স্লোভেনিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে পর্তুগাল

ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি মিসে বিদায়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে কোনমতে স্লোভেনিয়াকে টাই ব্রেকারে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপের শেষ আট নিশ্চিত করেছে পর্তুগাল। পর্তুগীজ গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা স্লোভেনিয়ার তিনটি শট রুখে দিয়ে দলকে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট উপহার দিয়েছেন।

ফ্রাঙ্কফুর্টে নির্ধারিত সময়ের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হবার পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধে পর্তুগীজ সুপারস্টার রোনাল্ডো পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। কিন্তু পেনাল্টি শ্যুট আউটে গোল করে তিনি এই ভুলের মাশুল দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপ রানার্স-আপ ফ্রান্স।

পর্তুগালকে কাল সবদিক দিয়ে প্রতিরোধ করেছে স্লোভেনিয়া। দিয়োগো জোতার আদায় করা পেনাল্টি থেকে রোনাল্ডোর শটটি স্লোভেনিয়ান গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক দারুন দক্ষতায় রুখে দেন। টাই ব্রেকারে রোনাল্ডো, ব্রুনো ফার্নান্দেস ও বার্নান্ডো সিলভা প্রত্যেকেই গোল করলেও স্লোভেনিয়ার তিনটি শট আটকে দেন কস্তা।

ম্যাচ শেষে রোনাল্ডো বলেছেন, ‘প্রথমত এটা খুবই দুঃখজনক এবং এরপর এটা উপভোগের সময়। এটাই ফুটবল। এখানে যেকোন মুহূর্তে যেকোন কিছুই হতে পারে। একজন খেলোয়াড়কে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। এ বছর আমি একটি ভুলও করিনি। কিন্তু যখন দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি এলো তখনই ওবলাক আমার শটটি রক্ষা করলো। স্লোভেনিয়া পুরো ম্যাচে রক্ষনাত্মক খেলেছে। যে কারনে আমাদের জন্য ম্যাচটি কঠিন হয়ে উঠেছিল।’

৩৯ বছর বয়সী রোনাল্ডো এখনো পর্যন্ত এবারের আসরের চার ম্যাচে কোন গোল পাননি। এর আগে পাঁচটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপেই তিনি গোল করেছিলেন।

২০১৬ ইউরো বিজয়ী পর্তুগাল কাল শুরু থেকেই আধিপত্য দেখিয়েছে। ১২ মিনিটে তারা প্রথম সুযোগটি তৈরী করে। সিলভার ক্রস থেকে রোনাল্ডো ও ফার্নান্দেস কেউই দলকে এগিয়ে দিতে পারেননি। স্লোভেনিয়া এই প্রথম বড় কোন আসরের নক আউট পর্বে খেলতে নেমেছিল। পুরো ম্যাচেই তারা রক্ষনাত্মক কৌশল অবলম্বন করে পর্তুগালের আক্রমনগুলোকে কাজে লাগাতে দেয়নি। রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক স্ট্রাইকার রোনাল্ডোর হেড সহজেই তালুবন্দী করেন এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের গোলরক্ষক ওবলাক। ৩২ মিনিটে রাফায়েল লিয়াওকে আটকাতে গিয়ে হলুদ কার্ড পান স্লোভেনিয়ান ডিফেন্ডার ভাঞ্জা ড্রাকুসিচ। রোনাল্ডোর ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিক অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। স্লোভেনিয়া বিরতির ঠিক আগে একটি শট টার্গেটে করেছিল। আরবি লিপজিগের স্ট্রাইকার বেঞ্জামিন সেসকোর শট কস্তা দারুন দক্ষতায় রুখে দেন। লো ড্রাইভে পর্তুগালের মিডফিল্ডার হুয়া পালহিনহা সাইড নেটে বল লাগান।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আরো একটি ফ্রি-কিকে রোনাল্ডো ওবলাককে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। কিছুক্ষন পরেই মাজাজ কেকের দল ম্যাচের সবচেয়ে সেরা সুযোগটি পেয়েছিল। সেসকো টুর্ণামেন্টের সবচেয়ে বেশী ৪১ বছর বয়সী খেলোয়ার পেপেকে কাটিয়ে বল নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি। ম্যাচ শেষের ২০ মিনিট আগে রোনাল্ডোর আরো একটি ফ্রি-কিক ক্রসবার ঘেষে বাইরে চলে যায়। ৮৮ মিনিটে রোনাল্ডোকে রুখে দেন ওবলাক।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধের ১০৩ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে কোন উত্তেজনা ছিলনা। ডি বক্সের ভিতর জোতাকে আটকাতে গিয়ে ফাউল করে বসেন ড্রাকুসিচ। রোনাল্ডো ওবলাকের বা দিকে স্পট কিকটি নিয়েছিলেন। অভিজ্ঞ ওবলাক আগেও বেশ কয়েকবার রোনাল্ডোর পেনাল্টি শটের মুখোমুখি হয়েছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে হয়তো বা কাজে লাগিয় দুর্দান্ত এক সেভে স্লোভেনিয়াকে রক্ষা করেন ৩১ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক।

অতিরিক্ত সময়ের বিরতিতে রোনাল্ডোকে পেনাল্টি মিসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে। এসময় তাকে মানসিক সমর্থন দিয়েছে মাঠে উপস্থিত পর্তুগীজ সমর্থকরা।

পেপের একটি লুজ পাস থেকে সেসকো বল নিয়ে শট নিলেও এ যাত্রা পর্তুগালকে রক্ষা করেন কস্তা। পা দিয়ে বল আটকে দিয়ে তিনি যেন পর্তুগালের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন।

এরপরের পুরোটা কাহিনী তো কস্তাকে ঘিরেই। স্লোভেনিয়ার প্রথম শটটি নেন বদলী খেলোয়াড় জোসিপ ইলিসিচ। কস্তা তার শটটি দুর্দান্ত ভঙ্গিমায় আটকে দেন। রোনাল্ডো নিজের ভুলের মাশুল দিয়ে স্পট কিকের পর পোস্টের পিছনে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। জুর কালকোভেচের করার স্লোভেনিয়ার দ্বিতীয় শটটিও আটকে দেন কস্তা। পর্তুগালের হয়ে ফার্নান্দেস ও সিলভা ওবলাককে উল্টো দিকে পাঠিয়ে বল জালে পাঠানোর মধ্যে কস্তা বেঞ্জামিন ভারবিচের তৃতীয় শটটিও আটকে দিয়ে পর্তুগালকে শেষ আটের টিকেট উপহার দেন।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × two =