হেলিকপ্টার থেকে গুলি বা কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি: র‌্যাব

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ‘র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন’ (র‌্যাব) এর হেলিকপ্টার থেকে কোন প্রকার গুলি বা কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। নিরুপায় হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলের পথ সুগম করার জন্য এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনগণের জানমালের ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।

র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে এ বক্তব্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘‘আকাশ পথে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল ও উদ্ধারসহ সকল কার্যক্রমের ভিডিও চিত্র র‌্যাব ফোর্সেস ধারণ করেছে যা ইতিমধ্যে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, র‌্যাবের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিউআর কোড স্ক্যান করে র‌্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে টহল ও উদ্ধারসহ সকল কার্যক্রমের ভিডিও ফুটেজ দেখা যাবে।’’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, সংঘর্ষ ও নাশকতার মাধ্যমে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি এবং সরকারি ও জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালায়। রাষ্ট্রবিরোধী দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসী চক্র পরিকল্পিতভাবে বিটিভি ভবন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হানিফ ফ্লাইওভার, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, বিআরটিএ ভবন এবং পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনাসহ সরকারি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যানবাহনে নজীরবিহীন হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশের আপামর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব ফোর্সেস রাজধানীসহ সারাদেশে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধির মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দায়িত্বপালনকারী র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর দুষ্কৃতিকারী ও নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মধ্যযুগীয় কায়দায় অতর্কিত হামলা চালায়। ওই সব হামলা ও আক্রমণে শতাধিক র‌্যাব সদস্য আহত হয়।

সহিংসতা ও নাশকতার সময় দুর্বৃত্তরা কোমলমতী শিশু-কিশোরদের আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাস্তা অবরোধ করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।  কোমলমতী শিশু-কিশোররা সামনে থাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। নিরুপায় হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলের পথ সুগম করার জন্য এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করার নিমিত্তে র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। এক্ষেত্রে হেলিকপ্টার থেকে কোন প্রকার গুলি করা হয়নি বা কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। রাজধানীর বাড্ডা ও নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে দুর্বৃত্তরা হামলা ও আক্রমণ করে সাধারণ জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে ভবনে অগ্নিসংযোগ করে।

গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের আক্রমণের শিকার হয়ে আটকে পড়া ডিএমপি’র সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাদে অবস্থান নিলে দুপুর ২ টা ১৬ মিনিটে ৬১ জন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। গত ২০ জুলাই অপরাহ্নে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় দুর্বৃত্তরা মা হাসপাতাল ভবনের নিচে অগ্নিসংযোগ করলে ওই ভবনের বাসিন্দা ও হাইওয়ে পুলিশ সদস্য ছাদে অবরুদ্ধ হয়। ওই সময় ভবনের নিচে ৩ জন শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। ভবনের ছাদে অবরুদ্ধরা র‌্যাবের সহায়তা চাইলে ওই হাসপাতালের কর্মচারীসহ ৩৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে র‌্যাব ফোর্সেস এর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়।

বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সরকারি স্থাপনা রক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে র‌্যাব ফোর্সেস এর সকল সদস্য বদ্ধপরিকর। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও দেশব্যাপী নিরাপত্তা নিশ্চিতে র‌্যাব ফোর্সেস এর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

10 − four =