অলৌকিক কিছু না ঘটলে বাংলাদেশের বিশাল জয় অনিবার্য

সালেক সুফী

ঢাকার মীরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আইস ক্রিম প্রনোদিত ওয়াল্টন গ্রুপ বাংলাদেশ -আফগানিস্তান একমাত্র টেস্ট ম্যাচে অতিবৃষ্টি অথবা কোনো অলৌকিক কিছু না ঘটলে বাংলাদেশ অনিবার্য ভাবে বিশাল ব্যাবধানে জয় পাবে। বাগে পেয়েও ফলো না করানো এবং তৃতীয় দিনে ৪৫০-৫০০ রান এগিয়ে থেকে ইনিংস ঘোষণা না করে দীর্ঘ সময় ব্যাটিং চালিয়েও তৃতীয় দিন স্বল্প আলোয় ম্যাচ শেষ হবার সময় বাংলাদেশ বিশাল ৬১৭ রানে এগিয়ে আছে।  অতিথি দল ৬৬২ রানের রান পাহাড়ে চাপা পরে দিনশেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান করেছে। উপরন্তু দলনায়ক হাসমাতুল্লাহ শাহিদী তাসকিনের বলে আঘাত পেয়ে অবসর নিয়েছে। এই অবস্থান থেকে ম্যাচ বাকি দুই দিন কোনো কারণে বিঘ্ন না ঘটলে বাংলাদেশের বিশাল জয় ছাড়া অন্য কোনো পরিণতি নেই।  কখনো কখনো অলৌকিক কিছু ঘটলেও এই ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনাও তিরোহিত।

সবুজ ঘাসে ঢাকা বাউন্সি উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস দ্বিতীয় দিনের সকালে মুড়ি মুড়কির মতো ধসে পড়েছিল প্রথম দিনে ভালো ব্যাটিং করার পর। মাত্র ৯ রানে শেষ ৫ টি উইকেটের পতনের ফলে ৩৮২ রানে শেষ হয়েছিল বাংলাদেশ ইনিংস।  নিজেকে ক্রমাগত নতুন উচ্চতায় তুলে নেয়া নাজমুল হোসেন শান্ত ১৪৬ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলেছিল।  তরুণ মাহমুদ হাসান জয় করেছিল পরিণত ৭৬ রান. এছাড়া মেহেদী মিরাজ ৪৮ এবং মুশফিক ৪৭ রান করে অবদান রেখেছিলো। অতিথি দলের অভিষিক্ত পেসার নিশাত মাসুদ টেস্ট জীবনের প্রথম বলে উইকেট নেয়া ছাড়াও ৭৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছিল। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো উপযোগী উইকেটে চমৎকার বোলিং করে এবাদত (৪/৪৭), শরিফুল (২/২৭ ) আফগান দলের ইনিংস ধ্বসিয়ে দিয়েছিলো। শেষ দিকে দুই স্পিনার তাইজুল (২/৭) এবং মিরাজ (২/১৫) নিজেদের মূর্তিতে সক্রিয় হলে অতিথি দলের ইনিংস ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায়।

