ইতালির ফ্লোরেন্সে বিখ্যাত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির চিত্রকর্ম দেখার সময়েই গর্ভে তার অস্তিত্ব টের পান তার জন্মদাত্রী মা। তখনই তিনি ঠিক করেন নিজের সন্তানের নাম রাখবেন ইতালিয়ান চিত্রশিল্পীর নামেই। তখনই হয়ত বিশ্ব আরেক কালজয়ী শিল্পীর আগমনের বার্তা পেয়ে গিয়েছে।
বলছিলাম লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর কথা। পুরো নাম লিওনার্দো উইলহিল্ম ডিক্যাপ্রিও। ১৯৭৪ সালের ১১ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কালিফোর্নিয়ায় তার জন্ম। মা আর্মেলিন ইনডেনবার্কেন জার্মানির এবং বাবা জর্জ ক্যাপ্রিও ইতালির নাগরিক।
ডিক্যাপ্রিওর শৈশবের স্মৃতি মোটেও সুখকর ছিল না। জন্মের বছরখানেক পরেই তার বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মায়ের সঙ্গে লস অ্যাঞ্জেলেসেই নিজের শৈশবের অধিকাংশ সময় পার করেছেন। নিজের শৈশব নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ডিক্যাপ্রিও বলেন, “ওই সময়ের অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ, লস অ্যাঞ্জেলেসের যেখানে আমি ছিলাম, সেটা মাদক ও পতিতাবৃত্তি বেষ্টিত ছিল।”
৫ বছর বয়সে বিজ্ঞাপনচিত্রের মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয় ডিক্যাপ্রিওর। ওই বয়সেই টেলিভিশনের ধারাবাহিকের সেটে ভাঙচুরের জন্য অভিনয় থেকে বাদ পড়েন। এরপর টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আবার ১৪ বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে ফিরে আসেন। নব্বইয়ের দশকে শুরুতে তিনি বিভিন্ন টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেন।
১৯৯১ সালে ক্রিস্টিন পিটারসনের “ক্রিটারস থ্রি” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় ডিক্যাপ্রিওর। তবে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন “দিস বয়েজ লাইফ” চলচ্চিত্র দিয়ে। এই চলচ্চিত্রের জন্য ৪০০ শিল্পীর মধ্য থেকে ডিক্যাপ্রিওকে বেছে নেন পরিচালক রবার্ট ডি নিরো। এছাড়া, “হোয়াটস ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ” চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেও তিনি প্রশংসা পান।
১৯৯৭ সালে জেমস ক্যামেরনের “টাইটানিক” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ডিক্যাপ্রিওর ক্যারিয়ারের নতুন মোড় আসে। এরপর তাকে আর কখনোই পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। “ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান”, ”গ্যাংস অব নিউইয়র্ক”, “দ্য অ্যাভিয়েটর”, “দ্য ডির্পাটেড”, “শাটার আইল্যান্ড”, “ইনসেপশন” চলচ্চিত্রে প্রতিবার নিজেকে ভেঙে দর্শকের সামনে নতুন ভূমিকায় খাজির হয়েছেন তিনি।
এতকিছুর পরেও ক্যারিয়ারে অধরা ছিল অস্কার। ২০১৫ সালের “দ্য রেভেন্যান্ট ” চলচ্চিত্রে “হিউ গ্লাস” চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে অ্যাকাডেমি পুরস্কার (অস্কার) ও বাফটা পুরস্কার এবং তৃতীয় গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার লাভ করেন।
শুধু অভিনয় জগতে নয়, ডিক্যাপ্রিও নিজের ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন চলচ্চিত্রের বাইরেও। অভিনয়ের বাইরে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত আছেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন “লিওনার্দো দি ক্যাপ্রিও ফাউন্ডেশন”।