আমাজনে বসছে সবচেয়ে কঠিন জলবায়ু সম্মেলন

এশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি সমৃদ্ধ দেশ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গত বছর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে তেল ও জ্বালানির গন্ধ ছিল। খবর বাসস

ব্রাজিলের বেলেম এলাকার আমাজন বনে ৫০ হাজার অংশগ্রহণকারীকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র বাতাসের মুখোমুখি হতে হবে। যেখানে তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সহযোগিতাকে টিকিয়ে রাখার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো।

প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা হোটেল কক্ষের সংকট সত্ত্বেও এই সম্মেলন বেলেম এলাকায় আয়োজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তার লক্ষ্য আমাজন বনই যাতে সম্মেলনে যোগ দেওয়া আলোচক, পর্যবেক্ষক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের চোখ খুলে দেয়। এটি এমন এক শহর, যেখানে স্থানীয়রা সকালে রোদ ও বিকেলে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ছাতা বহন করে।

গত আগস্টে লুলা বলেন, কপ-সম্মেলন ধনী দেশে আয়োজন করা সহজ হত। কিন্তু আমরা চাই মানুষ বন, নদী এবং সেখানে বসবাসরত মানুষের বাস্তব অবস্থা দেখুক।

আমাজন বন হাজার বছর ধরে গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এই বন এখন নিজেই নানা সমস্যায় আক্রান্ত। এর মধ্যে অবৈধ বন নিধন, খনন, দূষণ, মাদক ব্যবসা ও আদিবাসীদের নানা অধিকার লঙ্ঘন অন্যতম।

ব্রাজিলীয়ানরা গত এক বছর ধরে কূটনৈতিক তৎপরতায় সক্রিয় থাকলেও, লজিস্টিকের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এখনও অনেক প্রদর্শনী প্যাভিলিয়ন নির্মাণাধীন রয়েছে।জাতিসংঘের এক সূত্র এএফপিকে জানান, ‘লজিস্টিকের দিক থেকে সব ঠিক সময় মতো হবে কি না তা নিয়ে বড় উদ্বেগ আছে। সংযোগ, মাইক্রোফোন, এমনকি খাবারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েও আমরা চিন্তিত।

সত্যিকারের অনিশ্চয়তা হল, আগামী দুই সপ্তাহে আসলেই কী আলোচনা হবে? সাম্প্রতিক ভয়াবহ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্ব কি একজোট হতে পারবে? ধনী দেশ আর উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব কীভাবে এড়ানো যাবে? সাইক্লোন ও খরায় আক্রান্ত দেশগুলোকে সহায়তার অর্থ কোথা থেকে আসবে? উদাহরণ হিসেবে অক্টোবরে শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী হ্যারিকেনে বিধ্বস্ত জ্যামাইকা এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে দু’টি প্রাণঘাতী টাইফুনে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিপাইনের কথা বলা হয়।

লুলা সম্প্রতি বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি ‘রোডম্যাপ’ উপস্থাপন করেছেন। তবে এটি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তা এখনও অনিশ্চিত। ২০২৩ সালে দুবাইয়ে বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে জীবাশ্ম জ্বালানি কমানোর পথে এগোবে বলে সম্মত হয়, তখন থেকেই তেল উৎপাদনকারী এবং তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো সতর্ক ও সক্রিয় রয়েছে।

কপ-৩০ সম্মেলনের ব্রাজিলের সভাপতি আন্দ্রে অরানহা কোরেয়া দো লাগো বলেছেন, ‘আমরা কীভাবে করব? আদো কি ঐকমত্য হবে? এটি এই সম্মেলনের অন্যতম বড় রহস্য।

ট্রাম্প নেই

১৯৯২ সালের রিও ডি জেনেরিও আর্থ সামিটে গৃহীত জাতিসংঘের জলবায়ু ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী, বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে কনভেনশনের সদস্য দেশগুলো ৩০ বছর ধরে প্রতি বছর মিলিত হচ্ছে।

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি এই প্রচেষ্টারই ফল। এর মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির নিচে রাখার কথাও বলা হয়। এই প্রক্রিয়াটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও চালু ছিল।

কিন্তু জাতিসংঘ মহাপরিচালক আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি স্বীকার করেন যে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সীমা শিগগিরই ছাড়িয়ে যাবে। তবে সেটিকে যত দ্রুত সম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানান তিনি।

এটার মানে হলো, অবশেষে বিশ্বের তেল, গ্যাস ও কয়লা পোড়ানোর কারণে হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হবে।

ছোট দ্বীপ দেশগুলোর একটি গ্রুপ বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সীমা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার ব্যর্থতাকে অফিসিয়াল এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানিয়ে আসছে।

কপ-এর কম উন্নত দেশ ব্লকের উপদেষ্টা মঞ্জীত ধকাল এএফপিকে বলেন, ‘১ দশমিক ৫ ডিগ্রি শুধু একটি সংখ্যা বা লক্ষ্য নয়, এটি জীবনরক্ষার একটি লাইন। আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্তের অংশ হতে পারি না যেখানে ১.৫ ডিগ্রি অর্জন সম্ভব নয় বলে আলোচনা হবে।

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে প্রথমবারের মত অনুপস্থিত ছিল।

তবে ট্রাম্প কপ-৩০ কেপুরোপুরি উপেক্ষা করেননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত একটি রিপোর্টে দেখেছেন বেলেমে নতুন রাস্তার জন্য গাছ কাটা হচ্ছে। এটিকে ‘স্ক্যান্ডাল’ হিসেবে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × 2 =