সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, তলিয়ে গেছে বেশকিছু গ্রাম

বন্যায় তলিয়ে আছে সিলেটের বিয়ানিবাজার উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৯০টি গ্রাম। এখানকার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া মানুষগুলোর অভিযোগ খাবার না পাবার।যদিও বিয়ানিবাজার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী শামিম বলছেন, বিয়ানিবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয়েছে ত্রাণ। পুরো উপজেলায় খোলা হয়েছে ৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্র।

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় সিলেটে পানিবন্দি আট লাখেরও বেশি মানুষ। চারদিনেও বাসাবাড়ি থেকে পানি না নামায় মানবেতর দিন কাটছে তাদের। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। পানিবন্দিদের উদ্ধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে সিলেটের গোয়াইনঘাটের ১৩টি ইউনিয়ন। দুর্ভোগে রয়েছে পানিবন্দি মানুষ । অনেকে গরু বাছুর নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে।

এদিকে আকস্মিক এ বন্যায় জানমালের ক্ষতি কমাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। গোয়াইনঘাট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম জানালেন, দুর্গত এলাকার মানুষদের রান্না করা খাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবার দিচ্ছে প্রশাসন। আর ওসমানিনগর, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। সেখানেও পানিবন্দি মানুষগুলো দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, তার প্রায় পুরো নির্বাচনী এলাকার মানুষ বন্যা কবলিত। তবে, তার এলাকার কোনো মানুষ না খেয়ে বা বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, প্রতিটি নদীর পানি এখনো বইছে বিপৎসীমার ওপরে। পুরো জেলায় এখন পর্যন্ত প্লাবিত এক হাজার ৫৪৮টি গ্রাম। হবিগঞ্জের কয়েক জায়গায় নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও তা বইছে বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে। হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। আর একটানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অব্যাহত বৃষ্টির ফলে হবিগঞ্জের নদনদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শহরতলীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা। এছাড়া কুলাউড়ার বুধবার পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে ৬০টি গ্রাম। ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে সেখানে। গঠন করা হয়েছে ১৪টি মেডিকেল টিম।

জেলাজুড়ে বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ৮ লাখ। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখানে এক হাজার ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানকার ৭৮টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার ৬ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৫৪১টি।

এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

একারণে নদী তীরের বেশিরভাগ এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নদীপাড়ের মানুষের আতঙ্ক বাড়ছে। এরই মধ্যে ঘর-বাড়ি ও গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন নদী তীরের বাসিন্দারা। অনেকে ভাঙন ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে নদীর পাড়ে ফেলছেন বালু ভর্তি বস্তা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের তিস্তা অববাহিকা এলাকায় ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েকদিনেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে রংপুরের আবহাওয়া অফিস।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

16 + five =