অবশেষে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে বাঘের গর্জন

সালেক সুফী: অবশেষে পরাজয়ের নিকষ কালো দিনশেষে জয়ের রোদেলা সকাল দেখলো বাংলাদেশ ক্রিকেট। কাকতলীয়ভাবে দিনটি ছিল ঈদের আনন্দ দিন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখনি দেশের মাটিতে বা বিদেশে যে কোনো ফরম্যাটে খেলে, টাইগার প্রেমিকরা স্বপ্ন দেখে। অনেক সময়েই স্বপ্নগুলো হতাশায় মিলিয়ে যায়। প্রতিটি জয় সৃষ্টি সুখের উল্লাসে উল্লসিত করে বাংলাদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাইকে। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের জয় ঈদ উৎসবে মত্ত বাংলাদেশিদের উৎসব রঙিন করেছে।

ইদানিং সব ফরম্যাটে পরজয়ের বৃত্তে বন্দি বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ ব্যাঘ্র বিক্রমেই ফিরেছে নিজেদের প্রিয় ওডিআই ফরম্যাটে। টেস্ট সিরিজে কৃষ্ণ ধোলাই আর টি২০ সিরিজে (২-০) বিধ্বস্ত হবার পর ৬ উইকেটে প্রথম ওডিআই ম্যাচ জয় বাংলাদেশিদের জন্য বাংলার বাঘ বাহিনীর ঈদ উপহার।

বৃষ্টি বিঘ্নিত প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে খেলা শুরুতে বিলম্ব হয়েছিল। ওভার সীমিত করে ৪১ করা হয়। টস জয়ী বাংলাদেশ অধিনায়ক নির্দ্বিধায় বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই ম্যাচ দিয়ে ওডিআই ক্রিকেট শুরু করা বাম হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারেই বল গ্রিপ করলো। দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রধান ব্যাটসম্যান শাই হোপকে চমৎকার বলে ফিরিয়ে দিলো। তামিম মুহূর্তেই বুঝে নিলেন এই উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিপদে ফেলার মতো বোলিং সম্পদ হাতে আছে।

শরিফুল, মিরাজ এবং অবশ্যই নাসুমের নিখুঁত লাইন, লেংন্থ বোলিং কোণঠাসা করে ফেললো স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করা সামারাহ ব্রুকস কিন্তু শুরুতেই বিদায় নিতে পারতো। মিরাজের বলে আম্পায়ার এলবিডব্লু সিদ্ধান্ত দিলেও বিতর্কিত ভাবে সিদ্ধান্ত পাল্টে দিলো টেলিভিশন আম্পায়ার। যাহোক বাংলাদেশের তুখোড় বোলিং একসময় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১১০/৯ কোণঠাসা করেছিল।

চার চারটি ক্যাচ ফস্কালো বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ একাই দুটি  ক্যাচ ফেলে দিলো। আফিফ একবার এবং মুস্তাফিজ নিজের বলে নিজেই একবার সুযোগ হাত ছাড়া করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ জুটি অবিচ্ছিন্নভাবে ৩৯ রান যোগ করে দলের সংগ্রহ নিয়ে গেলো ১৪৯/৯।  আশা করি বাংলাদেশের কোচিং স্টাফ দলের ফিল্ডিং বিষয়ে বিশেষ যত্ন নিবেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বাংলাদেশের উন্নত বোলিং আক্রমণের সামনে হকচকিয়ে গিয়েছিলো। খেলার ধারা অনুযায়ী ১১৫ বা ১২০ রানে গুটিয়ে যাওয়া ম্যাচের ধারা অনুযায়ী যথাযথ হতো। চমৎকার বল করা শরিফুল ৫ উইকেট পাওয়া সঙ্গত হতো। ইদানিং মাহমুদুল্লার ফিল্ডিং দক্ষতায় ভাটা পড়েছে। সীমিত ওভার ক্রিকেটে ফিল্ডিং প্রধান অস্ত্র। কিন্তু ক্যাচ ফস্কানো খেলার অংশ। তবে অনেক সময় এটি সংক্রমিত হয়। না হলে দলের তুখোড় ফিল্ডার আফিফ কেন সহজ ক্যাচ ফেলে দিবে। বাংলাদেশ পেসাররা উইকেট অনুযায়ী পেস পরিবর্তন করেছে,  স্পিনার্সরা উইকেট অনুযায়ী বল করেছে। উইকেট অনেকটাই বাংলাদেশের উইকেটের মতো ছিল।

বিরতিতে বোলিং কোচ অ্যালেন ডোনাল্ড বোলিং নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও ক্যাচ ফস্কানো নিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেন। উনি দুটো সুসৃঙ্খল ব্যাটিং পার্টনারশিপ আশা করেন ম্যাচটি জেতার জন্য। ডোনাল্ডের মেনটরিংএ বাংলাদেশ পেস বোলারদের উন্নতির ধারা সুস্পষ্ট।

বাংলাদেশের ইনিংস শুরুতে ধাক্কা খেয়েছিলো লিটনকে আকিল হোসেন ফিরিয়ে দেয়ায়। তামিম শান্ত চমৎকার ব্যাটিং করছিলো। তামিম ছিলেন দারুণ ছন্দে। ৫ ওভারে ৪০ রান যোগ হয়েছিল। অস্থির তামিম দ্রুত রান নেয়ার প্রয়াসে অ্যান্ডার্সন ফিলিপের সরাসরি থ্রোতে রান আউটে কাটা পড়লো। ২৫ বলে ৩৩ রান করা তামিমের আরো একটি ইনিংস আবারো মুকুলেই ঝরে গেলো।

শান্ত রিয়াদ পরিস্থিতি অনুযায়ী দেখে শুনে খেলে দলকে স্বস্তির অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নিজের ৩৭ রানের মাথায় অকারণে এই ক্যাচ দিয়ে ওডিআই শুরু করা গুরুকেশ মতির বলে পুরাণের হাতে ধরা পড়ল শান্ত। উইকেটে থিতু হয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের শিখতে বাকি আছে কিভাবে ম্যাচ জয় করে ফিরে আসতে হয়। শান্ত আউট হবার পরেই আউট হতে পারত রিয়াদ। পুরানের বলটি সৌভাগ্য ক্রমে নো বল ছিল। পুরান সম্প্রতি নিজেই বোলিং করছে। উইকেটের গ্রিপ, টার্ন বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করে আফিফের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয় পুরান। অকারণে আক্রমণাত্মক হতে চেষ্টা করে উইকেট বিসর্জন দেয় আফিফ। ফিলিপ চমৎকার ক্যাচ লুফে নিয়ে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখে। বিপদ হতো বাংলাদেশের যদি পুরান রিয়াদের বিরুদ্ধে নিজের বলে এলবিডব্লুর জন্য ডিআরএস নিতেন। যাহোক আর কোনো বিচ্যুতি ঘটেনি।

মাহমুদুল্লাহ সোহান ৫ম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৪০ রান যোগ করে বাংলাদেশকে চলতি সফরে প্রথম জয় এনে দিলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এটি ৯ম ধারাবাহিক ওডিআই ম্যাচ জয়। শাকিব,  মুশফিক, ইয়াসির আলী, সাইফুদ্দিন ছাড়াই এই জয় বিশেষ কৃতিত্বের দাবি রাখে। একটি জয় বাংলাদেশকে অনেক উজ্জীবিত করবে সন্দেহ নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × four =