শিল্পী সমিতির ৯ মাসের বিতর্ক শেষে নিপুণকে বরণ করে নিলেন জায়েদ সমর্থিতরা

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে শিল্পীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সেটি গড়ায় আদালত পর্যন্তও। অবশেষে ৯ মাস পর মিটল সেই দ্বন্দ্ব।

 

আজ রোববার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভায় নিপুণকে বরণ করে নেন জায়েদ খান সমর্থিত প্যানেলের ডিপজল, রুবেলসহ অন্যরা। শুধু তাই নয়, এদিন ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে শপথ গ্রহণ করেন নায়িকা মৌসুমী ও আলীরাজ।

 

দ্বন্দ্ব মিটে যাওয়ার বিষয়ে মৌসুমী বলেন, ‘এতদিন আমাদের মাঝে নানা ধরনের বাগবিতণ্ডা ছিল। সেসব মিটে গেছে। আজ থেকে আমরা সবাই এক হলাম।’

 

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এতদিন সমিতি নিয়ে আমার একটু আক্ষেপ ছিল। আজ সেই আক্ষেপ দূর হয়ে গেল। আমি আমার পুরো কমিটিকে একত্রে পেলাম। অত্যন্ত ভালো লাগছে, আজ সবাইকে পেলাম। আমি দায়িত্ব নিলে সেটা যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করি।’

‘গত ৯ মাস ধরে আমার যন্ত্রণা ছিল, আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে পারছিলাম না। আজ সেই কষ্টের লাঘব হলো। আজ আমার কার্যকরী কমিটির সবাই এসেছে। আশা করছি, সবাইকে নিয়ে আমরা কাজ করতে পারব।’

 

নিপুণ-ইলিয়াস প্যানেল থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন চিত্রনায়ক ইমন। তিনি শিল্পী সমিতির সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইমন বলেন, ‘আজ আমাদের সাধারণ মিটিং ছিল। বরাবরের মতোই সবাইকেই চিঠি দেওয়া হয়। আজও নির্বাচিত সবাইকেই আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওনারা (জায়েদ সমর্থিতরা) এতদিন সমিতির মিটিংয়ে আসেননি। আজ গিয়েই ওনাদের দেখলাম। মৌসুমী আপু ও আলীরাজ ভাই শপথ নিলেন। ডিপজল ভাই, রুবেল ভাইয়েরাও নিপুণ আপাকে বরণ করে নেন। সব মিলিয়ে বলব, আমাদের ভেতরে যে দ্বন্দ্ব ছিল এতদিন, তা আজ শেষ হলো। এখন আমরা সবাই মিলে কাজ করতে পারব।’

 

জায়েদ খানের প্যানেল থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী জয় চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু আদালতের একটা রায় হয়েছে। সেই রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা এসেছি। আশা করছি, সবাই মিলে সমিতির উন্নয়নে কাজ করব। দিনশেষে আমরা সবাই তো এক।’

 

জায়েদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত সহসভাপতি ডিপজল বলেন, ‘সমিতির মধ্যে বিভাজন ও দ্বন্দ্ব চাইনি, পছন্দও করিনি। বরাবরই বলে এসেছি, চলচ্চিত্র ও শিল্পীদের স্বার্থে আমাদের এক সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হবে। নীতিগতভাবে আমাদের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে আমরা সমর্থন দিয়ে এসেছি। যেহেতু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, তাই আমরা আদালতের রায়ের অপেক্ষা করেছি। আর শুরু থেকেই বলেছি, আদালত যে রায় দেবেন তা সবার মেনে নিতে হবে। আদালতের তরফ থেকে জানা গেছে, নিপুণের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনে বাধা নেই। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মিটিংয়ে অংশ নিয়ে সমিতির কার্যক্রম গতিশীল করা আমার দায়িত্ব। সদস্যরা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি যদি সেই দায়িত্ব পালন না করি, তাহলে তাদের কাছে কী জবাব দেব?’

 

অবসান হলো শিল্পী সমিতির ৯ মাসের বিতর্ক।

অবশেষে শপথ নিলেন মৌসুমী ও আলীরাজ

এ বছরের ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রাথমিক ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনাসহ নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ আনলে ৫ ফেব্রুয়ারি সেই পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বোর্ড জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে। পরে নির্বাচনের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী ঘোষণা করেন।

 

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রাঙ্গণে ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ আক্তারের নেতৃত্বে নতুন কমিটির একাংশ শপথ গ্রহণ করে। পরে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে নিজ নিজ পদের চেয়ারে বসেন তারা। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন শিল্পী সমিতির সদস্যরা।

 

এরপর বিষয়টি ‘বেআইনি’ বলে দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন জায়েদ খান। নিপুণের শপথ নেওয়ার এক দিন পরেই ৭ ফেব্রুয়ারি জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচনী আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।

 

চিত্রনায়ক জায়েদ খানের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। পরে ২ মার্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

 

এদিকে মামলা চলাকালীন অনেকেই শিল্পী সমিতির শপথ গ্রহণ করলেও কার্যকরী পরিষদের সদস্য মৌসুমী ও আলীরাজ শপথ নেননি। শুধু তাই নয়, এতদিন সমিতিতে আসেননি জায়েদ খান সমর্থিত প্যানেলের নির্বাচিত সদস্যরাও।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three − one =