বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আফগানিস্তান

বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো আফগানিস্তান। আজ সকালে সুপার এইটে গ্রুপ-১এর শেষ ম্যাচে আফগানিস্তান বৃষ্টি আইনে ৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপের মঞ্চে এই প্রথমবার আফগানদের কাছে হারলো টাইগাররা। ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে থেকে সেমিতে উঠে আফগানরা। ৩ ম্যাচে ১ জয় ও ২ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে থাকায় বিশ্বকাপের সুপার এইট থেকে বিদায় নিতে হলো অস্ট্রেলিয়াকে। সুপার এইটে ৩ ম্যাচের সবগুলোতে হেরে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপ শেষ করলো বাংলাদেশ। ৩ ম্যাচে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে আগেই সেমি নিশ্চিত করেছে ভারত।

ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১১৫ রান করে আফগানিস্তান। জবাবে বৃষ্টি আইনে ১৯ ওভারে ১১৪ রানের সহজ টার্গেটে ৭ বল বাকী থাকতে ১০৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেন্ট ভিনসেন্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে সাবধানে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। পাওয়ার প্লেতে ২৭ রান তুলতে পারেন  দুই ওপেনার। এরমধ্যে পঞ্চম ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে ইব্রাহিমের ক্যাচ ফেলেন তাওহিদ হৃদয়।

নবম ওভারে আফগানিস্তানের রান ৫০ স্পর্শ করেন গুরবাজ ও ইব্রাহিম। এবারের বিশ্বকাপে এই নিয়ে চার বার অন্তত ৫০ রানের জুটি গড়লেন গুরবাজ-ইব্রাহিম। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে এই প্রথম কোন জুটি  চার বার অন্তত ৫০ রান স্পর্শ করলো।

১১তম ওভারে আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার রিশাদ হোসেন। লং অফে তানজিম হাসানকে ক্যাচ দেন ২৯ বলে ১৮ রান করা ইব্রাহিম। এবারের বিশ^কাপে গুরবাজ-ইব্রাহিম জুটি সর্বমোট ৪৫৫ রান করেছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে যেকোন উইকেট জুটিতে যা সর্বোচ্চ।

ইব্রাহিমের আউটের পর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে দ্রুত রান তুলতে ব্যর্থ হয় আফগানিস্তান। ৩৯ বল পর ১৪তম ওভারে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় আফগানরা। এরমধ্যে একটি মেডেন ওভারও নেন পেসার তাসকিন আহমেদ।

১৬তম ওভারে দলীয় ৮৪ রানে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। তিন নম্বরে নামা ওমরজাইকে ১০ রানে শিকার করেন ফিজ। ১৭তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন রিশাদ। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৫ বলে ৪৩ রান করা গুরবাজকে এবং গুলাবাদিন নাইবকে ৪ রানে ফেরান রিশাদ।

পরের ওভারে মোহাম্মদ নবিকে ১ রানে আউট করেন তাসকিন। ফলে ১৮ ওভার শেষে আফগানিস্তানের রান দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৯৯। মুস্তাফিজের করা ১৯তম ওভারে ১ রানের বেশি নিতে পারেনি আফগানরা। তবে তানজিম হাসানের করা শেষ ওভারে ২টি ছক্কায় আফগানিস্তানকে ১৫ রান এনে দেন অধিনায়ক রশিদ খান। এতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১১৫ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় আফগানরা। ৩টি ছক্কায় ১০ বলে অপরাজিত ১৯ রান করেন রশিদ। আফগান ইনিংসে ডট বল ছিলো ৬৬টি ।

বাংলাদেশের পক্ষে রিশাদ ৪ ওভারে ২৬ রানে ৩টি উইকেট নেন। এবারের আসরে মোট ১৪ উইকেট শিকার করে সাকিবের রেকর্ড ভেঙ্গেছেন রিশাদ। বিশ^কাপের এক আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪ উইকেটের মালিক এখন রিশাদ। ২০২১ সালে সাকিব ও এবারের আসরে ১১ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয়স্থানে আছেন তানজিম।

