আজ রাত পোহালেই মঙ্গলবার গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। এই টেস্ট দিয়েই শুরু হচ্ছে ২০২৫-২৭ পর্বের আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজ। এর পর ২৫ জুন থেকে কলম্বো প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় টেস্ট।
বাংলাদেশের টেস্ট পারফরমেন্স ধারাবাহিকতা না থাকলেও প্রায় সমশক্তির দুই দলের এই টেস্ট সিরিজে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে বলে বিশ্বাস করি। যদিও সাকিব, তামিম, মাহমুদুল্লাহ দলে নেই। কিন্তু নবীন প্রবীনে মিলে বাংলাদেশ স্কোয়াডে যারা আছে তাদের অবশ্যই সামর্থ আছে টেস্ট এবং সিরিজ জয়ে। সিরিজ সামনে রেখে ইতিমধ্যেই স্কোয়াড ঘোষণা করেছে দুই দল।
শ্রীলঙ্কা টেস্ট স্কোয়াড: পাথুম নিশাঙ্কা, ওশাদা ফার্নান্দো, লাহিরু উদারা, দিনেশ চান্দিমাল, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক), কুসল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, পসিন্দু সুরিয়াবান্দারা, সোনাল দিনুশা, পবন রথনায়েক, প্রবাথ জয়সুরিয়া, থারিন্দু রত্নায়েকে, আকিলা ধানাঞ্জয়া, মিলন রথনায়েক, অসিথা ফার্নান্দো, কাসুন রাজিথা, ঈশিতা ভিজেসুন্দরা।
বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাদমান ইসলাম, আনামুল হক বিজয়, মোমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, জাকের আলী অনিক, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, হাসান মুরাদ, এবাদত হোসাইন, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, খালেদ আহমেদ।
শ্রীলংকা স্কোয়াডে ৬ জন নবাগত আছে। সুবিন্যস্ত শ্রীলংকান ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক ক্রিকেট বিবেচনায় পসিন্দু সুরিয়াবান্দারা, সোনাল দিনুশা, পবন রথনায়েক, মিলন রথনায়েক, থারিন্দু রত্নায়েকে এবং ঈশিতা ভিজেসুন্দরাদের অবজ্ঞা করার কারণ নেই। এদের কয়েকজনের সক্ষমতা রয়েছে ভালো খেলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার।
দলের অবশিষ্ট সদস্য পাথুম নিশাঙ্কা, ওশাদা ফার্নান্দো, লাহিরু উদারা, দিনেশ চান্দিমাল, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক), কুসল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, আকিলা ধানাঞ্জয়া, মিলন রথনায়েক, অসিথা ফার্নান্দো, কাসুন রাজিথা সবাই নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পূর্ববর্তী রাউন্ডে তারা সবাই ভালো খেলেছেন।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টসহ সকল ফরম্যাটে ধারাবাহিকভাবে বড় কিছু অর্জন করতে পারেনি। খেলোয়াড়রা মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে চমক সৃষ্টি করলেও বিসিবির পরিকল্পনার অভাব, কোচিং স্টাফের দুর্বলতা এবং দল নির্বাচনে ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ টেস্টসহ সকল ফরম্যাটে পিছিয়ে পড়েছে। সরকার পরিবর্তনে বিসিবিতে কিছু পরিবর্তন আনা হলেও শুভ ফল দৃশ্যমান হয়নি।
ঘুরে দাঁড়াতে হলে শুরু করতে হবে চলতি সিরিজ থেকেই যেখানে বাংলাদেশ টেস্ট ছাড়াও, টি২০ এবং ওডিআই সিরিজ খেলবে। তিন ফরম্যাটের জন্য তিন জন নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং লিটন কুমার দাসকে অধিনায়ক করা হয়েছে। হয়তো একটি পরিকল্পনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। দেখতে হবে এই পরিবর্তন শুভ ফল বয়ে কিনা।
বাংলাদেশ টেস্ট দলের শক্তিমত্তার স্থান শক্তিশালী পেস এবং স্পিন আক্রমণ। যদিও টেস্ট দলে তাসকিন নেই। কিন্তু হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা এবং এবাদতের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেস ইউনিট শ্রীলংকা দলকে চাপে রাখবে।
বিকল্প হিসাবে আছে খালেদ আহমেদ।স্পিন আক্রমণের গুরুভার অর্পিত থাকবে তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজের উপর। গল এবং কলম্বো উইকেট স্পিন সহায়ক হলে বাংলাদেশ তৃতীয় স্পিনার হিসাবে নাঈম হাসানকে খেলতে পারে।
শ্রীলংকা দলের ব্যাটিং গভীরতা আছে। পাথুম নিশাঙ্কা, ওশাদা ফার্নান্দো, লাহিরু উদারা, দিনেশ চান্দিমাল, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা , কুসল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, সবাই কিন্তু উইকেটে স্থিতু হলে বড় স্কোর করতে পারে।
বাংলাদেশ আগে বোলিং করলে স্বাগতিক দলকে ২৫০-৩০০ সীমিত রাখতে চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশের মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে ব্যাটিং বিশেষ করে টপ অর্ডার। সাদমান শেষ সিরিজে ভালো খেলেছে। আনামুল ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে দলে ফিরলেও পারফরমেন্স ধারাবাহিক হয়নি।
নিজের ব্যাটিং সুসংহত করার জন্য অধিনায়ক শান্ত টি২০ ফরমেট থেকে স্বেচ্ছায় অধিনায়কত্বের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। আশা করি শান্ত তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তি মোমিনুল, মুশফিক, লিটন দাসের মাধ্যমে গড়া মিডল অর্ডার। শ্রীলংকায় মোমিনুল আর মুশফিকের মধুর স্মৃতি আছে। দুইজন এখন শুধু টেস্ট খেলছে।
এই সিরিজ লিটনের জন্য অগ্নি পরীক্ষা। দলে কিন্তু লিটন ছাড়াও চারজন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান আছে। জাকের আলী অনিক, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, মুশফিকুর রহীম ছাড়াও আনামুল বিজয় ব্যাটিং দায়িত্ব ছাড়াও প্রয়োজনে উইকেট কিপিং করতে পারে।
চৌকষ খেলোয়াড় মেহেদী হাসান মিরাজের সাফল্যের উপর দলকে অনেকটাই নির্ভর করতে হবে। প্যানিকড না হলে বাংলাদেশ প্রতি ইনিংসে অন্তত ৩০০-৩৫০ না করার কারণ দেখি না। আশা করি সবাই নিজেদের দায়িত্বে নিবেদিত থেকে সেরা পারফরমেন্স করবে। অপেক্ষাকৃত নবীন খেলোয়াড় সমৃদ্ধ দল চৌকষ ফিল্ডিং করলে ভালো কিছু আশা করা যেতেই পারে।