সালেক সুফী
টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দল ভারতের বিরুদ্ধে ৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে হার এই মুহূর্তে দুই দলের শক্তি সামর্থের বিশাল পার্থক্যের প্রতিফলন। গ্রুপ অফ এইটে উত্তীর্ণ হয়েই যে দল তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে তাদের কাছ থেকে আর বেশি কিছু আশা করাটাই আশাভঙ্গের কারণ।
এবারের বিশ্বকাপের দুই সেরা দল অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারবে না এটি মেনে নিতেই হবে। তবে খেলার আগেই যে কৌশলে বাংলাদেশ আত্মসমর্পণ করলো সেটি দেখে কষ্ট লেগেছে। কাল ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে খর্ব হওয়া বোলিং শক্তি নিয়ে কেন ভারতকে ব্যাটিং করার সুযোগ দেওয়া হলো? কেন স্পিন দক্ষ ভারতের বিরুদ্ধে দুই প্রান্তে স্পিনার দিয়ে বোলিং করিয়ে ভারতকে উড়ন্ত সূচনার সুযোগ দেওয়া হলো? এসব ভুলের সম্মিলিত পরিণতি বাংলাদেশের শোচনীয় আত্মসমর্পণ।
উইকেট কিন্তু রান প্রসবা ছিল। উইকেট পড়তে ভুল করেছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট (অধিনায়ক এবং হেড কোচ)। কেন বাংলাদেশ তাসকিনের পরিবর্তে পেসার শরিফুলকে না খেলিয়ে বাড়তি ব্যাটসম্যান জাকের অনিককে দলে নিয়েছিল? ক্রিকেট দুনিয়া জানে রোহিত, বিরাট ক্রিকেট বিশ্বে স্পিনের বিরুদ্ধে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। এহেন উইকেটে স্পিনাররা নতুন বলে বল করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তবে কেন এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের আত্মসমর্পণ। ম্যাচের কর্তৃত্ব বাংলাদেশ শুরুতেই ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। যার পরিণতি ভালো ব্যাটিং করে ভারতের ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান সংগ্রহ। বাংলাদেশের সামর্থের সীমানা এই বিশ্বকাপে ১৪০-১৫০। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ ১৪৬/৮ রান করে হেরে যাওয়া উইকেট এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অনিবার্য পরিণতি।
বাংলাদেশের উচিত হয়নি শক্তিশালী ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আগে ব্যাটিং করার সুযোগ দিয়ে বিশাল স্কোর তাড়া করার ঝুঁকি নেওয়া। টস হেরে রোহিত নিজেও বলেছে সুযোগ পেলে ভারত ব্যাটিং করতো। তাহলে কি ভারতের ইচ্ছাটাই পূরণ করেছে প্রকারান্তরে? দুটি ম্যাচ হেরে সুপার এইট থেকে ছিটকে গেলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে মুখ রক্ষার জয় আসবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কি করলে কি হয়, কি করলে ভালো হত সেই আলোচনা দীর্ঘায়িত করবো না। ম্যাচ শেষে সাকিবের মূল্যায়ন থেকেই অনেক কিছু বুঝে নেওয়া যায়।
কাল ম্যাচের সূচনা থেকেই রোহিত, বিরাট ভারত দলকে বাংলাদেশের দেওয়া উপহারের সুযোগ নিয়েছে। ৩.৪ ওভারেই স্পিনারদের উড়িয়ে ৩৯ রানের উড়ন্ত সূচনা ব্যাটিংয়ের পথনকশা এঁকে দিয়েছে। বিরাট (৩৭), রিসাব পান্ত (৩৬) এবং রোহিত শর্মা (২৩) ধ্রুপতি ছন্দে ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেওয়ায় বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তানজিম সাকিব এবং রিশাদ হোসেন দ্রুত দুটি উইকেট তুলে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করলেও ভারতের ব্যাটিং গভীরতা সহজেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়।
অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দুটি টাইট ওভার বোলিং করে রানের গতি টেনে ধরেছিলেন। কোন বিবেচনায় রিয়াদকে ৪ ওভার বোলিং করানো হলো না। মারকুটে হার্দিক পান্ডিয়ার ২৭ বলে করা অপরাজিত ৫০ এবং সিবাম দুবের ৩৪ বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছে। ভারতের করা ১৯৬/৫ রান অবশ্যই বাংলাদেশের সামর্থের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মোটামুটি ভালো সূচনার পর আবারো ব্যর্থ লিটন কুমার দাস। ভালো খেলতে থাকা তরুণ ওপেনার তানজিদ তামিম (২৯) কুলদীপের বোলিং বৈচিত্রের কাছে হার মেনে ফিরে যায়।
অধিনায়ক শান্তকে ৪০ রানে ফেরায় এই মুহূর্তের ভারতীয় বোলিং ট্রাম্প কার্ড জাসপ্রিত বুমরা। তাওহীদ হৃদয়, সাকিব ভুল স্ট্রোকস খেলার চেষ্টা করে আত্মহত্যা করলে লেট্ মিডল অর্ডারের আর কিছু করার ছিল না। ভালো ফর্মে থাকলেও কাল কেন রিয়াদকে ৭ নম্বরে খেলতে হলো প্রশ্ন তুলেছিলেন একজন ধারভাষ্যকার। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে এই মুহূর্তে প্রতি ম্যাচে রিয়াদকে ৪/৫ নম্বরে ব্যাটিং না করানো ধৃষ্টতা। কি করেছে অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান জাকের অনিক বা অল রাউন্ডার হিসেবে দলে নেওয়া শেখ মেহেদী? বলছি না ওরা ১০/২০ রান করলেই জিতে যেত বাংলাদেশ। বাংলাদেশ টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েই ম্যাচ ভারতকে উপহার দিয়ে দিয়েছিল।
জানিনা সাকিব সম্পূর্ণ ম্যাচ ফিট কি না? ব্যাটিং করার ধরন দেখে মনে হয় স্বতঃস্ফূর্ততা হারিয়ে ফেলেছে। সাকিব, মাহমুদুল্লাহ হয়ত এবারের বিশ্বকাপ শেষে টি২০ ফরমেট থেকে বিদায় নেবে। আফসোস একটি সোনালি প্রজন্ম বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত কিছু উপহার দিতে পারলো না; দল নিয়ে নানা বিতর্ক, অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে।
দল হেরেছে সেরা দুটি দলের বিরুদ্ধে নিজেদের সেরা খেলা উপহার দিতে ব্যর্থ হয়ে এবং অবশ্যই বলবো ভুল কৌশলে খেলে। এখন থেকে বিশ্বকাপের বাকি সময় রাত জাগবো অস্ট্রেলিয়ার শুভ কামনা করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল দেখার প্রত্যাশায়। আর বিসিবি প্রধানের আগামী বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রস্তুতি দেখার আশায়।