আফরোজা আখতার পারভীন
আমাদের মতো দেশের জন্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ বিষয়টি খুবই জরুরি। বিসিপিসিএল ইপি ক্লাইমেট টকস আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন এইচআর কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুরুল হান্নান খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এনার্জি এন্ড পাওয়ারের এডিটর মোল্লাহ আমজাদ হোসেন।
তিনি বলেন, আলোচনার গতি খুবই ধীর। ২০১৩ সালে সান্তিয়াগো ফেমওয়ার্কে আলোচনা হলো লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে। তখন মনে হলো ২০১৪-১৫ সালে এটি একটি বাস্তব রূপ পাবে। ঝূঁকিপূর্ণ দেশগুলো ছাড়া অন্য দেশগুলো একে গুরুত্ব দিতে চায় না। নদী যখন ভাঙে গ্রাম বিলীন হয়ে যায়, কখনও একটি শহর পর্যন্ত বিলীন হয়। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়, আর মানুষ মারা যায়- এটি বড় ক্ষতি। আমাদের মতো দেশের জন্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ বিষয়টি খুবই জরুরি।
মঞ্জুরুল বলেন, প্যারিস চুক্তির প্রধান বিষয় হচ্ছে মিটিগেশন। প্যারিস চুক্তিতেও লস অ্যান্ড ড্যামেজ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। আমরা বলতে পারি, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড রয়েছে, কত টাকা জমা হয়েছে সেটি বড় বিষয় নয়। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড তেমন দৃশ্যমান নয়। প্রত্যেকবারেই লস অ্যান্ড ড্যামেজ আলোচনায় থাকে, করা হবে করা হচ্ছে- এই রকম আলোচনা হয়। বড়জোর একটি ওয়ার্ক প্রোগ্রামের কথা বলা হয়। কপ২৬-এ বলা হলো পরবর্তী কপে গিয়ে আলোচনা হবে। লস অ্যান্ড ড্যামেজ-এর কঠিন শর্ত হলো ক্ষতিপূরণ। ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে, আইনগত ভিত্তি তৈরি করে। যে কারণে এটাকে সাপোর্ট মেকানিজম বলার কথা হচ্ছে।
তার মতে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত, এর উপর নির্ভর করে বাস্তবায়ন। ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি বললেন, জলবায়ু বিষয়ে থাকবেন না, সম্মেলন ছেড়ে চলে গেলেন। বাইডেন কিন্তু আবার ফিরে এসেছেন। এবারের কপ একটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হচ্ছে। করোনা থেকে বিশ্ব এখনও মুক্ত হতে পারেনি। প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে। করোনা মুক্ত না হতেই ইউক্রেন যুদ্ধ সারা পৃথিবীর অর্থনীতিকে ওলোট-পালোট করে দিচ্ছে।
কপ২৭-এ ১২৬ দেশের সরকার প্রধানরা যোগ দিচ্ছেন, অন্যান্য দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ থাকছেন। চীন, রাশিয়া, ভারতের সরকার প্রধান না আসায় সিদ্ধান্তগ্রহণ ব্যাহত হবে বলে মনে করিনা। অনেক সময় দেখেছি মন্ত্রী পর্যায়েও অনেক গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত আসছে। এবারেও গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের আলোকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।
কেউ কেউ লস অ্যান্ড ড্যামেজকে এক ধরনের ফাঁদ মনে করেন। এতে আলোচনা কিছুটা অন্যদিকে মোড় নেবে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই ধারনায় একমত হবো না, আবার দ্বিমতও করবো না। বৈশ্বিক আলোচনায় কখনও ফাঁদ জেনেও আলোচনায় অংশ নিতে হয়। অ্যাডাপটেশন অর্থায়ন হলে লস অ্যান্ড ড্যামেজে কমে যাবে। আলোচনার অনেক সময় কঠিন বিষয় আনতে হয়, যা সমাধান করা যায় না। কিন্তু তখন অন্যান্য আলোচনা করতে তারা আগ্রহী হয়। লস অ্যান্ড ড্যামেজ আলোচনা করলে তারা অ্যাডাপটেশনে একমত হতে পারে।
তিনি বলেন, আলোচনায় টেবিলে যেসব তথ্য-প্রমাণ নিয়ে যেতে হয়, আমরা সব রকমের তথ্য নিয়ে যেতে পারি না। উন্নত দেশগুলো আলোচনায় আসতে চায় না, দীর্ঘায়িত করতে চায়, এটাই স্বাভাবিক। ২০১৩ থেকে ২০২২ আমরা কী করেছি, আমাদের হোমওয়ার্ক কী; কপের এই আলোচনায় ডেফিনেশন চূড়ান্ত হতে পারে। তবে অ্যাডাপটেশনের বিষয়ে মাপযোগ করা কঠিন।
তিনি বলেন, সমঝোতা প্রক্রিয়াটা সরকারের হাতে। ওই ফোরামে গিয়ে এনজিও প্রতিনিধিদের কথা বলার সুযোগ কম। তবে কপে অবজারভার হিসেবে কাজ করে এনজিও। জি২০ থেকে শুধু সরকারি প্রতিনিধিদের ডাকা হয়। কপে কথা বলা অব্যাহত রাখতে হবে, দেশে ফিরে গিয়ে ভুললে চলবে না। সরকারের উপর চাপ দিতে অব্যাহত রাখতে হবে। উন্নত দেশের সরকারকে বলতে হবে তুমি এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে, এটা রক্ষা করতে হবে।