ইউরো ২০২৪ যে পাঁচ তারকাকে মনে রাখবে

চলমান ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপে এ পর্যন্ত খেলা ৫০ ম্যাচ পর ২২ দলের বিদায় ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছে। সকল জল্পনা কল্পনার অবসার ঘটিয়ে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে শেষ পর্যন্ত ফাইনালে টিকে রয়েছে ইংল্যান্ড ও তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন।

এবারের আসরে একটি বিষয় নিশ্চিত হয়েছে ফুটবলের আগামী প্রজন্ম অত্যন্ত প্রতিভাবান। কে কাকে ছাড়িয়ে যাবে সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে প্রতিটি দলই তাদের তরুণদের উপর নির্ভর করেই সামনে এগিয়ে গেছে। এটি ভবিষ্যত বিশ্ব ফুটবলের অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। সবদিক বিবেচনা করে লামিন ইয়ামাল, আরদা গুলার ও কোবি মেইনু নিজ নিজ দলের হয়ে ভাল খেলবেন তা অনুমেয় ছিল। কিন্তু তাদের সাথে আরো কয়েকজন খেলোয়াড় নিজেদেরকে ভবিষ্যতের জন্য প্রতিষ্ঠিত করার ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন।

ইউরোতে যে পাঁচজন খেলোয়াড়ের পারফরমেন্স অনেকদিন মনে থাকবে :

ডানি ওলমো (স্পেন) :

স্প্যানিশ দুই তরুণ তুর্কি লামিন ইয়ামাল ও নিকো উইলিয়ামস এবারের ইউরোতে অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিজস্ব পারফরন্সে দিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন। কিন্তু মধ্যমাঠে ডানি ওলমোর অবদান স্পেনকে ফাইনালে উঠতে সার্বিক ভাবে সহায়তা করেছে।

২৬ বছর বয়সী ওলমো চার বছর যাবত আরবি লিপজিগে খেলার কারনে জার্মানিতে বেশ পরিচিত। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে তার পারফরমেন্স অনেকেরই নজড় কেড়েছে। শক্তিশালী পারফরমেন্সের মাধ্যমে তাকে নিয়ে অনেক শীর্ষ ক্লাবই নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে।

জর্জিয়ার বিরুদ্ধে শেষ ষোলতে স্পেনের ৪-১ ব্যবধানের  জয়ে ওলমো শেষ মুহূর্তে গোল করেছিলেন। জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের আট মিনিটে পেড্রির ইনজুরিতে তিনি বদলী বেঞ্চ থেকে মাঠে নেমেছিলেন। মাঠে নেমেই এক গোল করার পাশাপাশি মিকেল মেরিনোর অতিরিক্ত সময়ের জয়সূচক গোলের যোগানদাতা ছিলেন। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ওলমোর ২৫ মিনিটের দুর্দান্ত গোলে স্পেনের জয় নিশ্চিত হয়। সেমিফাইনালে জয়ী হয়ে ওলমোর স্পেন পঞ্চমবারের মত ইউরোর ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।

সব মিলিয়ে এবারের আসরে যৌথভাবে সর্বোচ্চ তিন গোল করেছেন ওলমো। স্পেনের হয়ে ছয় ম্যাচে দুটি মূল একাদশে খেলা ওরমোর গোলের পাশাপাশি দুটি এ্যাসিস্টও রয়েছে।

মার্ক গুয়েহি (ইংল্যান্ড) :

প্রথমবারের মত বড় কোন আসরে খেলতে এসে ইংল্যান্ডের মার্ক গুয়েজি কোচ গ্যারেথ সাউথগেটে বিধ্বস্ত রক্ষনভাগ সেট-আপের মধ্যমনিতে পরিণত হয়েছেন। মাত্র ২৩ বছর বয়সী গুয়েহি বেশ শান্ত প্রকৃতির। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জন স্টোনসের সাথে তিনি মূল দলে জায়গা করে নিয়ছে। গুয়েহি মাঠে থাকাকালীন পাঁচ ম্যাচে তিন গোল হজম করেছে ইংল্যান্ড। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ আটের ম্যাচে নিষেধাজ্ঞার কারনে খেলতে পারেননি। অনেকেই তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন ক্রিস্টাল প্যালেসের এই সেন্টার-ব্যাকের স্থানে থ্রি লায়ন্সরা কাকে মাঠে নামাবেন।

