‘আদিম’ মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে দুটি পুরস্কার জিতেছে

৪৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দুটি পুরস্কার জিতেছে মূল প্রতিযোগিতা শাখায় নির্বাচিত ‘আদিম’। এগুলো হলো সিলভার জর্জ অ্যাওয়ার্ড (স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড) এবং নেটপ্যাক জ্যুরি অ্যাওয়ার্ড। এটি বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতা যুবরাজ শামীমের প্রথম চলচ্চিত্র। গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে নেটপ্যাক জুরি প্রধান যুবরাজকে পুরস্কার তুলে দেন। এরপর বিকেলে তিনি লালগালিচায় হেঁটেছেন। সবশেষে সমাপনী আয়োজনে তার হাতে উঠেছে বিশেষ জুরি পুরস্কার।

দুটি পুরস্কার জেতার অনুভূতিতে যুবরাজ শামীম বলেন, ‘সত্যি বলতে এই উৎসবের পুরো বিষয়টাই আমার কাছে এখন পর্যন্ত কাল্পনিক মনে হচ্ছে! আমি হয়তো কোনও ঘোরের মধ্যে আছি! আমার এই অর্জন আমার বাবা শাহজাহান ভূঁইয়াকে উৎসর্গ করছি।’ ‘আদিম’ ছবিতে টঙ্গীর বস্তি জীবন দেখেছে মস্কো। টঙ্গীর একটি বস্তির হরেক রকম মানুষের জীবনে অনুপ্রাণিত ‘আদিম’ ছবির চিত্রনাট্য। মস্কোতে এটি ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছে। উৎসবে যুবরাজের সঙ্গে ছিলেন নির্বাহী প্রযোজক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। তারা সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

টঙ্গীতে বেড়ে ওঠা যুবরাজ টঙ্গী রেলস্টেশনে বসে বস্তির নানান রঙের গল্প শোনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন। চিত্রনাট্য তৈরির জন্য দিনের পর দিন বস্তিতে থেকেছেন যুবরাজ। স্থানীয় একজনের সহায়তায় বস্তিতে থাকার জায়গা পান তিনি।

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পরিচয় হওয়া নেদারল্যান্ডসের পরিচালক ক্লিমেনটিনে এডারভিন গল্প ও পরিকল্পনা শুনে যুবরাজকে ২০০ ইউরো দিয়ে যান। সেই টাকা দিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে শুটিংয়ের প্রস্তুতি নেন। তবে বাজেট সংকটে ছবির শেয়ার বিক্রি করতে থাকেন যুবরাজ শামীম। কেউ শেয়ার কিনলে সেই টাকা দিয়ে শুটিং হতো। সব মিলিয়ে ৫০ জন ছবির শেয়ার কিনেছেন। তাদের মধ্যে পরিচিত কেবল মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এছাড়া বেশিরভাগই অপরিচিত।

কয়েকজন প্রবাসীর কাছ থেকে অর্থায়ন পাওয়া ছিল যুবরাজ শামীমের কাছে অবাক করার মতো। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। অর্থ জোগাড়ের পর ২০১৮ সালে শুরু হয় শুটিং। গল্পের প্রয়োজনেই স্থানীয় বস্তির বাসিন্দাদের দিয়ে অভিনয় করানো হয়েছে। শুটিং শুরুর আগে একমাস অনুশীলন করেন তারা। ‘আদিম’ ছবির প্রধান চরিত্র বাদশা। এছাড়া অভিনয় করেছেন সোহাগী, দুলাল মিয়া, সাদেকসহ অনেকে।

গত ২৬ আগস্ট শুরু হওয়া মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নেমেছে ২ সেপ্টেম্বর। সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে ইরানের বেহরুজ শোয়েইবি পরিচালিত ‘নো প্রায়োর অ্যাপয়েন্টমেন্ট’। এতে অনবদ্য নৈপুণ্যের সুবাদে সেরা অভিনেত্রী পুরস্কার জিতেছেন পেগা আহানগারানি। সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র শাখায়ও ইরানের জয়। ‘ব্রিজ’ ছবির মাধ্যমে এটি পেয়েছেন হামিদ রেজা গাসেমি।

‘দ্য ভয়েস ক্রাইং ইন দ্য ওয়াইল্ডারনেস’ দুর্দান্ত কাজ দেখিয়ে সেরা অভিনেতার পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছেন রোমানিয়ার কস্তেল কাসকাভাল। ‘দ্য বেহেডিং অব সেন্ট জন দ্য ব্যাপটিস্ট’ ছবির জন্য সেরা পরিচালক হয়েছেন সার্বিয়ার সিনিসা স্মেতিচ।

উৎসবের স্বাগতিক দেশ চারটি পুরস্কার পেয়েছে। এরমধ্যে সেরা চলচ্চিত্র (রাশিয়ান প্রিমিয়ারস কম্পিটিশন) শাখায় সেরা পিটার তোদোরভস্কি পরিচালিত ‘ইনটেনসিভ কেয়ার’। সেরা প্রামাণ্যচিত্র সের্গেই দেবিজেভের ‘দ্য হলি আর্কিপেলাগো’। স্পেশাল মেনশন পেয়েছে বরিস আকোপভের ‘কাথ’। বিশ্ব চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন সুরস্রষ্টা এদুয়ার্দ আর্তেমিয়েভ।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

6 − six =