মেসির পেনাল্টি মিসের পরও পোল্যান্ডকে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। বুধবার রাতে দোহার ৯৭৪ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সি গ্রুপের ম্যাচে পোল্যান্ডকে ২—০ গোলে পরাজিত করেছে দক্ষিণ আমেরিকার দলটি। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল দুটি করেছেন যথাক্রমে এ্যালেক্সিস ম্যাক এ্যালিস্টার ও জুলিয়ান আলভারেজ। তবে এ ম্যাচে হারলেও গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সৌদি আরবকে পিছনে ফেলে আর্জেন্টিনার সাথে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছে পোল্যান্ডও।
প্রথম দুই ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট নিয়ে সি গ্রুপের শীর্ষস্থান নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানেই ছিল পোল্যান্ড। ফলে আর্জেন্টিনার সঙ্গে আজকের ম্যাচে ড্র করতে পারলেই ১৯৮৬ সালের পর প্রথম নকট পর্বে পৌঁছানোর সুযোগ ছিল পোল্যান্ডের সামনে। তবে আজ আর্জেন্টিনার কাছে হেরে গেলেও নকআউট পর্বে খেলার সুযোগ ছিল পোল্যান্ডের। সে ক্ষেত্রে সৌদি আরব বনাম মেক্সিকোর ম্যাচটি হতে হবে ড্র। তবে ওই দুই সমীকরনের কোনটাই হয়নি। আর্জেন্টিনার কাছে ২—০ গোলে হেরেছে পোল্যান্ড। অপরদিকে লুসাইলে গ্রুপের অপর ম্যাচে মেক্সিকোর কাছে ২—১ গোলে হেরে গেছে সৌদি আরব। কিন্তু সৌদি আরব এক গোল দেয়ায় সি গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান নিয়ে নকআইট পর্ব নিশ্চিত করেছে পোল্যান্ড। সমান ৪ পয়েন্ট নিয়ে মেক্সিকোর অবস্থান তৃতীয়।
দলে একটি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় পোল্যান্ড। সৌদি আরবের বিপক্ষে জয় পাওয়া দলের আরকাডিয়াস মিলিক এর পরিবর্তে একাদশে আসেন কারোল সুইডারস্কি। তবে এতে ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারল না বার্সেলোনা তারকা রবার্ট লিওয়ানদোস্কির দল।
ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া বল নিয়ে পোল্যান্ডের সীমানায় ঢুকে পড়েন এবং কর্নার আদায় করেন। কর্নার থেকে মেসির ক্রসের বলে হেড দেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডি। কিন্তু বল পোস্টের বাইরে চলে যায়। গোটা স্টেডিয়াম ওই সময় আর্জেন্টাইন সমর্থকে ভরে যায়। মনে হচ্ছিল নিজেদের মাঠে খেলছে আলভাসেলেস্তেরা।
ষষ্ঠ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় পোল্যান্ড। আর্জেন্টাইন সীমান্তে ওই সময় গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বল প্রতিহত করতে গিয়ে ফাউল করেন, ফলে ফ্রি কিক পায় পোল্যান্ড। তবে সেখান থেকে কোন সুবিধা আদায় করতে পারেনি তারা।
নবম মিনিটে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় মেসির শট। ৩ মিনিট পর মেসির নেয়া আরো একটি দুর্দান্ত শট গ্রিপে পুরে নেন পোলিশ গোলরক্ষক ওজিনে সিজিসনি। ১৯ মিনিটে মেসির পা থেকে বল পেয়ে ডিফেন্ডার মার্কোস এ্যাকুনা দুর্দান্ত একটা শটনেন। কিন্তু বল পোস্টের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়।
তবে পর পর আক্রমণ অব্যাহত রাখে আর্জেন্টিনা। ৩১ মিনিটে এ্যাকুনার অসাধারণ একটি শট আটকে দেন পোল্যান্ডের গোলরক্ষক। ৩৪ মিনিটে ডি মারিয়ার কর্নারের ক্রস থেকে উড়ে আসা বল বাঁক নিয়ে পোস্টে ঢুকার মুহূর্তে আরেকটি কর্নারের ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক সিজিসনি।
৩৭ মিনিটে ডি বক্সে সিজিসনি বল প্রতিহত করার সময় হাতে আঘাত পান মেসি। ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেন কর্তব্যরত রেফারি। তবে স্পট কিক থেকে ৩৯ মিনিটে গোল করতে ব্যর্থ হন মেসি। তার বাঁ পায়ের শট বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে ফিস্ট করেন পোলিশ গোলরক্ষক সিজিসনি।
এরপর ব্যর্থতা ঢাকতে পরপর কয়েকটি আক্রমণ রচনা করেন মেসি। ৪২ মিনিটে, ৪৪ মিনিটে আর্জেন্টিনার দুটি নিশ্চিত গোল একাই রুখে দেন সিজিসনি। অতিরিক্ত তিন মিনিটসহ ওই অর্ধে আর গোলের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। ভাগ্য দেবীও যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল আর্জেন্টিনার কাছ থেকে।
বিরতি থেকে ফিরেই ভাগ্য দেবীর কৃপা লাভ করে আর্জেন্টিনা। ম্যাচ শুরুর পরপরই গোল খরা দূর হয় আর্জেন্টিনার। ৪৬ মিনিটে ডিফেন্ডার নাহুয়েল মোলিনার কাট ব্যক থেকে পাওয়া বলে ডি বক্সের বাইরে থেকেই আচমকা পোস্টে শট নেন এ্যালেক্সিস ম্যাক এ্যালিস্টার। বলটি বাঁ প্রান্তের বার ঘেষে জালে আশ্রয় নেয় (১—০)। এটি ছিল দেশের হয়ে এ্যালিস্টারের প্রথম গোল। ৫০ মিনিটে এ্যাকুনা, ৫৩ মিনিটে রডরিগো ডি পল এবং ৬৩ মিনিটে ম্যাক এ্যালিস্টার গোলের বেশ কাছে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। ওই সময় পর্যন্ত ৯বার টার্গেটে শট নিয়েছে আর্জেন্টিনা । বিপরীতে একটি শটও নিতে পারেনি পোল্যান্ড।
৬৭ মিনিটে ফের লক্ষ্যভেদ করে আর্জেন্টিনা। এনজো ফার্নান্দেজের পাস থেকে টাচ লাইনের সামনেই বল পেয়ে যান জুলিয়ান আলভারেজ। সঙ্গে সঙ্গেই জোরালো শটে জালে জড়ান তিনি (২—০)। বাকী সময় আর্জেন্টিনা বার বার গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছে আবার সুযোগ নষ্টও করেছে। ফলে আরো বড় ব্যবধানে জয় থেকে বঞ্চিত হয় তারা।
বাসস