সালেক সুফী
আশা করি দুই সপ্তাহের অবসানে টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে অতি উৎসাহ উদ্দীপনার রেশ শেষ হয়ে আসছে। আইসিসির বাড়তি সুবিধা নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও যোগ্য দলই শিরোপা জিতেছে। আমার দুটি দেশ অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে না পারলেও আনন্দময় ক্রিকেট উপহার দিয়েছে লড়াকু দল আফগানিস্তান। প্রথম বারের মত আইসিসির মেগা টুর্নামেন্টের যৌথ আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও উৎরে গাছে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই একটি উইকেট টি২০ ক্রিকেট মেজাজের সঙ্গে মানাসই ছিল না। ভারত কিন্তু একটি ম্যাচও এই ধরনের উইকেটে খেলেনি। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ভারত দিবা রাত্রির ক্রিকেট খেলেছে। ভ্রমণ করেছে অতি সামান্য। এমনকি স্বাগতিক দল দুটি বাড়তি সুবিধা পায়নি। যাহোক এতো কিছুর পরেও ভারত যোগ্য দল হিসেবেই শিরোপা জিতেছে।
টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গোধূলি বেলায় রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলী, রাবিন্দ্রা জাদেজা শিরোপার ছোয়া পেয়েছে দেখে ভালো লেগেছে। আমি আনন্দিত হয়েছি প্রিয় ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব রাহুল দ্রাবিড়ের কোচ হিসেবে বিদায় বেলা রঙিন হওয়ায়। দুর্ভাগ্য দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পথে থাকা ফাইনাল ম্যাচ হেরে শিরোপা বঞ্চিত হওয়ায়।
বাংলাদেশ কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে মন্দের ভালো করেছে। টুর্নামেন্টের প্রাক্কালে ছন্নছাড়া ছিল বাংলাদেশ দল। গ্রুপ পর্যায়ে উইকেট গুলো বাংলাদেশকে সহায়তা করে এবং বোলিং দক্ষতার কারণে শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস এবং নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল। জয়ের ক্ষুধা থাকলে এবং টিম ম্যানেজমেন্ট সঠিক ম্যাচ পরিকল্পনা করতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও ম্যাচ জয় আয়ত্তে ছিল।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল নড়বড়ে। টপ লেস বটম লেস ব্যাটিং নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়া, ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোন প্রত্যাশা ছিল না। বাংলাদেশ ভারতের ম্যাচটি যেন খেলার আগেই হেরে বসেছিল। টস জয় করে ভারতের মত দুর্ধর্ষ দলকে আগে ব্যাটিং করতে দেওয়া, একজন কম পেসার নিয়ে খেলা, শুরুতে দুইজন স্পিনার নিয়ে স্পিন বলে বিশ্বসেরা রোহিত, কোহলির বিরুদ্ধে সূচনা করা ছিল আত্মঘাতী।
সবচেয়ে দৃষ্টিকটূ ছিল সুযোগ পেয়েও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বস্ব দিয়ে জয়ের চেষ্টা না করা। তারপরেও বিসিবি কর্তারা তিন ম্যাচ জয় নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যানেজমেন্টের হীনমন্যতা প্রকাশ পায়। বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং সম্ভবত টুর্নামেন্টে নিম্ন সারির ছিল। ১, ২,৩ নম্বর ব্যাটার ছিল ব্যর্থ। তৌহিদ হৃদয় ছাড়া কারো ব্যাটে ধারাবাহিকতা ছিল না। টপ অর্ডার বারে বারে ব্যর্থ হলেও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে প্রমোট করা হয়নি।
১৫ জনের স্কোয়াড নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কোন বিবেচনায় মেহেদী মিরাজকে স্কোয়াডে রাখা হলো না কেউ বলছে না। আমি মনে করি বাংলাদেশ যতটুকু অর্জন করেছে তার চেয়ে বেশি কিছু করার সামর্থ ছিল না। সাকিব এবং রিয়াদের উচিত নিজে থেকেই টি২০ ফরমেট থেকে সরে দাঁড়িয়ে নতুনদের সুযোগ দেওয়া। একই সঙ্গে টি ২০ ফরম্যাটে নাজমুল শান্তর অধিনায়কত্ব পুনরায় বিবেচনার দাবি রাখে।
তবে বাংলাদেশের বোলিং ইউনিট ভালো করেছে। তানজিম শাকিব এবং রিশাদ হোসেন এবারের টুর্নামেন্টের বড় অর্জন। ক্রিকেট ফেলে তাসকিনের ঘুম নিয়ে নির্দয় আচরণ করেছে মিডিয়া। আমি মনে করি এই দলের নিউক্লিয়াস ধরে রেখে ৪-৫ জন উঠতি তরুণকে সম্পৃক্ত করে আগামীর দল গড়া। কোচিং স্টাফের পরিবর্তন আবশ্যক। হেড কোচের লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করা উচিত ছিল।
সত্যি বলতে কি যতটুকু অর্জন করেছে বাংলাদেশ তার চেয়ে বেশি আশা করিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাপক পরিবর্তন এবং ক্রিকেট প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গুণগত পরিবর্তন হবে না। তবু সান্তনা পরবর্তী বিশ্বকাপ খেলবে বাংলাদেশ।