ক্রিস্টিয়ান পুলিসিচ এক গোল করেছেন, সতীর্থকে দিয়ে আরো এক গোল করিয়েছেন, সাবেক এই চেলসি ও বর্তমানে এসি মিলানের তারকার নৈপুন্যে রোববার বলিভিয়াকে ২-০ গোলে পরাজিত করে কোপা আমেরিকার শুভ সূচনা করেছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র।
গ্রুপ-সি’র আরেক ম্যাচে মিয়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে পানামাকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে কোপা আমেরিকার ১৫ বারের বিজয়ী উরুগুয়ে। প্রথম ম্যাচেই বড় এই জয়ে একইসাথে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে উরুগুয়ে একটি সতর্কবার্তাও দিয়েছে, তাদের নাম ফেবারিটের তালিকায় রাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অধিনায়ক পুলিসিচ টেক্সাসের এটি এন্ড টি স্টেডিয়ামে বিরতির আগেই ৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক কার্লিং শটে দলকে এগিয়ে দেন। এরপর ৪৪ মিনিটে স্ট্রাইকার ফোলারিন বালোগানের গোলের যোগানদাতা ছিলেন পুলিসিচ।
ম্যাচ শেষে সাবেক এই ব্লুজ তারকা বলেছেন, ‘আমরা আজ দারুনভাবে নিজেদের মেলে ধরেছি। আমাদের খেলার মধ্যে গভীর আবহ ছিল। অবশ্যই ম্যাচের শুরুতে গোল দেয়াটা ইতিবাচক ছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে এটা একটি দাপুটে পারফরমেন্স ছিল।’
যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বেলহল্টার অবশ্য তার দলকে এই জয়ের পর আত্মতুষ্টিতে না ভোগার আহবান জানিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে কোপা আমেরিকার পর নয়টি আসরে মাত্র এক ম্যাচে জয়ী হয়েছে বলিভিয়া। দক্ষিণ আমেরিকার দলটি যাতে তাদের আগের রেকর্ডকে কিছুটা হলেও বাড়াতে না পারে সেজন্য পুলিসিচ সম্ভাব্য সবকিছুই করেছেন। ম্যাচ শুরুর তিন মিনিটের মধ্যে বামদিকের কর্ণার থেকে পুলিসিচ দুর্দান্ত এক গোলে যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে দেন। বলিভিয়ার গোলরক্ষক গুইলারমো ভিসকারা হাত বাড়িয়েও বলটি ধরতে পারেননি। শুরুতেই গোল দেবার পরও যুক্তরাষ্ট্রকে এই ব্যবধান বাড়াতে বেগ পেতে হয়েছে। বলিভিয়ার শক্ত রক্ষনভাগকে একের পর এক আক্রমন করেও ভাঙ্গতে পারছিল না স্বাগতিকরা। প্রথম ৩১ মিনিটের মধ্যে বলিভিয়ার তিনজন খেলোয়াড় হলুদ কার্ড দেখেন। অধৈর্য্য হয়ে খেলার কারনে লিওনেল জাস্টিনিনাও, গাব্রিয়েল ভিলামিল ও লুইস হাকুইনকে হলুদ কার্ড দিয়ে সতক করেন রেফারি। ৪৪ মিনিটে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান দ্বিগুন করতে সমর্থ হয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে এসি মিলানের ফরোয়ার্ড পুলিসিচ পেনাল্টি এরিয়ার দিকে ছুঁটে আসা বালোগানের দিকে বাড়িয়ে দেন। ডিফেন্ডার জেসুস সাগরেডোকে কাটিয়ে কোনাকুনি লো শটে বল জালে জড়ান বালোগান।
বিরতির পরও যুক্তরাষ্ট্রের ফরোয়ার্ড লাইন প্রায়ই বলিভিয়াকে বিপদে ফেলা চেষ্টা করেছে। ৫০ মিনিটে টিম উইহার বাড়নো বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন বালোগান। মিনিটখানেক পর তিনি আবারো বল জালে জড়ালেও সামান্য অফসাইড পজিশনের কারনে সেটি বাতিল হয়ে যায়। ৬০ মিনিটে পুলিসিচের একটি শট দারুনভাবে রুখে দেন ভিসকারা। বদলী খেলোয়াড় রিকার্ডো পেপি ৬৫ মিনিটে ব্যবধান ৩-০ তে নিতে ব্যর্থ হন। ৯০ মিনিটে দুইবার পেপিকে রুখে দিয়ে ভিসকারা ব্যবধান বাড়াতে দেননি।
এদিকে মার্সেলো বিয়েসলার উরুগুয়ে দারুনভাবে টুর্নামেন্টের সূচনা করেছে। প্রতিপক্ষ পানামাকে তারা দাঁড়াতেই দেয়নি।
১৬ মিনিটে ম্যাক্সিমিলিয়ানো আরাউজো দারুন এক গোলে উরুগুয়েকে এগিয়ে দেন। পানামার গোলরক্ষক ওরলান্ডো মসকুয়েরা কাল নিজেকে দারুনভাবে প্রমান করেছেন। নাহলে পরাজয়ের ব্যবধান আরো বাড়তে পারতো। উরুগুইয়ান তারকা স্ট্রাইকার ডারউইন নুনেজকে বেশ কয়েকবার প্রতিহত করে দলকে রক্ষা করেছেন ওরলান্ডো। ২৯ মিনিটে ফেডেরিকো ভালভার্দের লো ক্রসে লিভারপুলের স্ট্র্কাার নুনেজকে দারুন এক সেভে গোল করতে দেননি পানামার গোলরক্ষক।
তবে বিরতির পর ম্যাচের চিত্র পাল্টে যায়। উরুগুয়েকে কিছুটা পরিশ্রান্ত মনে হয়েছে, এই সুযোগে পানামা আক্রমনের ধার বাড়ায়। কিন্তু স্ট্রাইকারদের ভুলে কাঙ্খিত গোলের দেখা পায়নি। ৮৫ মিনিটে দুর্দান্ত ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুন করেন নুনেজ। ইনজুরি টাইমে নিকোলাস ডি লা ক্রুজের ফ্রি-কিক থেকে মাটিয়াস ভিনার নিখুঁত হেডে বড় জয় পায় উরুগুয়ে।