সালেক সুফী
শিরোপাধারী এবং বিশ্বকাপ ২০২৩ অন্যতম ফেভারিট দলকে কাল অপ্রত্যাশিতভাবে ৬৯ রানে হারিয়ে সেমি ফাইনালে ওঠার যুদ্ধ ময়দান উন্মুক্ত করে দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত এবং নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে কে সঙ্গী হবে সেই যুদ্ধে এখন শামিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান। অনেকে আবার বাংলাদেশকে নিয়েও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
আজ গুরুত্বপূর্ণ খেলায় শ্রীলংকার বিরুদ্ধে জয় দিয়ে জয়যাত্রা শুরু করলে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার দুয়ার খুলে যেতে পারে। দুটি দল প্রথম দুটি খেলায় পরাজিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া হেরেছে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। শ্রীলঙ্কা হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক পাট কামিন্স সঠিক বলেছে ওদের প্রতিটি খেলাই এখন ফাইনালের মত। পা ফসকালেই ঝরে পড়তে হবে।
উত্তর প্রদেশের লখনউর বিআরএসবিবি একানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য খেলাটি অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা উভয় দলের জন্য টিকে থাকার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দুটি দল প্রথম দুটি ম্যাচ হেরে খাদের প্রান্তে। আজ হেরে যাওয়া দলটির ঘুরে দাঁড়ানো দুরূহ হয়ে পড়বে।
অস্ট্রেলিয়ার মূল সংকট নড়বড়ে ব্যাটিং। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দুটি দলের বিরুদ্ধে ২০০ রান (ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৯ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৭৭) করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। অথচ এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়া আক্রমণকে তুলোধোনা করে ৩১১/৭ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আজ জয় পেতে হলে শ্রীলংকার বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ভালো ব্যাটিং করে ৩০০+ রান করতে হবে। শ্রীলংকা দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে গেলেও কিন্তু যথাক্রমে ৩২৬ এবং ৩৪৪ রান করেছে। ওদের ব্যাটসম্যানরা উড়ন্ত ফর্মে আছে। আজ যদি লংকান বোলারার ভালো বোলিং করে ওদের জয়ের সুযোগ আছে।
অস্ট্রেলিয়ার মূল সমস্যা ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভ স্মিথ বড় রান করতে ব্যর্থ হলে মিডল অর্ডার বা লেট্ অর্ডার ভেঙে পড়ছে। আজ মিচেল মার্শ, মার্নাস লেবুচাঙ্গ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এদের কাউকে দায়িত্ত নিয়ে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। এবারের অস্ট্রেলিয়া দল শুধু স্পিন খেলায় দুর্বল নয়, নিজেদের স্পিন বোলাররা সুবিধা আদায় করতে পারছে না।
শ্রীলংকা দলের মেধাবী স্পিনারদের খেলা হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ। আশা করি আজ ওয়ার্নার এবং স্মিথ দুজনের একজন লম্বা ইনিংস খেলে ব্যাটিং নেতৃত্ব দিবে। স্টার্ক, হেজেলউড বা কামি, জশ ইংলিশ কিন্তু এখনো নিজেদের সুনাম অনুযায়ী বোলিং করতে পারেনি। জানি বদলে যাওয়ার জন্য একটি জয় ভীষণ দরকার। সেটি আজ না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
অন্যদিকে শ্রীলংকার সমস্যা ভিন্ন। ওদের তরুণ এবং প্রবীণ ব্যাটসম্যানরা তুখোড় ফর্মে থাকলেও বোলাররা ভীষণ মার খাচ্ছে। না পারছে উইকেট নিতে, না পারছে রান বন্যা সামাল দিতে। ওদের আক্রমণের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা তিন তিনটি সেঞ্চুরি সহ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ স্কোর ৪২৮/৫ করেছে।
পাকিস্তান করেছে ৩৪৫/৪ সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড। কুশল মেন্ডিস, সাদীরা সমারাবিক্রমা, চরিথা আসালংকা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ভালো বাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতেও জ্বলে উঠতে হবে পথিরানা, রাজিথা, ওয়ালালাগে এবং ঠিকসনাকে।
ম্যাচটি কিন্তু সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে ১৯৯৬ লাহোর অস্ট্রেলীয়কে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছিল অর্জুনা রানাতুঙ্গার শ্রীলংকা। একইভাবে অস্ট্রেলিয়া ২০০৭ ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে শ্রীলংকাকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের হ্যাট্রিক করেছিল।
অস্ট্রেলিয়া: পাট কামিন্স ( অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, মার্নাস লেবুচাঙ্গ, জস ইংলিশ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্ট্যানিস, এডাম জাম্পা, মিচেল স্টার্ক এবং জোস্ হেজেলউড।
শ্রীলঙ্কা: দাসুন সানাকা (অধিনায়ক), পিথুন নিঃশঙ্কা, কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, চারিথ আসালংকা, সাদীরা সামারাবিক্রমা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দিনুথ ওয়ালালাগে, মহেশ ঠিকসানা, মাথিরা পাথিরানা এবং দিলশান মধুসকা।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক