সালেক সুফী
পরিবর্তিত, জয়ের নেশায় উজ্জীবিত পাকিস্তান দাঁড়াতেই দিলো না নিউ জিল্যান্ডকে। এসসিজিতে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে শারীরিক ভাষা সম্পূর্ণ পাল্টে যাওয়া পাকিস্তান ৭ উইকেটে সহজ জয় অর্জন করে পৌঁছে গেলো এমসিজিতে অনুষ্ঠিতব্য টি২০ ফাইনালে। ঠিক যেমনটি করেছিল ৩০ বছর আগে ইমরান খানের কর্নার্ড টাইগার্সরা ১৯৯২ সালে অকল্যান্ড থেকে নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে জয়ী হয়ে।
পাকিস্তানের উঁচু মানের বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিংয়ের মোকাবেলায় শুরু থেকে কোনঠাসা হয়ে নিউ জিল্যান্ড ১৫২/৪ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। সঠিক সময়ে পাকিস্তানের বিশ্ব সেরা ওপেনার যুগল বাবর আজম (৫৩) আর রিজওয়ান (৫৭) এমন মহিমায় জ্বলে ওঠায় পাকিস্তান ১৫৩/৩ রান করে ৭ উইকেটে জয়ী হয়। এই খেলার কোনো পর্যায়েই মনে হয় পাকিস্তানের জয় ছাড়া আর কিছু হতে পারে। বিশাল জয় আর পরিবর্তিত পাকিস্তানের সংহারী রূপ আগামী কালের বিজয়ী দলের প্রতি সতর্ক বার্তা। আহত বাঘের মতো হিংস্রতা নিয়ে ওরা অপেক্ষা করবে এমসিজির শিরোপা যুদ্ধের।
আজ টস জয়ী হয়ে নিউ জিল্যান্ড ব্যাটিং বেছে নিয়েছিল। শুষ্ক অপেক্ষাকৃত ধীর গতির উইকেটে সেটি ছিল সেরা সিদ্ধান্ত। ফর্মে ফেরা দুরন্ত শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রথম ওভার ইঙ্গিত দিলো কি হতে চলেছে। প্রথম বলে ফিন অ্যালেন বাউন্ডারি হাঁকালেও প্রচণ্ড গতির দ্বিতীয় বলটি উইকেটের সামনে ওর প্যাডে লাগলো। সৌভাগ্য আলেনের প্যাড-ব্যাট হওয়ায় ডিআরএস নিয়ে রক্ষা। কিন্তু পরের বলটি আবারো সরাসরি প্যাডে লাগে ফির গেলো টুর্নামেন্টে ভালো খেলতে থাকা অ্যালেন।
গতির সাথে সুইং মিশিয়ে পাকিস্তানের চার পেসার শাহীন, রউফ, নাসিম, ওয়াসিম অস্বস্তিতে রাখলো কিউইদের। সেই সঙ্গে তুখোড় ফিল্ডিং যোগ হওয়ায় নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস গতি হারালো। কোনওয়ে চেষ্টা করেছিল বেড়াজাল ভেঙে এগিয়ে যেতে কিন্তু শাদাব খানের সরাসরি থ্রো থেকে রান আউট হওয়ায় গতি হারায় ইনিংস। মারকুটে ফিলিপ্স চতুর নেওয়াজের ধীর গতির বলে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরে গেলে ওদের স্কোর দাঁড়ায় ৮ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৩।
সেখান থেকে সংযমী ব্যাটিং করে উইলিয়ামস ৬৮ রানের জুটি গড়েছিল। কিন্তু কখনোই ওরা পাকিস্তানের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ের মোকাবিলায় বাঁধন হারা হতে পারেনি। কিছুটা রিভার্স সুইঙের ইঙ্গিত পেয়ে ফিরে এসে উইকেটে শেকড় গেড়ে থাকা বিলাইমস্কে সরিয়ে দিলো শাহীন। ড্রিল মিচেলের অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস কিউইদের ইনিংস ১৫২/৪ পর্যন্ত টেনে নেয়। এই দিন পাকিস্তানের কিপার ফিল্ডিংয়ে অন্তত ১৫ -২০ রক্ষা করেছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না।
নিউ জিল্যান্ড উইকেট রক্ষক কোনোই শুরুতেই বাবর আযমের ক্যাচ ফেলে দেওয়ার পর বর্তমান সময়ে বিশ্বসেরা ওপেনার জুটি বাবর আর রিজওয়ান উঁচু মার্গের ব্যাটিং করে প্রথম উইকেট জুটিতে ১০৫ রান জুড়ে দেয়। টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে এসে পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা ফর্ম ফিরে পাওয়া দলের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে নিয়ে যায়। বাবর (৫৩) , রিজওয়ান (৫৭) আউট হবার পর পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের নতুন সেন্সেশন হারিস ২৬ বলে ৩০ রান করে জয় নিশ্চিত করে। এই প্রথম টুর্নামেন্টে ভালো খেলা নিউ জিল্যান্ডকে অসহায় মনে হয়েছে জয়ের নেশায় মত্ত পাকিস্তানের মোকাবেলায়।
পাকিস্তান দলের শরীরী ভাষা থেকে শুরুতেই সবাই অনুমান করেছে ১৯৯২ সালের এমসিজির সেই ঐতিহাসিক অর্জনের পুনরাবৃত্তি করতে কতটা মরণপণ ওরা।
কাল এডিলেড ওভালে খেলবে ভারত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। প্রতিপক্ষ যেই হোক সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠা উজ্জবিত পাকিস্তানকে মোকাবিলা খুব সহজ হবে না।