অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস আর ভুল কৌশল ভারতের ভরাডুবির কারণ

সালেক সুফী

বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটের নতুন চ্যাম্পিয়ন আমাদের দেশ অস্ট্রেলিয়া।  ইংল্যান্ডের ওভাল ক্রিকেট মাঠে ফাইনালে বিশ্ব ক্রিকেট মোড়ল ভারতকে ২০৯ রানের বিশাল ব্যাবধানে বিদ্ধস্ত করে যোগ্য দল হিসাবে জিতেছে ক্যাঙ্গারু বাহিনী। স্মরণে আছে প্রথম বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে তাসমান কাজিন নিউ জিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল ভারত।

লক্ষ কোটি টাকার আইপিএল খেলায় ভারত মত্ত থাকায় পুরোপুরি প্রস্তুত শক্তিশালী অস্ট্রেলিযার টেস্ট খেলার জন্য ভারতের মানসিক প্রস্তুতির ঘাটতি লজ্জাজনক পরাজয়ের অন্যতম কারণ। হয়তো কিছুটা আত্মবিশ্বাস এবং ভুল কৌশলকেও দায়ী করা যায়। স্কোয়াড নির্বাচন এমনকি একাদশ নির্বাচনেও ভুল খুজবেন কেউ কেউ।

যত বড় ক্রিকেটার হোক না কেন ভিন্ন ফরম্যাটে, ভিন্ন পরিবেশে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ম্যাচ জয় সহজ নয় মূল্য দিয়েই উপলব্ধি করলো ভারত। অস্ট্রেলিয়া কিন্তু এমনিতেই এশেজ যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। বলতে পারেন জাসপ্রিত ভুমরার অনুপস্থিতি ভারতের আক্রমণের ধার অনেক কমিয়ে দিয়েছিলো। ইংলিশ উইকেট এবং কন্ডিশনে কিছুটা অপ্রস্তুত ভারত দল অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর মত অবস্থানে ছিল না।

টস হেরে প্রথম ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া সংগ্রহ করে ৪৬৯ রান। জবাবে ভারত করেছিল ২৯৬। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২৭০/৮ ইনিংস ঘোষণা করে ভারতকে ৪৪৪ রান করে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়।  বিরাট কোহলি ( ৪৯) এবং অজিঙ্কা রাহানে ( ৪৬) কিছুটা স্বপ্ন দেখলেও পঞ্চম দিনে স্পিন ধরা ওভাল উইকেটে নাথান লায়নের ( ৪/৪১) বোলিং মোকাবেলায় ভেঙে পরে ভারত ব্যাটিং দুর্গ।

বলতেই হবে এই ম্যাচে জোশ হ্যাজেলউড অসুস্থ থাকায় সুযোগ পাওয়া স্কট বোলান্ডকে খেলতেও নাভিশ্বাস উঠেছে ভারত ব্যাটসম্যানদের।  সঠিক লেংথ লাইনে বোলিং করে বোলান্ড জানান দিলো গুরুত্বপূর্ণ এশেজ যুদ্ধে ওকে অবহেলা করা সহজ হবে না। ভারত পঞ্চম দিনে যুদ্ধের আভাস দিয়েও বিনা যুদ্ধে ময়দান ছেড়ে দেয় ২৩৪ রানে গুটিয়ে পড়ে। ২০৯ রানের বিশাল ব্যাবধান পরিপ্রেক্ষিত, অবস্থান এবং দুই দলের প্রস্তুতির বিবেচনায় যথাযথ বলে মনে করি।

ব্যাস্ত ক্রিকেট সূচির মাঝে অনুষ্ঠিত এক ম্যাচের এই ফাইনাল খেলায় টস জয়ী ভারত অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানালে ট্রাভিস হেড (১৬৩ ) এবং স্টিভ স্মিথের ( ১২১ ) বিশাল ২৮৫ রানের চতুর্থ উইকেট জুটির কল্যানে ৪৬৯ রানের স্কোর গড়ে তুলে। সবুজ ঘাসে ঢাকা উইকেট মেঘে ঢাকা আকাশ ভারত দলকে বোলিং করায় উদ্বুদ্ধ করলেও এই ধরনের উইকেটে দ্রুত গতির সঠিক লেংথ নিশানায় ক্রমাগত বোলিং করতে পারেনি সামি, সিরাজ, শার্দুল বা যাদব।

উইকেটে সবুজ ঘাস থাকলেও শুষ্ক ছিল।  একে তো ফাইনাল তার উপর অস্ট্রেলিয়া দলে চারজন বাম হাতি ব্যাটসম্যান।  টেস্ট ক্রিকেটের সেরা বোলার রবি চন্দ্র অশ্বিনকে একাদশে না নেওয়ার মাসুল দিলো ভারত। অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ তুখোড় বোলিং আক্রমণের সামনে লংগার ভার্সন ক্রিকেট থেকে কিছু দিন দূরে সরে থাকা ভারত প্রথম ইনিংসে ২৯৬ রান করে কোনোভাবে ফলো অন এড়িয়েছিলো।

কাম্মিনস, বোলান্ড, স্টার্ক সঠিক লেংথ লাইনে দ্রুত গতিতে বোলিং করে কোণঠাসা করে ফেলেছিলো ভারতকে। অজিঙ্কা রাহানে (৮৯) এবং শার্দুল ঠাকুর ( ৫১) দেয়ালে পিঠ রেখে কঠিন পরিবেশে দলকে ভরাডুবি থেকে কোনো রকম রক্ষা না করলে টেস্ট হয়তো চতুর্থ দিনে শেষ হতো।

সার্বিক বিবেচনায় সেরা দলের হাতেই উঠেছে চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি। পর পর দুই বার ফাইনালে ব্যর্থ হবার জন্য ভারত দল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং ভ্রান্ত কৌশলকে দায়ী করতে পারে। ভারত দলটি কোনোভাবেই ওভাল উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াই করার মত প্রস্তুত ছিল না। এই উইকেটে দুই দলের বোলিং মূল ব্যাবধান গড়ে দেয়।  এছাড়া ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা অধিকাংশ আইপিএল টি২০ ফরম্যাটে সাদা বল ক্রিকেটে ব্যাস্ত থাকায় দ্রুত লাল বলে মানিয়ে নিতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার বোলিং, ফিল্ডিং ছিল তুখোড়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − 14 =