আটকে থাকা সিনেমা মুক্তির হিড়িক

ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হওয়ায় গত বছরের মাঝামাঝি থমকে গিয়েছিল দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। জুলাই ও আগস্ট মাসে মুক্তি পেয়েছিল মাত্র দুটি সিনেমা। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সেপ্টেম্বরে আলোর মুখ দেখেনি কোনো সিনেমা। অক্টোবর থেকে হলে সিনেমা মুক্তি দেওয়া শুরু করেন প্রযোজক-পরিচালকেরা। বছরের শেষ তিন মাসে ১৮টি সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়। তবে এই তালিকায় সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত সিনেমার চেয়ে দীর্ঘদিন আটকে থাকা সিনেমাই ছিল বেশি। নতুন বছরেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র।

আটকে থাকা সিনেমার আধিক্য

বছরের প্রথম মাসে মুক্তি পেয়েছে চারটি সিনেমা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘মেকআপ’ ও ‘রিকশা গার্ল’। চার বছর সেন্সর বোর্ডে নিষিদ্ধ থাকার পর ১০ জানুয়ারি মুক্তি পায় অনন্য মামুনের মেকআপ। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না পেলেও ২০২১ সালের মার্চে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইথিয়েটারে মুক্তি দেওয়া হয় সিনেমাটি।

২৪ জানুয়ারি মুক্তি পাওয়া রিকশা গার্ল সিনেমারও একই হাল। করোনা ও বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের কারণে এত দিন দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া যায়নি অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সিনেমাটি। ২০২০ সালে মুক্তির কথা থাকলেও পাঁচ বছর পর দেশের দর্শক সুযোগ পায় রিকশা গার্ল দেখার।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পায় সরকারি অনুদানের দুই সিনেমা। এর মধ্যে রয়েছে সাত বছর আগে অনুদান পাওয়া ‘দায়মুক্তি’। বৃদ্ধাশ্রমের গল্পকে উপজীব্য করে এটি নির্মিত হয়েছে। বানিয়েছেন বদিউল আলম খোকন। ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তির অপেক্ষায় থাকা দুটি সিনেমাও সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত নয়। অরুণ চৌধুরীর ‘জলে জ্বলে তারা’ সিনেমার শুটিং শেষ হয়েছিল ২০২১ সালের শেষ দিকে। পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ শেষ করতে সময় লাগল প্রায় চার বছর। সরকারি অনুদানের এ সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এফ এস নাঈম, রাফিয়াত রশিদ মিথিলা প্রমুখ।

তালিকায় থাকা আরেক সিনেমা জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘ময়না’র শুটিং শেষ হয় ২০২২ সালে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি তৎকালীন সেন্সর

বোর্ড থেকে মুক্তির অনুমতি পেলেও দেড় বছর পর দেশের হলে আসছে সিনেমাটি। মনজুরুল ইসলাম মেঘের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন আমান রেজা, রাজ রিপা, নাদের চৌধুরী, মোমেনা চৌধুরী, আফফান মিতুল প্রমুখ।

২১ ফেব্রুয়ারি মুক্তির ঘোষণা এসেছে ছয় বছর আগে সেন্সর বোর্ড থেকে মুক্তির অনুমতি পাওয়া সুজন বড়ুয়ার ‘বান্ধব’। ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া জন্মপরিচয়হীন এক শিশুর গল্প নিয়ে এই সিনেমা। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌ খান, গাজী রাকায়েত, জয় রাজ, সুমিত সেনগুপ্ত প্রমুখ। অনুপ বড়ুয়া প্রযোজিত সিনেমাটি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিল ২০১৯ সালে।

হতাশ হলমালিকেরা

সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আটকে থাকা সিনেমাগুলো মুক্তি দিচ্ছেন নির্মাতারা। নতুন ও বড় বাজেটের সিনেমা না থাকায় হলমালিকেরাও বাধ্য হয়ে এসব সিনেমা চালাচ্ছেন। তবে সিনেপ্লেক্স কিংবা সিঙ্গেল স্ক্রিন—কোনোটাতেই দর্শক টানতে পারছে না সিনেমাগুলো। বেশির ভাগ সিনেমা চালিয়ে হলের বিদ্যুৎ বিলই উঠছে না বলে দাবি হলমালিকদের। অনেক সময় দর্শকের অভাবে নির্ধারিত সময়ে শো চালু সম্ভব হয় না। চলচ্চিত্র পরিদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘কোরবানির ঈদের পর কোনো সিনেমাই দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। নতুন বছরে অবস্থা আরও খারাপ। সব মিলিয়ে আমরা হতাশ।’

সবার লক্ষ্য ঈদ

নতুন সিনেমা নির্মাণ একেবারেই যে বন্ধ হয়ে গেছে, বিষয়টি তেমন নয়। তবে যে কয়টি সিনেমা নির্মিত হয়েছে, সব কটি মুক্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে দুই ঈদ ঘিরে। এরই মধ্যে রোজার ঈদে মুক্তির ঘোষণা এসেছে বেশ কয়েকটি সিনেমার। এই তালিকায় রয়েছে শাকিব খানের ‘বরবাদ’, সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’, আফরান নিশোর ‘দাগী’, আদর আজাদের ‘পিনিক’সহ কয়েকটি সিনেমা। গত ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছিল ১১টি সিনেমা। এবারও মুক্তির তালিকায় ৮ থেকে ১০টি সিনেমার নাম আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে ঢাকাই সিনেমা হয়ে উঠেছে ঈদকেন্দ্রিক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twelve + eight =