আতঙ্কগ্রস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে ছেলেখেলা খেললো আফগানিস্তান

সালেক সুফী

ক্রিকেট নিয়ে গত কয়দিনের অস্বাভাবিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত (?) বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলা করেছে কাল সফরকারী আফগানিস্তান দল।  কাল চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগান দল ১৪২ রানের বিশাল ব্যাবধানে বাংলাদেশকে বিদ্ধস্ত করে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ জিতে করায়ত্ত করেছে।

ওডিআই ফরম্যাটে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান দল দুটির শক্তি মেধার তুলনামূলক বিচারে একটি দল ওপর দলকে এমনভাবে নাস্তানাবুদ করবে এটি স্বাভাবিক বলে ভাবা যায় না। তামিমের অসময়ে অবসর ঘোষণা এবং নানা নাটকের পর সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপে ফিরে আসার প্রতিক্রিয়ায় দল আতংকিত কিনা সেটি বিশ্লেষণের বিষয়।  কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের পরিচিত পরিবেশে নিজেদের শক্তিশালী ফরম্যাটে ১৪২ রানে হেরে যাবে বাংলাদেশ সেটি মেনে নেওয়া যায় না। এই দলটি নিয়ে যারা এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে স্বপ্ন দেখেন সেই স্বপ্ন সম্ভাবনা ফানুসে পরিণত।

বাঁচা মরার ম্যাচে বিশ্রামে থাকা তামিম বিহীন বাংলাদেশের কাল জয় ছিল অপরিহার্য।  টস জিতে বাংলাদেশ কেন ব্যাট করলো না সেটি নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু সম্প্রতি উন্নত হতে থাকা বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণকে তুলোধোনা করে ৩৩১/৯ করে নতুন মাইল ফলক স্থাপন করে। মুস্তাফিজ, হাসান মাহমুদ, এবাদাত, সাকিব, মিরাজদের পাড়ার বোলার বানিয়ে রামানুল্লাহ গুরবাজ (১৪৫) এবং ইব্রাহিম জাদরান (১০০) প্রথম উইকেট জুটিতেই তুলে নেন ২৫৬ রান।

সৌভাগ্য বাংলাদেশের এই জুটি ভাঙার পর অবশিষ্ট ব্যাটসম্যানরা এই অবস্থান থেকেও ৩৩১/৯ বেশি করেনি। বাংলাদেশ বোলিং ফিল্ডিং ছিল এলোমেলো। উইকেট ছিল ফ্লাট।  আশা ছিল বাংলাদেশ ভালো ব্যাটিং করে যথোপযুক্ত জবাব দিবে। কিন্তু উঁচু মানের আফগানিস্তান বোলিং মোকাবিলায় তাসের ঘরের মতো ঝরে পড়ে বাংলাদেশ।

৮.২ ওভারেই ২৫ রান তুলতে ফিরে যায় লিটন, শান্ত, নাঈম। হৃদয়, সাকিব বা আফিফও হন ব্যর্থ। একমাত্র মুশফিক (৬৯) এবং মেহেদী মিরাজ কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও সেটি ছিল নিতান্তই অপর্যাপ্ত। ৪৩.২ ওভারে ১৮৯ রানে ইনিংস সাঙ্গ হলে ১৪২ ব্যাবধানে শোচনীয় ভাবে পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজে ০-২ পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশের এখন ধবল ধোলাই হবার সম্ভাবনা। রাশিদ খান, মুজিবকে খেলতে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন বাংলাদেশ ফজল হক ফারুকীকে খেলতেও হিমশিম খাচ্ছে। নিজেদের অঙ্গনেই যখন এই হাল তখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার  সাহস করা দুরূহ।

তবে কাল খেলা দেখে কেন জানি বাংলাদেশ দলকে আতঙ্কগ্রস্ত মনে হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ততা আদৌ ছিল না। স্বাভাবিক খেলা ছিল অনুপস্থিত। মানসিক ভাবে দ্বিধাগ্রস্ত বাংলাদেশ দলকে জাগাতে শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প দেখি না।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six + 9 =