ডেনমার্ককে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানি

কেই হাভার্টজের পেনাল্টি ও জামাল মুসিয়ালার দুর্দান্ত এক গোলে ডেনমার্ককে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক জার্মানি। ডর্টমুন্ডের অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে প্রথমার্ধে প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে প্রায় আধা ঘন্টা খেলা বন্ধ ছিল।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে হাভার্টজ স্পট কিক থেকে গোল করে জার্মানিকে এগিয়ে দেন। জোয়াকিম এ্যান্ডারসনের হ্যান্ডবলে জার্মানরা পেনাল্টি উপহার পায়। ড্যানিশ এই ডিফেন্ডার এর কিছুক্ষণ আগেই এক গোল করলেও অফসাইডের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়। বায়ার্ন মিউনিখের মুসিয়ালা ৬৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোলে ব্যবধান দ্বিগুন করার পাশাপাশি জার্মানিকে শেষ আটের টিকেট উপহার দেন।

৩৫ মিনিটে বজ্র বৃষ্টির কারনে ইংলিশ রেফারি মাইকেল অলিভার যখন ম্যাচ বন্ধের ঘোষনা দেন তখন একসময় মনে হয়েছিল ম্যাচটি বোধহয় পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। এ সময় উভয় দলই মাঠ ছেড়ে ডাগ আউটে আশ্রয় নেয়। ম্যাচটি আবারো মাঠে গড়ানোর আগে ২৫ মিনিট নষ্ট হয়েছে। এ সময় প্রচন্ড বাতাসের সাথে তুমুল বৃষ্টি ও কিছুক্ষন পরপরই বজ্রপাত হয়েছে। এই ঘটনাটি ম্যাচটিকে স্বাগতিকদের কাছে স্মরণীয় করে রাখবে।

যদিও এখান থেকে আগামী ১৪ জুলাই বার্লিনে ফাইনাল খেলতে হলে পথটা মোটেও মসৃণ নয়। জুলিয়ান নাগলম্যানের দল আগামী শুক্রবার স্টুটগার্টে কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে এ পর্যন্ত আসরের সবচেয়ে সফল দল স্পেন ও সারপ্রাইজ প্যাকেজ জর্জিয়ার মধ্যকার বিজয়ী দলকে।

কাল ম্যাচ শেষে জার্মান কোচ নাগলসম্যান বলেছেন, ‘দিনের শেষে এই ম্যাচটা ছিল চরম নাটকীয়তায় ভরা। আমরা প্রতিকূলতার বিপক্ষে লড়াই করে জিতেছি।’ ডিফেন্ডার নিকো শ্লোটারবেক বলেছেন, ‘আমরা উচ্ছাস নিয়ে খেলেছি, ম্যাচটি উপভোগ করেছি। আর এ কারনেই ফুটবলের সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে।

১৯৯২ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে নিজেদের প্রতিভার জানান দেয়া ডেনমার্ক এবার একটি ম্যাচেও জয়ী না হয়ে বাড়ি ফিরেছে। তিনটি ড্র নিয়ে তারা গ্রুপ পর্ব থেকে নক আউটে খেলতে এসেছিল। কোচ কাসপার হুলমান্ড ভিএআর’র দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, যা তার দলের বিপক্ষে গিয়েছে। এ্যান্ডারসনের অফসাইড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এভাবে ভিএআর’র ব্যবহার কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এক সেন্টিমিটারের অফসাইড পজিশন ধরতে গেলে অনেক কিছুই ধরতে হবে। এর এক মিনিট পরেই জার্মানিকে পেনাল্টি দেয়া হলো। জঘন্য হ্যান্ডবল আইন নিয়ে আমি ক্ষুদ্ধ।’

গ্রুপের পর্বের শেষ ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের সাথে  ১-১ গোলে ড্র করেছিল জার্মানি। ঐ ম্যাচের থেকে তিনটি পরিবর্তন করে নাগলসম্যান কাল দল সাজিয়েছিলেন। শ্লোটারবেক রক্ষনভাগে নিষেধাজ্ঞায় থাকা জোনাথন টাহর স্থানে খেলতে নেমেছেন। লেফট-ব্যাক পজিশনে ছিলেন ডেভিন রম। রাইট উইংয়ে ফ্লোরিয়ান রিটজের স্থানে নেমেছিলেন লেরয় সানে।

চার মিনিটের মধ্যে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের শ্লোটারবেক মনে করেছিলেন তিনি হয়তোবা জার্মানিকে এগিয়ে দিয়ছেন। কর্ণার থেকে হেডের বল তিনি জালে পৌঁছান। কিন্তু জসুয়া কিমিচের ফাউলের কারনে ভিএআর তা বাতিল করে দেয়। এরপর হতাশ জার্মানি ড্যানিশ গোলরক্ষক কাসপার শিমিচেলকে বেশ কয়েকবার পরীক্ষায় ফেলেছে। রমের ক্রস থেকে হাভার্টজের হেড রুখে দেন শিমিচেল।

দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা আগ্রাসী হয়ে মাঠে নামে ডেনমার্ক। রাসমান হোলান্ডের শট সাইড নেটে লাগে। শ্লোটারবেকের একটি আক্রমন ম্যানুয়েল নয়্যার হাঁটু দিয়ে রক্ষা করেন। ৪৮ মিনিটে এ্যান্ডারসন বল জালে জড়ালেও থমাস ডিলানির অফসাইড পজিশনের কারনে গোলটি বাতিল করে ভিএআর। পরমুহূর্তে জার্মানি আক্রমনে যায়। রমের ক্রস ডিফ্লেকটেড হয়ে এরিয়ার মধ্যে এ্যান্ডারসনের হাতে লাগলে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন।

পেনাল্টি থেকে স্বাগতিকদের এগিয়ে দিতে কোন ভুল করেননি হাভার্টজ। এরপর হাভার্টজ ও সানে দুটি দারুন সুযোগ হাতছাড়া করেছে। কিন্তু মুসিয়ালা কোন ভুল করেননি। দারুন এক গোলে তিনি ব্যবধান দ্বিগুন করেন। এই গোলের মাধ্যমে জর্জিয়ার জর্জেস মিকাওটাডের সাথে তিন গোল করে ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে উঠেছেন মুসিয়ালা। বদলী খেলোয়াড় রিটজ শেষভাগে এক গোল করলেও অফসাইডের কারনে তা বাতিল হয়ে যায়।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − 9 =