সালেক সুফী: বাংলাদেশ মিডিয়ায় সাকিব বন্দনা, আলোচনা চলছেই। সবাই জানে এবার সাকিবের সঙ্গে লিটন দাস আইপিএলে পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতার নামধারী বলিউড কিংবদন্তি শাহরুখ খানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ। বাংলাদেশের তৃতীয় খেলোয়াড় ‘ফিজ’ নাম খ্যাত মুস্তাফিজ খেলছে দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। বাংলাদেশ এখন দেশের মাটিতে সফরকারী আয়ারল্যান্ড দলের সঙ্গে ওডিআই, টি২০ সিরিজ শেষ করে আজ ৪ এপ্রিল থেকে একমাত্র টেস্ট ম্যাচ শুরু করবে।
বিসিবি প্রধান কিন্তু শুরু থেকেই বলে আসছেন দেশের খেলা না থাকলেই কোনো চুক্তি বদ্ধ খেলোয়াড় বিদেশি ফ্রাঞ্চাইস লিগে খেলতে পারবে। বিষয়টি নাকি এবারের আইপিএল নিলাম শুরুর আগেই আইপিএল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল বিসিবি। সেটি জেনেই কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং দিল্লী ক্যাপিটাল বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের চুক্তিবদ্ধ করে। আইপিএল ৩১ মার্চ শুরু হয়েছে কবে মে ২০২৩ শেষ নাগাদ।
বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ওডিআই সিরিজ খেলার জন্য ১ মে দেশ ছাড়বে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের তিন খেলোয়াড় কেউ পুরো মৌসুমে তাদের ফ্রাঞ্চাইস প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে না। কিন্তু এটি নিয়ে বাংলাদেশ অতি উৎসুক মিডিয়া বার বার রিপোর্ট প্রচার করে এতো লেবু চিপেছে যে বিষয়টি তেতো হয়ে গাছে। ওদের খুব একটা দশ দেব না। অতীতে কিন্তু অন্তত সাকিবের ক্ষেত্রে বিসিবি কখনো নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।
উপরোক্ত অবস্থা জেনেও বাংলাদেশের, তিন খেলোয়াড় বিসিবির কাছে পুরো মৌসুম আইপিএল খেলার ছাড়পত্রের আবেদন করে সুপারিশ করতে থাকে। মিডিয়ায় পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্কের অবতারণা করা হয়। অবশেষে টেস্ট না খেলা মুস্তাফিজ ছাড়পত্র নিয়ে ইতিমধ্যে খেলতে গেছেন। সাকিব, লিটন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক এবং সহঅধিনায়ক। ওদের খেলার জন্য ছাড়পত্র ছিল টেস্ট খেলা শেষে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ শুরুর আগে পর্যন্ত।
বিষয়টি নিয়ে কিন্তু জল অনেক ঘোলা হয়। এবারের মৌসুমে কেকেআর খুব একটা যুৎসই দল গঠন করতে পারেনি। দলনায়ক শ্রেষ আয়ার আহত হওয়ায় সুযোগ ছিল পুরো মৌসুম খেললে তাকে অধিনায়ক করার। আর লিটন এবার প্রথম খেলবে। ওর সুযোগ আছে উইকেট কিপার আর সূচনাকারী ব্যাটসম্যান হিসাবে অধিকাংশ ম্যাচ খেলার। বিদ্যমান অবস্থায় কেকেআর ওদের প্রস্তাব দেয় নিজ থেকে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার তাহলে ওরা আরো দুইজন বিদেশি খেলোয়াড় নিতে পারবে। সাকিব সম্মতি দিয়ে সরে এসেছে। লিটন খেলবে বলে বলেছে।
এখন দেখুন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাকিব লিটন ছাড়া বাংলাদেশ টেস্ট এবং ফিরতি ওডিআই সিরিজ খেলতে পারতো কি না? দুই দলের যে শক্তির পার্থক্য আর খেলাটি যেহেতু বাংলাদেশের দুর্গম দুর্গ ঢাকায় সেখানে আমি সাকিব, লিটন ছাড়া বাংলাদেশ শক্তিহীন হয়ে পড়বে মনে করি না। তামিম, সাদমান, শান্ত, মুশফিক, মোমিনুল, মিরাজ, তাইজুল, তাসকিন (আহত), এবাদত, হাসান মাহমুদ নিয়ে গড়া বাংলাদেশ কিন্তু ওদের হারানোর মত শক্তিশালী।
আর ইংল্যান্ডের লিস্টারশায়ারে অনুষ্ঠিতব্য ৩ ম্যাচের ওডিআই সিরিজে লিটন, সাকিব, মুস্তাফিজ না খেললে অবশ্য দলের ভারসাম্য অনেকটাই নষ্ট হবে। বাংলাদেশ অবশ্য ইতিমধ্যে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সিরিজের ফলাফল অন্য দল যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আমি তবুও মনে করি তিন জনকেই দুটো সিরিজ থেকেই অব্যাহতি দেওয়া যেত।
কিছুদিন পরেই এশিয়া কাপ আর এই বছরই ভারতে বাংলাদেশ খেলবে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ দলের তিন অপরিহার্য খেলোয়াড় পুরো মৌসুম আইপিএল খেললে বিশ্বকাপের ভেনুগুলোতে খেলার অভিজ্ঞতা হতো। জানিনা সাকিবের সঙ্গে বিসিবির কোনো মহলের রেষারেষির কারণে সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা। সাকিব কিন্তু বিচক্ষণ ব্যাক্তি। ইতিমধ্যে সাকিব টেস্ট শেষে ঢাকা ক্রিকেটে মোহামেডানসের হয়ে খেলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দেখা যাক এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া কি হয়? আশা করি আজ থেকে শুরু হয় টেস্ট ম্যাচে সাকিব, লিটন দুইজন নিজেদের সেরা খেলায় উপহার দিবেন।