আপনার বয়স যদি ৩০ পার হয়ে থাকে, তাহলে এই শীতে ব্যায়াম করুন। শীত সকালের আরামের ঘুম বাদ দিয়ে কেন ব্যায়াম করবেন?
বিখ্যাত কিছু গবেষণা জানাচ্ছে, গরমে আপনি যা-ই করুন, শীতে অবশ্যই ব্যায়াম করবেন। তাতে আরাম তো পাবেনই, সঙ্গে স্বাস্থ্যের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন পাবেন, যা অন্য কিছুতে পাবেন না। আপনি নিয়মিত রুটিন মেনে হাঁটা, দৌড়ানো, ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ এবং সাইকেল চালানোর মতো ব্যায়ামগুলো করতে পারেন। কথাগুলো বলেছেন হার্ভার্ড-স্পোল্ডিং রিহ্যাবিলিটেশন নেটওয়ার্কের স্পোর্টস মেডিসিনের অধ্যাপক ড. অ্যাডাম টেনফোর্ড।
বাড়তি ভুঁড়ি কমানোর এটাই সময়
শীত ব্যায়াম করলে এমন কিছু উপকার পেতে পারেন, যা গ্রীষ্মকালে পাবেন না। ঠান্ডা আবহাওয়া আসলে সহনশীলতার উন্নতি করতে পারে। ঠান্ডা তাপমাত্রায় হৃৎপিণ্ডকে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না, ঘাম কম হয় এবং কম শক্তি ব্যয় হয়। এসব কারণে কম ক্লান্তিতে আরও বেশি দক্ষতার সঙ্গে ব্যায়াম করা যায়। শীতে ব্যায়ামের কারণে আগে কমবে পেটের মেদ। গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা আবহাওয়ায় ব্যায়াম সাদা চর্বি, বিশেষ করে পেট ও ঊরুর চর্বিকে ক্যালরি-বার্নিং বাদামি চর্বিতে রূপান্তর করতে পারে। ফলে পেট ও ঊরুর মেদ কমে।
ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ
শীতকালের ব্যায়াম আপনাকে সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে এর চেয়ে ভালো সময় আর পাবেন না। এটি ঋতুগত রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। শীতের সময় তৈরি হওয়া একধরনের বিষণ্নতা দূর করতেও সকালে রোদে ব্যায়াম করা সহায়ক হতে পারে।
বিষণ্নতা দূর করে
নানান কারণে শীতে মানুষের বিষণ্নতা বাড়ে। বিষণ্নতা শুধু মেজাজকে প্রভাবিত করে না, মস্তিষ্কের আরও অনেক কাজকে প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষণ্নতা মানুষের প্রিফ্রন্টাল লোবসহ কিছু মস্তিষ্ক অঞ্চলের কার্যকলাপকে কমিয়ে দেয়, যা যুক্তি, ব্যক্তিত্ব এবং বিচারের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত। যাঁরা এক দশকের বেশি সময় ধরে বিষণ্ন ছিলেন, সুস্থ মানুষদের চেয়ে তাঁদের প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি মস্তিষ্কের প্রদাহ হওয়ার কারণ থাকে। আর এটা শীতকালে বেশি ঘটে। এটি মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করতে পারে, যা স্মৃতিশক্তির সমস্যা এবং ডিমেনশিয়াকে বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু শীতকালের ব্যায়াম এসব সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্ত থাকতে সহায়তা করবে।
রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়
সকালের ব্যায়াম ঠান্ডা পেশিকে প্রসারিত করে গতিশীল করে তোলে, যা শরীরের বিভিন্ন অংশ সচল রাখে। ব্যায়াম শরীরের জয়েন্টগুলোকে আরাম দিতে, রক্ত প্রবাহের ধারা সচল করতে এবং পেশি ও টিস্যুকে উষ্ণ করতে পারে।
তৃষ্ণা বাড়াবে, ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য তৈরি করবে
শীতে আমাদের পানির তৃষ্ণা কমে যায়। পানি কম পান করার ফলে অনেকের পায়ে ক্রেম্পিং হয়, অর্থাৎ পেশিতে টান লাগে। এ জন্য ঠান্ডা আবহাওয়ায় পানিশূন্য হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য কমে যায়। ব্যায়াম করার সঙ্গে পানি পানের সম্পর্ক ঠিক থাকলে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকবে এবং পেশিতে টান পড়বে না।
শীতে দেহ-মন ঠিক রাখতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সকালে হাঁটুন, মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিন। শরীর চাঙা থাকলে শীত আপনাকে কাবু করতে পারবে না। শীতে এমন পোশাক পরুন যা সহজে খুলে ফেলা যায় এবং প্রয়োজনে দ্রুত পরা যায়।
সতর্কতা
হাঁপানি বা হৃৎপিণ্ডের সমস্যা থাকলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সকালে হাঁটা ধীরে শুরু করুন। অনেক ক্ষেত্রে ঠান্ডা আবহাওয়ায় ব্যায়াম করা হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তীব্র কাঁপুনি, চরম ক্লান্তি, কথা জড়িয়ে যাওয়া বা শরীরের ভারসাম্য হারানোর মতো লক্ষণ দেখা দিলে ব্যায়াম করবেন না।