২৩৬ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের সুযোগ ছিল অতিথি দলকে ফলো ওন করানো।  মাত্র ৩৯ ওভার বোলিং করে বোলাররাও পরিশ্রান্ত ছিল না। হাতে অফুরন্ত সময়। হেড কোচ এবং টিমের থিঙ্ক ট্যাংক সিদ্ধান্ত নিলো কঠিন উইকেটে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের আবারো মানিয়ে নেয়ার সুযোগ দিতে। ব্যাট হাতে আরো একটি ঝক ঝকে শত রান (১২৬) উপহার দিলো নাজমুল হোসেন শান্ত। এই টেস্টে দুই ইনিংসে শতরান ( ১৪৬ এবং ১২৬) । বাংলাদেশের হয়ে মোমিনুল হকের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে এই কীর্তির অধিকারী হলো শান্ত। একসময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্দয় ট্রলের শিকার হয়ে লর্ড উপাধি পেয়েছিলো। এখন প্রতিভার আলোকছটায় উদ্ভাসিত শান্ত বাংলাদেশের অন্যতম ভরসায় পরিণত। ক্রমাগত নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে ম্যাচের পর ম্যাচ। এবারে কিন্তু মাহমুদুল হাসান জয় সহসা ফিরেছিল। শান্তর সঙ্গী ছিল ওপর তরুণ জাকির হাসান। ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউট না হলে ওর ৭১ রানের ইনিংস শত রানে পরিণত হতে পারতো। শান্ত -জাকির ১৭৩ রানের জুটি বাংলাদেশকে রানের চূড়ায় পৌঁছে যেতে সাহস যোগায়। বাংলাদেশের লিড তরতরিয়ে বেড়ে যেতে থাকে। শান্তর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের ছোট পাখি মোমিনুল অনেক দিন পর নিজেকে ফিরে পায়।  স্বচ্ছন্দে শান্ত -মোমিনুল জুটি খেলতে থাকা অবস্থায় শান্ত মমিনুলের এক টেস্টে দুই ইনিংসে শত রানের কীর্তি ছুঁয়ে ফেলে। মোমিনুল নিজেই প্রথম শান্তকে অভিনন্দিত করে। ১২৬ রান করে শান্ত ফিরে গেলে মমিনুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে মুশফিক বেশি খান থাকতে পারে নি। কিন্তু দলনায়ক লিটন যুক্ত হয়ে স্বভাবসুলভ স্বাচ্ছন্দ ব্যাটিং করে। ধীরে ধীরে নিজেকে মেলে ধরে মোমিনুল নিজের ১২ম শত রানে পৌঁছায়।  লিটন প্রথা গত এবং প্রথা বিরুদ্ধ স্ট্রোকস খেলে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকে। অবশেষে ৬৬২ রান এগিয়ে থেকে ৪২৫/৪ উইকেটে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।

বলা যায় ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গাছে। বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটে কোনো দলের পক্ষেই এই টার্গেট তাড়া করে উইকেট এবং পরিবেশে ম্যাচ জয় করা স্বপ্নের অতীত। তদুপুরি শুরুতেই আঘাত হেরে শরিফুল এবং তাসকিন ইব্রাহিম জাদরান এবং আব্দুল মালিককে ফিরিয়ে দিয়ে কোনঠাসা করে দেয়।  দলনায়ক তাসকিনের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে অবসর নেয়।  দিন শেষে আলোক স্বল্পতায় খেলা শেষ হবার সময় ৪৫/২ করে ধুক ছিল আফগান দল।  আষাঢ় মাস বর্ষা মৌসুম।  জানিনা আবহাওয়ার পূর্বাভাস কি বলছে। তবে দুটি দিন বৃষ্টি হয়তো হবে না। দুটি সেশন খেলা হলেই বাংলাদেশের বিশাল জয় করায়ত্ত করার কথা। যদি না হয় তাহলে থিঙ্ক ট্যাংক বিশেষত হেড কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের কৌশল প্রশ্ন বিদ্ধ হবে। আমি ব্যক্তি গত ভাবে মনে করি প্রথম ইনিংসের শেষে বাংলাদেশের ইনিংস চট জলদি গুটিয়ে যাবার পর কৌশল ছিল ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া। একটি মাত্র টেস্ট, হাতে অফুরন্ত সময়।  নিকট ভবিষ্যতে এই দলের বিরুদ্ধে দুই ভিন্ন ফরম্যাটে খেলা। এর পর নিউজিল্যান্ড টেস্ট খেলতে আসবে বাংলাদেশে। হয়তো আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানে সবাই। একটু অস্বাভাবিক এবং বিরক্তিকর মনে হলেও বাংলাদেশের কৌশল হয়তো ঠিক আছে। তবে ৫০০-৫৫০ লিড নিয়ে ছেড়ে দিলে হয়তো তৃতীয় দিনেই ম্যাচে বাংলাদেশের জয় অর্জিত হতো। এখন অলৌকিক কিছু ছাড়া আফগান দলের পরাজয় এড়ানোর কোনো সুযোগ থাকলো না। আফগান দল কেন শীর্ষ স্থানীয় অনেক খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়ে এমন দলকে পাঠিয়েছে তার হয়তো ব্যাখ্যা ওদের কাছে আছে। সেটা যাই হোক ঢাকা টেস্টে বিড়ম্বনার কথা অনেক দীর্ঘ দিন মনে থাকবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 5 =