কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাতে দুর্ভোগে পড়েছেন বেশির ভাগ মানুষ।মোবাইল ডেটা বন্ধ করার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “এটা পূর্বের কোনো ঘোষণা ছিল না; পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃখ্লা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতার স্বার্থে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। আমরা লক্ষ্য করছি যে কোথা থেকে কারা এই অর্থায়ন করছে, কোথা থেকে কারা এই কনটেন্ট তৈরি করছে।
“তার জন্য আমরা ফিজিক্যাল এবং ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স ব্যবস্থা জোরদার করছি। আমরা আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারব।” মঙ্গলবার রাত থেকেই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফেইসবুক, মেসেঞ্জার চালাতে না পারার করার বলছিলেন ঢাকার গ্রাহকরা৷
মিরপুরের বাসিন্দা এমদাদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্যান্য দিন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফেইসবুক, মেসেঞ্জার চালাতে না পারলেও বাকি সেবা পাচ্ছিলেন; তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেসবও বিঘ্ন হচ্ছে৷
“হোয়াটসঅ্যাপেও কল যাচ্ছে না। ওয়েবসাইট, ইমেইল কোনকিছুই ব্যবহার করতে পারছি না৷ ওয়াইফাইয়ে না থাকলে একেবারেই সবকিছুর বাইরে চলে যাচ্ছি।”
নরসিংদীর বাসিন্দা জুনায়েদ আহমেদ শাকিল বলেন, সকাল থেকে তিনিও মোবাইল ডেটা ব্যবহার করে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি। “রাতেও কাজ করছিল, সকাল থেকে কোনোকিছুই ব্যবহার করতে পারছি না৷”
মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করার কারণ জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, সোশাল মিডিয়াকে গুজব, মিথ্যা, অপপ্রচার চালানোর অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে একটি গোষ্ঠী।
“শুধু দেশের ভেতর থেকে না, দেশের বাইরে থেকে কিছু কনন্টেন্ট বুস্ট করা হচ্ছে। তার মানে টাকা দিয়ে মিথ্যা খবরটাকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে অপকৌশল বা ষড়যন্ত্র- এটা যখন আমরা দেখছি তথ্যউপাত্ত এবং গোয়েন্দা সংস্থার সকল বিশ্লেষণে; তখন আমরা মনে করছি, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের যার যতোটুকু সক্ষমতা আছে, সেটা করা দরকার।
“একদিকে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তারা চেষ্টা করছে- তাদের নিরাপত্তা রক্ষা করা, আমরা সাইবার নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। যে জায়গায় যে ধরনের ভূমিকা নেওয়া উচিৎ বা প্রয়োজন, সেটাই আমরা চেষ্টা করছি।”
গুজব ঠেকাতে ফেইসবুক, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে তেমন সহযোগিতা মিলছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা যদি সহযোগিতা করত, তাহলে আমাদের কিন্তু এতো কঠোর অবস্থানে যেতে হতো না। …আমরা বারবার সহযোগিতা চাচ্ছি, এখন আজকে তারা যোগাযোগ করছে। তারপরও আমরা খুব বেশি আশস্ত বা আশাবাদী হতে পারছি না। কারণ তারা যেসকল দুর্বল যুক্তি দেখাচ্ছে, সেগুলো কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না।”
পলক বলেন, “তাদের যে প্রাইভেসি পলিসি আছে, তা আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। তারা দেশভিত্তিক, ঘটনাভিত্তক তাদের প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাদের পলিসি বাংলাদেশের বেলায় একরকম, মিয়ানমারের বেলায় একরকম, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ব্যাপারে একরকম, ইউক্রেইন-রাশিয়ার ব্যাপারে একরম, ইউরোপ-আমেরিকা অস্ট্রেলিযার জন্য আরেকরকম, সিঙ্গাপুরের জন্য আরেককম। এটা তো হতে পারে না।
“তারা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, তাদের একটা নীতি থাকবে- যে দেশের আইন যা বলবে, সেটা তাদের করতে হবে; তাই না? তারা তো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। তাদের আইন তো সবাইকে বাধ্য করতে পারে না। বরঞ্চ যে দেশের আইন, সেটা তাদের মানতে হবে।”
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ফেইসবুক, ইউটিউব, গুগল, টিকটক- সবাইকে আমরা বলে দিচ্ছি, আমাদের দেশের প্রত্যেকটি প্রাণের মূল্য আছে। এ ধরনের ক্ষতি যদি আগামীতে এদের কারণে হতে থাকে, আমরা এটা কখনোই ছাড় দেব না। “আমরা চাই তারা যেন বাংলাদেশে অফিস, ডেটা সেন্টার চালু করে। আমাদের আইন মেনে চলে।”
বিডিনিউজ