পিছিয়ে পড়েও সুইজারল্যান্ডকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৫-৩ ব্যবধানে পরাজিত করে ইউরো ২০২৪ চ্যাম্পিয়নশীপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। এই জয়ে ৫৮ বছরের মধ্যে প্রথমবার বড় কোন আসরের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন টিকে থাকলো ইংলিশদের।
১২০ মিনিট পর ডাসেলডর্ফে ম্যাচের ফলাফল যখন ১-১ গোলে অমিমাংসিত ছিল তখন ভাগ্য নির্ধারনে পেনাল্টি শ্যুট আউটের প্রয়োজন হয়। সুইজারল্যান্ডের ম্যানুয়েল আকাঞ্জির প্রথম স্পট কিক রুখে দিয়ে থ্রি লায়ন্সদের নায়কে পরিণত হন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। এই ব্যর্থতা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি পুরো টুর্নামেন্টে দারুন পারফর্ম করা সুইসরা। কোল পালমার, জুড বেলিংহাম, বুকায়ো সাকা, ইভান টনি ও ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ড প্রত্যেকেই ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করেছেন। আগামী বুধবার সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস।
শেষ ষোলতে ৯৫ মিনিটে বেলিংহামের গোলে সমতা ফিরিয়ে স্লোভাকিয়ার সাথে অতিরিক্ত সময় খেলেছিল ইংল্যান্ড। ঐ ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই হ্যারি কেনের গোলে গ্যারেথ সাউথগেটের দলের জয় নিশ্চিত হয়। আরো একবার ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ড পরাজয়ের কাছাকাছি ছিল। ৭৫ মিনিটে কাউন্টার এ্যাটাক থেকে ব্রিল এম্বোলোর গোলে সুইজারল্যান্ড এগিয়ে যায়। পাঁচ মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে সাকার দুর্দান্ত শটে ম্যাচ বাঁচায় ইংল্যান্ড।
দূর্ভাগ্যবশত ম্যানচেস্টার সিটি ডিফেন্ডার আকাঞ্জি সুইসদের জন্য পেনাল্টি ভিলেন হিসেবে আবির্ভূত হন। বড় টুর্নামেন্টে কোয়ার্টার ফাইনালের বাঁধা পেরুনোর অপেক্ষা আরো দীর্ঘ হলো সুইজারল্যান্ডের। এনিয়ে সেমিফাইনালের পথে পাঁচবার বাঁধাগ্রস্থ হলো তারা।
বিপরীতে পুরো টুর্নামেন্টে ফর্মহীনতায় থাকা গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা ঠিকই শেষ চারের পথ খুঁজে নিয়ছে। ম্যাচ সেরা সাকা বলেছেন, ‘আমরা জানি আর মাত্র দুটি ম্যাচ বাকি রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা নিজেদের জীবন বদলে ফেলতে পারবো। যা আগে কখনো হয়নি তেমন ইতিহাস আমরা রচনা করতে চাই।’
ইংল্যান্ডের ডাগ আউটে কোচ হিসেবে কাল ছিল সাউথগেটের শততম ম্যাচ। আরো একবার দল নির্বাচনে সাউথগেটের সিদ্ধান্ত অনেককেই বিস্মিত করেছে। নিষেধাজ্ঞায় থাকা মার্ক গুয়েহির স্থানে প্রথমবারের মত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিলেন এজরি কোনসা। ডানদিকে সাকাই ছিলেন মূল ্আক্রমনের দায়িত্বে। কোচের আস্থার প্রতিদান ঠিকই দিয়েছেন সাকা। পুরো প্রথমার্ধ জুড়েই আর্সেনালের এই উইঙ্গারকে সামলাতে হয়েছে সুইস রক্ষনভাগকে। যদিও কোন দলই টার্গেটে শট করতে পারেননি। বিরতির ঠিক আগে সাকার সহযোগিতায় কোবি মেইনুর ডিফ্লেকটেড শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই গতিময় ফুটবল উপহার দেয়, ডেডলক ভাঙ্গতে মরিয়া হয়ে উঠে। খেলোয়াড় বদলি করে ম্যাচে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে ধীর গতির কারনে সাউথগেটকে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। কালও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। টুর্ণামেন্টের অন্যতম প্রতিভাবান একটি দল নিয়ে ইউরোতে খেলতে এসেও ইংলিশ বস পিছিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত তার মূল দলেই স্থির ছিলেন। ৭৫ মিনিটে ড্যান এনডোয়ের ডিফ্লেকটেড ক্রসে এম্বোলো পোস্টের কাছে থেকে বল জালে জড়ালে এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। সাথে সাথে সাউথগেট একত্রে পালমার, এবেরেচি এজে ও লুক শ’কে মাঠে নামান।
ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবারের মত কোন ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছিলেন শ। পাঁচ মিনিটের মধ্যে খেলোয়াড় পরিবর্তনের ফলও পেয়ে যান সাউথগেট। ডানদিক থেকে সাকা কাট করে কিছুটা ভিতরে ঢুকে জোড়ালো শটে বক্সের বাইরে থেকে যে শটটি নিয়েছিলেন তা আটকানোর সাধ্য ছিলনা সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের। অতিরিক্ত সময়ে সোমার ডিক্লান রাইসের প্রায় একই ধরনের একটি শট অসাধারন দক্ষতায় রুখে দেন। ১০৯ মিনিটে ইনজুরিতে পড়ে হ্যারি কেন মাঠ ছাড়লে তার স্থানে বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে আসেন টনি। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে জিহার্দান শাকিরির কর্ণার পোস্টে লেগে ফেরত আসে, জেকি আমডুনিসের শক্তিশালী শট পিকফোর্ড রক্ষা করেন।
ইউরোতে এর আগে পাঁচটি পেনাল্টি শ্যুট আউটের মধ্যে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছিল ইংল্যান্ড। এর মধ্যে তিন বছর আগে ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচটিও রয়েছে। কিন্তু কাল সবকটি শটে সফল হয়ে শেষ চারের টিকেট পেয়েছে। ইউরো ২০২০’র ফাইনালে পেনাল্টি মিস করা সাকা কাল নিজের শটটি গোলে পরিণত করে কিছুটা হলেও নিজেকে শোধরানোর সুযোগ পেয়েছেন।
বাসস