টি২০ বিশ্বকাপ ২০২৪: ক্রিকেট বিশ্বে স্বপ্ন ডিঙ্গায় ভেসে আগুয়ান বাংলার বাঘ

সালেক সুফী

কাল বৃহস্পতিবার টি২০ বিশ্বকাপের ডি গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ খেলায় নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হওয়া অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছে। টস হেরে প্রথম ব্যাটিং করা বাংলাদেশ নিজেদের ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ১৫৯। জবাবে বাংলাদেশের শক্তিশালী বোলিং ইউনিট ভালো বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং করে টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ডসকে ১৩৪/৮ আটকে দেয়। ২৫ রানে জয়ী বাংলাদেশ পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হবার পথ নকশা রচনা করে ফেলেছে।

টি২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে ছন্নছাড়া বাংলাদেশ আইসিসি সহযোগী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে হেরেছে। বিদ্ধস্ত হয়েছিল শক্তিশালী ভারত দলের বিরুদ্ধে। এহেন দল নিয়ে বিশ্বকাপে স্বপ্ন দেখার সাহস করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভক্ত অনুরাগীরা। কিন্তু সেই দলটিই মূলপর্ব শুরু হতেই জিওন কাঠির পরশে হয়ে উঠলো দুরন্ত, দুর্বার। প্রথম ম্যাচে ইদানিং অন্যতম প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পড়া শ্রীলংকার বিরুদ্ধে সহজ জয়ের পর শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা দলকেও দুর্দান্ত বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং করে কোন ঠাসা করেছিল। দুর্বল ব্যাটিং এবং কিছুটা বিতর্কিত আম্পায়ারিং বাংলাদেশকে সামান্য ব্যাবধানে জয় বঞ্চিত করে। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের নয়নাভিরাম কিংসটাউনে ইউরোপের আইসিসি সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডসকে ২৫ রানে হারিয়ে বলা যায় সুপার ৮ পর্বে উন্নীত হওয়া নিশ্চিত করে ফেলেছে। বৃহস্পতি তুঙ্গে থাকা বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে ধরা যায় জিতে যাবে। স্বপ্ন দেখা বিশ্বজোড়া বাংলাদেশীদের স্বপ্নের সীমানা আকাশ ছুঁয়ে গাছে। মোমেন্টাম ধরে রেখে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলতে পারলে এই বাংলাদেশ নিয়ে বাজি ধরতে কুন্ঠা থাকবে না।

ডি গ্রুপে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ খেলার সবকটিতে জিতে ৬ পয়েন্টস নিয়ে এখন শীর্ষ স্থানে। বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছে ৪ পয়েন্টস। খেলতে হবে নেপালের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ। এই গ্রুপ থেকে নেপাল এবং শ্রীলংকা ইতিমধ্যে ছিটকে গেছে। গাণিতিক হিসাবে নেদারল্যান্ডসের সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দৃষ্টিনন্দন কিংসটাউনের স্পোর্টিং উইকেটে  টস হেরে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ কিন্তু শুরুতেই ফর্ম হীনতায় ভুগতে থাকা লিটন এবং শান্তর উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল। ৩.১ ওভারে ২৩ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তরুণ তানজিদ তামিম (৩৫) এবং নিজেকে ফিরে পাওয়া সাকিব আল হাসানের (৬৪*) যোগ করে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৮ রান করে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে। তরুণ তানজিদ একটু রয়ে শোয়ে ব্যাটিং করলে ইনিংসের পরিধি বিস্তৃত হত। টুর্নামেন্ট জুড়ে ভালো খেলতে থাকা তাওহীদ হৃদয় কাল সুবিধা করতে পারেনি। সাকিবের সঙ্গে বিশস্ত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২৫) পঞ্চম উইকেট জুটিতে মূল্যবান ৪১ রান যোগ করে।  টুর্নামেন্টে ব্যাট বলে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে থাকা সাকিব কাল ৪৬ বলে অপরাজিত ৬৪ রান করে নিজের জাত নতুন করে চিনিয়েছে। ২০ ওভার রান শেষে বাংলাদেশের রান দাঁড়ায় ১৫৯/৫।

জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে নেদারল্যান্ডস দল বাংলাদেশের উজ্জীবিত বোলিং ইউনিটের মোকাবিলায় নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকলেও একসময় ভিক্রাম সিংহ (২৬) এবং এঙ্গেলব্রেখট (৩৩) জুটিতে চোখ রাঙাতে থাকে। ম্যাচ যখন সেয়ানে সেয়ানে লড়াই চলছে ঠিক তখনি ইদানিং বাংলাদেশ বোলিংয়ের তুরুপের তাস রিশাদ হোসেন মরণ আঘাত হানে। অপরপ্রান্তে মুস্তাফিজের কিপ্টে বোলিং ডাচ খেলোয়াড়দের উইকেটে অবস্থান দুরূহ করে তোলে। জয়ের নেশায় মত্ত বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডস ইনিংস ১৩৪/৮ সীমিত রাখলে ২৫ রানে জয় তুলে নেয়। বলা যায় পরবর্তী রাউন্ডে খেলার দুয়ার খুলে ফেলে বাংলাদেশ। তাসকিন, তানজিম,মুস্তাফিজের সঙ্গে উঁচু মানের লেগ স্পিন বোলার রিশাদ যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বোলিং উঁচু স্তরে নিয়ে গাছে। টপ অর্ডার ব্যাটিং অনিশ্চয়তা কেটে গেলে পরিবর্তিত বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন আশায় বুক বাধা যেতেই পারে। সঠিক সময়ে ব্যাটিং ফর্ম ফিরে পাওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে ইতিমধ্যেই ভিন্ন ভাবে ভাবতে শুরু করেছে ক্রিকেট বিশ্ব।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 − 14 =