দেশের উত্তরাঞ্চলের তিন জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি এই সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরে স্বল্পমেয়াদী বন্যার প্রভাব তিনদিন পর কমে আসলেও চলতি মাসের ২৫ তারিখের পর থেকে উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাসে দীর্ঘমেয়াদী বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে।
ভারতের উত্তর সিকিমে ভারী বর্ষণসহ উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। অন্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ওইসব এলাকার বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে গেছে। সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল নয়টায় তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে শূন্য দশমিক ২০ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে ভোর ছয়টায় ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপরে ছিলো। কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে বুধবার সকাল নয়টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৬টায় যা রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। তিস্তার পানি বেড়ে ক্রমশ বিপৎসীমার পথে রয়েছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, উজানের ঢল আর গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারেজের সবকটি গেট খুলে রাখা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে কিছুটা বাড়ছে পানি প্রবাহ। এছাড়া ভাটির অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্যা মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরে থাকা মানুষজনকে নিরাপদে থাকার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে লালমনিরহাট সদর, জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, ভারতের গজলডোবায় পানি ছেড়ে দেয়ার কারণে তিস্তার পানি বাড়ছে। বুধবার সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।