সালেক সুফী
প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী কঠোর পরিশ্রমী আফগানিস্তান স্মার্ট ক্রিকেট খেলে হারিয়েই দিলো অস্ট্রেলিয়াকে। কঠিন উইকেটে ব্যাটিং ঝড় তুলে আফগানিস্তান মারকুটে ওপেনার জুটি ১৫.৫ ওভারে ১১৫ তোলার পরেই অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিলো ধীর ঘূর্ণি এই উইকেটে আফগান বিশ্বখ্যাত স্পিনাররা প্রলয় নৃত্য করবে। আফগান দল ১৪৮/৬ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। ৫ স্পিনার এবং দুই পেসার সুনামি সৃষ্টি করে ১৯.২ ওভারে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া লাইন আপ গুঁড়িয়ে দেয়। ২১ রানের জয়ে এখন আফগানিস্তান সেমি ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
কিংসটাউনের ঘূর্ণি উইকেটে আফগানিস্তান তুখোড় ক্রিকেট খেলে এবারের টুর্নামেন্টে অন্যতম ফেভারিট দল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা লড়াই উত্তেজনা টইটম্বুর করলো। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে কিংস্টনের উইকেট দেখে ধারণা করা হয়েছিল এই উইকেটে আফগানিস্তানের বৈচিত্রপূর্ণ বিশ্বমানের স্পিনার্সদের মোকাবিলা করা সহজ হবে না। জানিনা কোন বিবেচনায় টস জয়ী হয়ে মিচেল মার্শ আফগানদের ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। অসম বাউন্সের শুরু থেকেই বল থেমে আসছিল।
অবাক হতে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে আফগানিস্তানের বৈপ্লবিক উত্থান দেখে। ভূ-রাজনীতির নির্মম শিকার সংঘাত কবলিত আফগানিস্তান এখনো অনুশীলন করে ভারতে, সংযুক্ত আরবকে হোম ভেন্যু করে খেলে ওরা। বিশ্বজোড়া ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা আফগান ক্রিকেটাররা। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডে হেসে খেলে শক্তিশালী নিউ জিল্যান্ডকে উড়িয়ে দেবার পর থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে আলোড়ন জাগে আফগান দল নিয়ে।
আজ টস হেরে ব্যাটিং শুরু করার সূচনায় রয়ে সয়ে মাটি কামড়ে পরে থাকে আফগান ওপেনার রামানুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান। প্রথম তিন ওভার দেখে শুনে উইকেটে স্থিতু হয়ে ঝুঁকি নিতে শুরু করে মারকুটে আফগান জুটি। ওদের প্রতি আক্রমণের মুখে এলোমেলো হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং। প্রথম উইকেট জুটিতে টি২০ ক্রিকেটে তৃতীয়বারের মোট শত রানের জুটি গড়ে গুরবাজ-জাদরান।
কঠিন উইকেটে এই জুটির ১১৮ রান আফগান জয়ের ভিত্তি গড়ে দেয়। ৪৯ বল খেলে ৪টি করে চার ছক্কায় গুরবাজ করে ৬০ রান। ৪৮ বল খেলে ৫১ রান করে জাদরান যোগ্য সঙ্গ দেয় গুরবাজকে। অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা জাদরান-গুরবাজ জুটি ভাঙার পর দ্রুত ৩০ রানে ৬টি উইকেট তুলে নেয়। কিন্তু কঠিন উইকেটে ১৪৮ রান এমনকি দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইন আপের কাছেও দুর্গম গিরি কান্তার মরু হয়ে দাঁড়ায়।
শুরুতেই নাভিন উল হক এবং মোহাম্মদ নবি ট্রাভিস হেড, ডেভিড ওয়ার্নার এবং মিচেল মার্শের উইকেট তুলে নিয়ে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় ক্যাঙ্গারু বাহিনীকে। ৫ স্পিনার নিয়ে খেলা আফগানিস্তান নির্দিষ্ট বিরতিতে উইকেট তুলে তুলে নিয়ে ১২৭ রানে সাঙ্গ করে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। গুলবদন নাইব ২০ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ সেরা পুরস্কার লাভ করে.
দাপুটে জয়ে আফগানিস্তান সেমি ফাইনালে ওঠার পথ সুগম করে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সহজ জয়ের আশা করতেই পারে আফগান বাহিনী। কৃতিত্বপূর্ণ জয়ের জন্য আফগানিস্তানকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। আফগানিস্তান বর্তমান ফর্মে ধারাবাহিক হলে সেমি ফাইনাল পেরিয়ে ফাইনাল খেললেও অবাক হবো না।