আবৃতিশিল্পী হাসান আরিফের শেষকৃত সম্পন্ন

আবৃতিশিল্পী হাসান আরিফকে অশ্রুসজল বিদায় জানিয়েছে সংস্কুতিক কর্মীরা। আজ  শনিবার সকালে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের হিমঘর থেকে কফিন ধানমন্ডির বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার কফিন নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শোক মিছিলসহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। সেখানে জানাজা শেষে হাসান আরিফের শেষ ইচ্ছানুসারে তার দেহ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগে গবেষণার জন্য হস্তান্তর করা হয়।

গত শুক্রবার (১ এপ্রিল) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে হাসান আরিফ ৫৭ বছর বয়সে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। গত ডিসেম্বরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুস ও কিডনির নানা জটিলতা নিয়ে দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

শহীদ মিনারে হাসান আরিফের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফকে অশ্রুসজল নয়নে ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, সংস্কৃতজনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শনিবার বেলা ১১টায় কফিনবন্দি হয়ে শেষবারের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসেন হাসান আরিফ। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে শহীদ মিনারে বহু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের শেষ বিদায়ের আয়োজনে অগ্রভাগে ছিলেন হাসান আরিফ। সেই শহীদ মিনার এবার হল তারই বিদায়ের মঞ্চ। আর তা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার সহযোগী সংস্কৃতিকর্মীরা।

শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মাঝে হাসান আরিফের আবৃত্তি বাজানো হয়েছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রবীন্দ্রসংগীত ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ পরিবেশন করেছেন শিল্পী ফারহিন খান জয়িতা।

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণজাগরণ মঞ্চসহ দেশের গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন হাসান আরিফ। হাসান আরিফকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষকরা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ আরও অনেকে।

হাসান আরিফের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জাসদ, সংস্কৃ‌তি মন্ত্রণালয়, কণ্ঠশীলন, সাংস্কৃ‌তিক সংগঠন ব‌হ্নি‌শিখা, স্বনন, ঋ‌ষিজ, মহাকাল নাট্য সম্প্রচায়, বাংলাদেশ পু‌লিশ থিয়েটার, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, উদীচী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃ‌তিক জোট, বাংলা‌দেশ ওয়ার্কার্স পা‌র্টি, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ পরিষদ, কমিউনিস্ট পার্টিসহ আরও অনেক সংগঠন।

জানাজা

হিমঘর থেকে হাসান আরিফের মরদেহ তার ধানমন্ডির বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

শহীদ মিনারে দুপুর ১টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে শোকর‌্যালির মাধ্যমে মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা হয়।

মরণোত্তর দেহ দান

সদ্য প্রয়াত আবৃত্তিশিল্পী, সংগঠক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বিএসএমএমইউ) মরণোত্তর দেহ দান করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে প্রয়াত এ শিল্পীর দেহ গ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

শনিবার (২ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেহ দানের প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

হাসান আরিফের বোন রাবেয়া রওশন তুলি এ সময় বলেন, আমি বোন হিসেবে, আইনগতভাবে অনেক বছর ধরে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত। ওর দেহ সঠিকভাবে, সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে সবাই সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমি ও আমার পরিবার কৃতজ্ঞ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসান আরিফ জীবিত থাকা অবস্থায় দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মৃত্যুর পরও তার দেহের মাধ্যমে দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করব। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যে সেবা দেবেন তা তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তার এ অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।

ভবিষ্যতেও এ মহৎ কাজে যারা আগ্রহী হবেন তাদেরকে এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবেন বলেও জানান উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

দেহদান সংক্রান্ত কার্যক্রম সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

seventeen + five =