উইকেট পূর্ণ করেন সোধি।
টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলতে না পারলেও, এক প্রান্ত ধরে খেলে ২৯ বলে ৩৩ রান করে শান্ত। ১৪টি বল ডট দেন তিনি। আর বাউন্ডারি ছিলো ৪টি। স্ট্রাইক রেট ১১৪র কাছাকাছি।
শান্তর বিদায়ের পর মিডল-অর্ডারে দ্রুতই দুই ব্যাটারকে হারায় বাংলাদেশ। ৪ বলে ২ রান করে সোধির দ্বিতীয় শিকার হন মোসাদ্দেক হোসেন। আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষের দিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলার ইয়াসির আলিকে ফেরান ব্রেসওয়েল। ৯ বলে ১টি চারে ৭ রান করেন ইয়াসির। ফলে ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এ ম্যাচে সাত নম্বরে ব্যাট হাতে নামেন অধিনায়ক সাকিব। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এই নিয়ে তৃতীয়বার সাত নম্বরে ব্যাট হাতে নামেন তিনি। আগের দু’বারে ১৪ রান করেছেন সাকিব। ক্রিজে অন্যপ্রান্তে ব্যক্তিগত ৮ রানে জীবন পাওয়া আফিফের সঙ্গী হন সাকিব।
সাকিব-আফিফ জুটি বাঁধার পর পরের ২০ বলে হয়নি কোন বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি। ১৭তম ওভারে দলীয় ১শর কোটা স্পর্শ বাংলাদেশ। ঐ ওভারের পঞ্চম বলে বোল্টের ফুল-লেংথের বলে টাইমিং মেলাতে না পেরে বোল্ড হন আফিফ। আফিফের চার-ছক্কাবিহীন ২৬ বলের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে ২৪ রানে।
নিজের প্রথম ১২ বলে বলকে সীমানা ছাড়া করতে পারেননি সাকিব। তবে ১৮তম ওভারের প্রথম বলে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান তিনি। সাউদির বলে ওভার পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন সাকিব। ঐ ওভারের শেষ বলে এক্সটা-কভার দিয়ে মারতে গিয়ে দ্বাদশ খেলোয়াড় মার্টিন গাপটিলকে ক্যাচ দেন সাকিব। ১৬ বল খেলে ১৬ রান করেন তিনি। সাকিবের বিদায়ে ১৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ৭ উইকেটে ১১০।
এ অবস্থায় ইনিংসের শেষ দিকে মারমুখী হয়ে উঠেন নুরুল হাসান সোহান। সোধির করা ১৯তম ওভারের শেষ দুই বলে ওভার মিড-উইকেট দিয়ে দু’টি ছক্কা মারেন সোহান। ঐ ওভারে ১৮ রান উঠে। শেষ ওভারে বোল্টের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মারেন সোহান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৭ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
টপ-অর্ডাররা যখন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যাটিং শৈলি দেখাতে ব্যর্থ, তখন আট নম্বরে নেমে ১২ বল খেলে ১টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ২৫ রান করেন সোহান। স্ট্রাইক রেট ২শর উপরে। সোহান ছাড়া বাংলাদেশের ইনিংসে কেউই ছক্কা মারতে পারেননি। সব মিলিয়ে ইনিংসে চার হয় ১০টি। আর সর্বমোট ৫০টি ডট বল ছিলো বাংলাদেশের ইনিংসে।
বল হাতে নিউজিল্যান্ডের বোল্ট-সাউদি-ব্রেসওয়েল ও সোধি ২টি করে উইকেট নেন। জয়ের জন্য ১৩৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই ১০ রান তুলে নেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও ডেভন কনওয়ে। বোলার ছিলেন পেসার তাসকিন। শরিফুল ও হাসানের করা পরের দুই ওভার থেকে যথাক্রমে ৩ ও ২ রান পায় কিউউরা।
শরিফুলের করার চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন অ্যালেন। তবে শেষ বলে পুল করে স্কয়ার লেগে মোসাদ্দেকের তালবন্দি হন তিনি। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৮ বলে ১৬ রান করে আউট হন অ্যালেন।
এরপর ক্রিজে কনওয়ের সঙ্গী হন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। পাওয়ার প্লেতে ৪০ রান পায় নিউজিল্যান্ড। অষ্টম ওভারে ৫০ রানে পৌছায় নিউজিল্যান্ড। সাকিবের প্রথম ওভারে ১টি চার ও পরের ওভারে ১টি ছক্কা মারেন কনওয়ে। তবে বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ১২ ওভার শেষে ৮০ রান পায় স্বাগতিকরা। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে চার দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান কনওয়ে। এজন্য ৩৬ বল খেলেন তিনি।
কনওয়ের হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ওভারেই ১শতে পৌঁছায় নিউজিল্যান্ডের রান। ১৫তম ওভারে ইনিংসে প্রথম চার মারেন উইলিয়ামসন। নিজের মুখোমুখি হওয়া ২৭তম বলে প্রথম চার পাবার ১ বল পরই হাসানের বলে বিদায় নেন উইলিয়ামসন।
মিড-অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তাসকিনের হাতে ক্যাচ দেন ২৯ বলে ৩০ রান করা নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। দ্বিতীয় উইকেটে কনওয়ের সাথে ৬৬ বলে ৮৫ রানের জুটি গড়ে দলের জয়ের পথ মসৃন করেন উইলিয়ামসন। শেষ ৫ ওভারে জিততে ২৯ রান দরকার পড়ে নিউজিল্যান্ডের।
তৃতীয় উইকেটে ঝড়ো গতিতে ১৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩৩ রান তুলে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন কনওয়ে ও গ্লেন ফিলিপস। শরিফুলের করা ১৮তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দু’টি ছক্কা মেরে ম্যাচের ইতি টানেন ফিলিপস।
৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫১ বলে অপরাজিত ৭০ রান করেন কনওয়ে। ২টি করে চার-ছক্কায় ৯ বলে ২৩ রান তুলে অপরাজিত থাকেন ফিলিপস। বাংলাদেশের শরিফুল ৩৯ রানে ও হাসান ২৬ রানে ১টি করে উইকেট নেন। ১৪ রানে ২ উইকেট নেয়ায় ম্যাচ সেরা হন নিউজিল্যান্ডের ব্রেসওয়েল।
বাসস