আক্রমনের সমান অবদান রেখেছেন গুয়েজি। শেষ ষোলতে স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে জুড বেলিংহামের শেষ মুহূর্তের গোলে ইংল্যান্ড পরাজয়ের হাত থেকে রেহাই পায়। এই গোলের যোগানদাতা ছিলেন গুয়েহি। এভাবে ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মত ইউরোর শিরোপা জয়ের স্বপ্নে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন গুয়েহির মত তরুণরা।

কোডি গাকপো (নেদারল্যান্ডস) :

নেদারল্যান্ডসের ফরোয়ার্ড কোডি গাকপো ২০ বছরের ইউরোর ইতিহাসে প্রথমবারের মত অরেঞ্জদের সেমিফাইনালে খেলার পথে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। শেষ চারে অবশ্য ইংল্যান্ডের কাছে ২-১ গোলে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিদায় ঘটে।

এবারের আসরে নেদারল্যান্ডসের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ২৫ বছর বয়সী গাকপো। এর আগে কাতার বিশ্বকাপেও দারুন পারফর্ম করেছিলেন গাকপো। যে কারনে উচ্চ মূল্যে তাকে পিএসভি থেকে কিনে নেয় ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল। গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে গাকপোর গোলে সমতায় ফিরেছিল নেদারল্যান্ডস। এরপর শেষ ষোলতে রোমানিয়ার বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে প্রথম গোল করে গাকপো। কোয়ার্টার ফাইনালে তার কারনেই আত্মঘাতি গোলের লজ্জায় ডুবে তুরষ্ক। আর এতেই নেদারল্যান্ডসের ২-১  ব্যবধানের জয় নিশ্চিত হয়।

গিওর্গি মামারাশভিলি (জর্জিয়া) :

নাপোলি ফরোয়ার্ড কাভিটা কাভারাটসখেলিয়া জর্জিয়ার হয়ে এবারের ইউরোতে দেশের সবচেয়ে বড় নাম হতে পারেন। কিন্তু জর্জিয়াকে শেষ ষোলতে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান যার ছিল তিনি গিওর্গি মামারশভিলি। প্রথমবারের মত ইউরোপীয়ান সর্বোচ্চ আসরে খেলতে আসা জর্জিয়ার হয়ে সবদিক থেকে নিজেকে মাঠে প্রমান করেছেন মামারাশভিলি। ২৩ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক চার ম্যাচে অন্তত ৩০টি সেভ করেছেন। ২০০৮ সালে রাশিয়ার ইগর আকিনফিভের ৩২ সেভের পর যা ইউরোর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

মামারাশভিলির এই দূরন্ত পারফরমেন্স লা লিগার সমর্থকদের জন্য মোটেই নতুন কিছু নয়। ভ্যালেন্সিয়ার এই গোলরক্ষক এবারের মৌসুমে স্প্যানিশ লিগে অন্যতম সেরা ছিলেন।

মার্সেল সাবিটাইজার (অস্ট্রিয়া) :

বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল অস্ট্রিয়ান মিডফিল্ডার মার্সেল সাবিটাইজারের। ইউরোর এবারের আসরে জাতীয় দলের হয়েও মধ্যমাঠ কাঁপিয়েছেন এই মিডফিল্ডার।

সেমিফাইনালিস্ট ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসকে গ্রুপ পর্বে টপকে শীর্ষ দল হিসেবেই নক আউট পর্বে উঠেছিল অস্ট্রিয়া। এসময় তাদেরকে অনেকেই ডার্ক হর্স হিসেবে বিবেচনা করতে বাধ্য হয়। শেষ ষোলতে অবশ্য তাদেরকে তুরস্কের  কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয়।

৩০ বছর বয়সী সাবিটাইজার গ্রুপ পর্বে ডাচদের বিরুদ্ধে ৩-২ গোলের দুর্দান্ত জয়ের ম্যাচটিতে গোল করেছিলেন। দুর পাল্লার শটে প্রায়শই গোলরক্ষকদের বিপদে ফেলার ক্ষেত্রে সাবিটাইজের খ্যাতি রয়েছে। কোচ রাল্ফ রাংনিকের উজ্জীবিত অস্ট্রিয়া দলে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে এবারের আসরে নিজেকে প্রমান করেছেন সাবিটাইজার।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × three =