রেকর্ড চতুর্থ ইউরো শিরোপা জিতলো স্পেন

বদলী খেলোয়াড় মিকেল ওয়ারজাবালের  শেষ মুহূর্তের নাটকীয় গোলে ইউরোর ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করে রেকর্ড চতুর্থ শিরোপা জয় করেছে স্পেন। প্রায় ছয় দশক পর বড় কোন আসরের শিরোপা জয়ের স্বপ্নে মাঠে নেমেছিল ইংল্যান্ড।

বিরতির পর স্পেন  প্রভাবশালী মিডফিল্ডার রড্রিকে  হারালে ইংল্যান্ডের জন্য ম্যাচে দাপট দেখানো সহজ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগটা তারা নিতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর দুই মিনিটের মধ্যে নিকো উইলিয়ামসের গোলে লিড নেয় স্পেন। পুরো আসরের তারকা উইঙ্গার লামিন ইয়ামালের এ্যাসিস্টে উইলিয়ামস দারুন গোলে স্পেনকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। ইউরোতে এবারের আসরে প্রায় প্রতি ম্যাচেই পিছিয়ে পড়ে ফিরে আসার রেকর্ড ছিল ইংল্যান্ডের। কালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বদলী খেলোয়াড় কোল পালমারের গোলে ৭৩ মিনিটে সমতায় ফিরে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। এর কিছুক্ষন আগেই পালমার  মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু তাদের এই আনন্দ খুব বেশীক্ষন স্থায়ী হয়নি। রিয়াল সোসিয়েদাদ ফরোয়ার্ড ওয়ারজাবাল ৮৬ মিনিটে দারুন ফিনিশিংয়ে স্পেনকে গত পাঁচ আসরের তৃতীয় শিরোপা উপহার দেন।

স্প্যানিশ কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তে বলেছেন, ‘আজকের দিনটি ছিল অভাবনীয়। যোগ্য দল হিসেবেই ইউরোপের শিরোপা মাথায় তুলেছে স্পেন।’

এর আগে ১৯৬৪, ২০০৮ ও ২০১২ সালে ইউরোপীয়ান আসরের সর্বোচ্চ এই শিরোপা জয় করার কৃতিত্ব দেখিয়েছে স্পেন। শেষ দুটি শিরোপার মাঝে ২০১০ সালে বিশ^কাপেরও শিরোপা এসেছিল স্পেনের ঘরে। ঐ দলে ছিলেন আগের প্রজন্মের সেরা সব খেলোয়াড় জাভি হার্নান্দেজ, জাভি আলোনসো, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ইকার ক্যাসিয়াসরা।

আর নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুর্দান্ত ইয়ামাল, উইলিয়ামস, ডানি ওলমোরা। ১৭তম জন্মদিনের পরের দিন দলের হয়ে ইউরোপীয়ান শিরোপা জয় যেন ইয়ামালকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

জার্মানিতে এবারের আসরে স্পেন নি:সন্দেহে সবচেয়ে যোগ্য ও সফল দল হিসেবেই ফাইনালে শিরোপা জয় করেছে। আর সে কারনেই বার্লিনের অলিম্পিয়াস্টেডিওনে ইংলিশ সমর্থকদের ছাপিয়ে বিস্ময়কর ভাবে দর্শক আসনে লাল জার্সিধারী স্প্যানিশ সমর্থকদেরই আধিক্য চোখে পড়েছে। ১৯৬৬  বিশ^কাপ শিরোপা পর ইংল্যান্ড যেকোন মূল্যে এবারের শিরোপা জয় করার জন্য মুখিয়ে ছিল। বিশেষ করে তিন বছর আগে ফাইনালে ইতালির কাছে স্বপ্নভঙ্গ হবার পর বিদেশের মাটিতে প্রথম কোন ফাইনালে খেলার স্মৃতিটা রাঙাতে চেয়েছিল হ্যারি কেন, জুড বেলিংহাম, বুকায়ো সাকা, লুক শ’রা।

ম্যাচ শেষে ইংলিশ বস সাউথগেট বলেছেন, ‘ফাইনালে পরাজয়ের হতাশা একটু বেশী। স্পেনকে অভিনন্দন। পুরো টুর্নামেন্ট তারাই সেরা দল ছিল, আজকেও তাই।’

এনিয়ে টানা দ্বিতীয় ইউরোর ফাইনালে পরাজিত হওয়া প্রথম দল ইংল্যান্ড। অধিনায়ক হ্যারি কেন ৩০ বছর

বয়সে এখনো বড় কোন শিরোপা হাতে নেননি। ক্যারিয়ারের বিদায়বেলায় তাই কেনের হতাশা একটু বেশী।

কাল প্রায় পুরোটা সময় ধরেই উজ্জীবিত স্পেনেরই আধিপত্য চোখে পড়েছে। ইংল্যান্ড প্রথমার্ধে প্রায় পুরোটা সময় স্পেনকে প্রতিরোধ করতেই কাটিয়েছে। যদিও প্রথমার্ধের সেরা সুযোগটি পেয়েছিল ইংল্যান্ডই। ডিক্লান রাইসের ফ্রি-কিকে ফিল ফোডেনের শট দারুনভাবে রুখে দেন গোলরক্ষক উনাই সাইমন। কেনের শট আটকাতে গিয়ে সতীর্থ অমারিক লাপোর্তের সাথে পায়ে আঘাত লেগে রড্রি মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। বিরতির পর তার পরিবর্তে মাঠে নামেন মার্টিন জুবিমেন্ডি।

স্পেনের জন্য হঠাৎ করেই সবকিছু পাল্টে যায়। যদিও এগিয়ে যেতে স্পেন খুব একটা সময় নেয়। স্পেনের দুই উইঙ্গার ইয়ামাল ও উইলিয়ামসকে আটকাতে প্রায় হিমশিম খেতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। ডানি কারভাহালের পাস থেকে ইয়ামাল উইলিয়ামসের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। প্রথম সুযোগেই উইলিয়ামস লো শটে পিকফোর্ডকে পরাস্ত করেন। আগের তিনটি নক আউট ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরে আসার স্মৃতি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ইংল্যান্ড কালও তার পুনরাবৃত্তি করেছে। সাউথগেট কেনকে উঠিয়ে ওলি ওয়াটকিন্সকে মাঠে নামান। সেমিফাইনালে যার শেষ মুহূর্তেও গোলে নেদারল্যান্ডসকে পরাজিত করেছিল ইংল্যান্ড। কোবি মেইনুর স্থানে মাঠে নামা পালমার শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে রক্ষা করেন। মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যে বুকায়ো সাকার ডানদিকের বল থেকে বেলিংহামের পাসে পালমার কোনাকুনি শটে দলকে সমতায় ফেরান। ম্যাচ শেষের চার মিনিট আগে  স্পেন তাদের সুপার সাবের গোলে শিরোপা নিশ্চিত করে। মার্ক কুকুরেলার এ্যাসিস্টে ওয়ারজাবাল পোস্টের কাছ থেকে বল জালে জড়ান। মার্ক গুয়েহির শট শেষ মুহূর্তে লাইনের উপর থেকে ওলমো ক্লিয়ার না করলে ম্যাচটি হয়তো অতিরিক্ত সময়ে গড়াতো।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − 16 =