অনন্য উচ্চতায় মুশফিক

সালেক সুফী

আয়নাবাজির মুশফিক উইলবাজ হয়ে জবাব দিলো। বিশ্ব ক্রিকেটে স্যার ডোনাল্ড ব্রাডম্যান, স্যার গারফিল্ড সোবার্স, স্যার জ্যাক হবস, সুনীল মনোহর গাভাস্কার জাহির আব্বাস, জ্যাক কালিস, অরবিন্দ দি সিলভার এলিট ক্লাবের সদস্য এখন বগুড়ার বেঁটেখাটো ছেলে মুশফিকুর রহিম। এরা সবাই দেশের হয়ে সর্বপ্রথম ৫০০০ রানের মাইল  ফলকে পৌঁছেছে। ক্রিকেট কেন কোনো পেশাদারের জীবনে প্রতিদিন, প্রতি খেলায় সমান যায় না।  কথাই আছে ফর্ম সাময়িক কিন্তু ক্লাস চিরন্তন।

নানা কারণে নানা সময়ে বিশ্ব ক্রিকেট কিম্বদন্তীতের ফর্মেও সাময়িক ভাটা পড়েছে। আবারো ওরা সমহিমায় দেদীপ্যমান হয়ে।

ক্রিকেট যে পর্যায়েই বাংলাদেশ পৌঁছাক না কেন সেটি অর্জনে আশরাফুল, মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, রিয়াদের ব্যাক্তিগত বা সমিষ্টিগত অবদান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। কিন্তু দুঃখ লাগে যখন চাল চুল হীন কিছু মানুষ নিজেদের অবস্থান অনুধাবন না করে ক্রিকেট বীরদের অবমূল্যায়ন করে। অনেকটা নীরবেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গন থেকে সরে গেছেন বিজয়ী বীর মাশরাফি। ফর্মের তুঙ্গে থাকার সময় শেষ ইনিংসে সুতরাং করেও টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এখনো বিকল্প নাস থাকলেও তামিম নিজেকে গুটিয়ে রাখছে টি ২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। সাকিব খেলছেন নিজের খেয়াল খুশি মাফিক বেছে বেছে। মুশফিক নিয়মিত খেলছেন সব ফরম্যাটে। কিছু চাল চুলো হীন মানুষ সুযোগ পেলেই তারকা খেলোয়াড়দের উপর মনসস্তাত্তিক চাপ সৃষ্টি করছে।

মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, রিয়াদকে বাগে আন্তে ব্যার্থ হয়ে হাতুরাসিংহে বিসিবি প্রধানের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে অবসরের পথ বেঁচে নিতে উপদেশ দিয়েছিলো আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে। প্রতিক্রিয়ায় শ্রীলংকায় টি ২০ সিরিজ চলাকালেই ওই ফরমেট থেকে অবসর ঘোষণা করে অভিমানী মাশরাফি। ২০১৯ বিশ্বকাপে মাশরাফি শারীরিকভাবে ১০০% ম্যাচ ফিট ছিল না। প্রথম তিন ম্যাচের পর বিশ্রাম নেয়া সঙ্গত ছিল। দেশে ফিরে আর কখনো মাশরাফি খেলেন নি। অথচ বাংলাদেশের এযাবৎ সেরা অধিনায়ক নিশ্চিতভাবে বিদায়ী ম্যাচ পেতে পারতো। এখনো সুযোগ আছে।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ফর্ম, সফওল্লোর বিচারে এখনো টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য অপরিহার্য। কিন্তু ওকে নানাভাবে অবহেলা করায় জিম্বাবুয়ে সফরে নিজের টেস্ট জীবনের সেরা ইনিংস খেলার পর অবসর ঘোষণা করে। নানা সময়ে নানাভাবে অবহেলা করায় টি ২০ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে তামিম। সাকিবের সাথেও নানা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ক্রিকেট অধিকর্তারা। তবে বিশ্বসেরা চৌকষ সাকিব থোড়াই ধার ধরে কাউকে। খেলে নিজের খেয়াল খুশি মাফিক।

সবচেয়ে নিরীহ ভদ্র গোছের মুশফিককে নানাভাবে যন্ত্রনা করা হয়। মাঝে মাঝেই ব্যাট দিয়েই জবাব দেয় মুশফিক। কিছু দিন আগে সম্ভবত একটি ওডিআই ভালো ইনিংস খেলে সমালোচনাকারীদের আয়নায় মুখ ঢাকার উপদেশ দিয়েছিলো। কিছুটা অফ ফর্মে থাকা মুশফিক কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় শেষ টেস্ট ম্যাচেই ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলো। কিন্তু তার পরেও ওকে এবং সিনিয়রদের নিজেদের বিদায়ের পথ খোঁজার পরামর্শ দিলো এমন একজন যিনি জীবনে কোনো দিন কোনো পর্যায়েই খেলেন নি কোনো খেলা। হয়তো এটাই ওকে তাতিয়ে দিলো নিজেকে সংযত রেখে আরো একটি শত রান করে ইতিহাসের অংশীদার হতে।

এবার আর আয়নাবাজি করে নি মুশফিক। ওর হয়ে খাঁটি কথা বলেছে ওর জীবন সঙ্গী।  “আমরা সুখী মানুষের মতোই বিদায় নিবো। আমাদের স্থানটি নেয়ার মতো কেউ কি প্রস্তুত আছে? এমন কাউকে তৈরী করলেই ভালো হবে”। ডিলের জবাবে পাটকেল।

মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিককে টুপি খোলা অভিবাদন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seven − three =