আবৃত্তিশিল্পী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১ এপ্রিল) ১টা ৫০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস জানান।
২০২১ সালের ডিসেম্বরের শুরু থেকে প্রায় ৪ মাস আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন হাসান আরিফ। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ডিসেম্বর থেকে তিনি অসুস্থ ছিলেন। এরপর আর তার শরীরের উন্নতি ঘটেনি। অবশেষে আজ তো চলেই গেলেন।’
গত বছরের ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল হাসান আরিফকে। লম্বা সময় ধরে চলা চিকিৎসায় শরীরে অক্সিজেন জটিলতার কারণে বেশ কয়েকবারই তার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়। সেখান থেকে তার আর বাসায় ফেরা হয়নি।
এই আবৃত্তিশিল্পীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
আবৃতিশিল্পী হাসান আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে রঙবেরঙ এবং এনার্জি এন্ড পাওয়ার পত্রিকা পরিবার।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, হাসপাতালেই মরদেহের গোসল করানো হয়েছে। রাতে হিমঘরে রাখা হবে মরদেহ। কাল সকাল ৯টায় কফিন লালমাটিয়ার বাসায় নেওয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে বেলা বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে মরদেহ।
বাচ্চু জানান, হাসান আরিফ মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন। শহীদ মিনার থেকে তার কফিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হবে। সেখানে আরেক দফা জানাজা শেষে নেওয়া হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেলা ৩টায় সেখানে মরদেহ হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা সারা হবে।
হাসান আরিফ কুমিল্লা জেলায় ১৯৬৫ সালে ৮ ডিসেম্বর নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম রওশন আরা। বাবা প্রয়াত আবুল ফজল মো. ফজজুল হক। তিনি ছিলেন গণিতের শিক্ষক এবং গণিতবিদ।
১৯৮৩ সালে স্বরিত আবৃত্তিচক্র নামে একটি সংগঠন চালু করেন হাসান আরিফ। এর মাধ্যমে সংগঠনভিত্তিক আবৃত্তি চর্চার শুরুর দিকে আবৃত্তির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এছাড়া, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
আবৃতিশিল্পী হাসান আরিফ বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দীর্ঘদিন ধরে দেশের সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চা ও প্রশিক্ষণে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।