আন্দোলনকারীদের ওপর ‘গরম জল’ ঢালার পরামর্শ দেন অরুণা বিশ্বাস

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন চলছিল, তখন শোবিজের অনেক শিল্পী ছাত্রদের সমর্থনে নেমেছিলেন রাজপথে। আরেক দল শিল্পী, যাঁরা আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত, তাঁরা গোপনে ছক কষছিলেন, কীভাবে এই আন্দোলন দমানো যায়।

‘আলো আসবেই’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এসব শিল্পী শেখ হাসিনার পক্ষে নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। সেই গ্রুপের কিছু স্ক্রিনশট ফাঁস হয়েছে ৩ সেপ্টেম্বর, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর লক্ষ্যে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং সংসদ সদস্য ফেরদৌসের নেতৃত্বে ‘আলো আসবেই’ নামের ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়, যাতে আওয়ামীপন্থী শিল্পী ও সাংবাদিকেরা যুক্ত ছিলেন। সেই গ্রুপের কয়েকটি স্ক্রিনশট ফাঁসের পর হতবাক সবাই!

‘আলো আসবেই’ নামে সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কয়েকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, জ্যোতিকা জ্যোতি ও সোহানা সাবা সেখানে বেশ সক্রিয়। ছাত্রদের আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান ছিল তাঁদের। তাঁরা মত দেন, যেভাবেই হোক, আন্দোলন থামাতে হবে। এর মধ্যে জ্যোতিকা জ্যোতির একটি তথ্যের জবাব দিতে গিয়ে অরুণা বিশ্বাস পরামর্শ দেন আন্দোলনকারীদের গায়ে ‘গরম জল’ ঢেলে দেওয়ার!

আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুক পোস্ট দেওয়ায় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সমালোচনাও করা হয় সেখানে।

এই গ্রুপে রয়েছেন— সোহানা সাবা, জ্যোতিকা জ্যোতি, অরুণা বিশ্বাস, ফেরদৌস ছাড়াও ছিলেন রিয়াজ আহমেদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভীন সুইটি, আশনা হাবীব ভাবনা, শামীমা তুষ্টি, জামশেদ শামীম, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, সাজু খাদেম, হৃদি হক, ফজলুর রহমান বাবু, দীপান্বিতা মার্টিন, সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, লিয়াকত আলী লাকী, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, রওনক হাসান, আহসানুল হক মিনু, গুলজার, এস এ হক অলীকসহ অনেকে।

এমন একটি গ্রুপ থাকার কথা স্বীকার করেছেন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন একটি গ্রুপ ছিল, এটা সত্যি। যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে, সেদিন এ বিষয়ে সেই গ্রুপে লিখেছিলাম। কারণ, সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরও যেতে দেওয়া হচ্ছিল না। আমার কাছে বিষয়টি খারাপ লেগেছে যে হাসপাতালে কীভাবে মানুষ আগুন দেয়? সেখানে তো আমার–আপনার পরিবারের সদস্যরাই জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসে। সেদিনও আমি কিন্তু ছাত্রদের দায়ী করিনি হাসপাতালে আগুন দেওয়ার ঘটনায়।’

অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘এটাও বলতে চাই, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে হয়তো আমরা অনেকে ছিলাম। কিন্তু সবার মনমানসিকতা এক না। শিক্ষার্থীদের ওপর গরম জল ঢেলে দেওয়ার যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা কারও প্রত্যাশিত বক্তব্য নয়। এটা অমানবিক। তবে অন্যের ভাবনা নিয়ে আমি তো কিছু বলার অধিকার রাখি না।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen + ten =