আফগানিস্তানের ছুঁড়ে দেওয়া ১১৬ রানের টার্গেট ১২ দশমিক ১ ওভারে স্পর্শ করলেই সেমিফাইনালে খেলতে পারবে বাংলাদেশ। এমন সমীকরণ সাথে নিয়ে ইনিংসের প্রথম ওভারেই লিটন দাসের ১টি করে চার-ছক্কায় ১৩ রান পায় টাইগাররা। পরের ওভারে পেসার ফজলহক ফারুকির বলে লেগ বিফোর আউট হন রানের খাতা খুলতে না পারা আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান। সর্বশেষ চার ইনিংসে তৃতীয়বারের মত শূন্যতে ফিরলেন তানজিদ। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ তিনবার শূন্যতে আউটের রেকর্ড স্পর্শ করেছেন তিনি। এবারের আসরে তিনবার শূণ্যতে ফিরেন উগান্ডার রজার মুকাসা।

তৃতীয় ওভারে জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। পেসার নাভিন উল হকের চতুর্থ বলে মিড উইকেটে নবিকে ক্যাচ দেন ৫ বলে ৫ রান করা বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়কের বিদায়ে ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। প্রথম বলেই বোলার নাভিনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন সাকিব। ১২৯ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নবম ডাক মারলেন সাকিব।

২৩ রানে ৩ উইকেট পতনে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লিটন ও সৌম্য। ২২ বলে ২৫ রান যোগ করে উইকেটে সেট হন তারা। সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই আফগানিস্তানকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ। ১০ বলে ১০ রান করা সৌম্যকে দারুন ডেলিভারিতে বোল্ড করেন রশিদ।

সৌম্যর পর আরও ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন রশিদ। তাওহিদ হৃদয়কে ১৪, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ৬ ও রিশাদকে শূন্যতে বিদায় দেন রশিদ। এতে ১১ ওভারে ৮০ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

১২ দশমিক ৪ ওভারের পর বৃষ্টিতে তৃতীয়বারের মত বাংলাদেশের ইনিংসে খেলা বন্ধ হলে, বৃষ্টি আইনে জিততে ১৯ ওভারে ১১৪ রানের নতুন টার্গেট পায় টাইগাররা। আর ১২ দশমিক ১ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ৮৩ রান তুলতে পারায় বিশ^কাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বাংলাদেশের।

সপ্তম উইকেট পতনের পর জুটি গড়ার চেষ্টায় ২০ বলে ১২ রান তুলেন লিটন ও তানজিম। ১৫তম ওভারে প্রথম বোলিংয়ে এসে দলীয় ৯২ রানে তানজিমকে ব্যক্তিগত ৩ রানে আউট করেন পেসার গুলবাদিন নাইব।

এরপর নবম উইকেটে তাসকিনকে নিয়ে ২০ বলে ১৩ রান যোগ করে বাংলাদেশের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন এক প্রান্তে আগলে লড়াই করা লিটন। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে তাসকিনকে ২ রানে বোল্ড করে বাংলাদেশের নবম উইকেটের পতন ঘটান নাভিন।

পরের ডেলিভারিতে বাংলাদেশের শেষ ব্যাটার হিসেবে মুস্তাফিজকে লেগ বিফোর আউট করে দলের জয় নিশ্চিত করে আফগানিস্তানকে সেমিফাইনালে তুলেন নাভিন। আফগানদের জয়ে সুপার এইট থেকে বিশ্বকাপ শেষ করে  বাংলাদেশের সাথে অস্ট্রেলিয়াও।

১৭ দশমিক ৫ ওভারে ১০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪৯ বলে ৫৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেও, বাংলাদেশের হার রুখতে পারেননি লিটন।

আফগানিস্তানের নাভিন ২৬ রানে ও রশিদ ২৩ রানে ৪টি করে উইকেট নেন। এ ইনিংস দিয়ে  টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশিবার  ৪ উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে সাকিবকে ছাড়িয়ে গেছেন রশিদ। সাকিব আটবার ও রশিদ ৯ বার ইনিংসে ৪ উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন নাভিন।

আগামী ২৭ জুন ত্রিনিদাদে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 − 10 =