আহত বাঘের সিংহ শিকার

সালেক সুফী: মীরপুর শেরে বাংলায় নিজেদের অভয়ারণ্যে পর পর দুই পরাজয়ে আহত বেঙ্গল টাইগার্স মরিয়া হয়ে সাগরিকার সাগর তীরে সিংহ শিকার করলো। ধবল ধোলাই এড়ানোর ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৫০ রানে ম্যাচ জয় করে বাংলাদেশ আবারো প্রমাণ করলো নিজেদের দিনে ওরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্সদের মাটিতে নামাতে পারে।

সিরিজের ফলাফল যুদ্ধ করেও বাংলাদেশ ১-২ সিরিজ হেরেছে। ৭ বছর পর দেশের মাটিতে সিরিজ পরাজয়। কাকতালীয়ভাবে সেই ইংল্যান্ড দলের বিরুদ্ধে ১-২ মার্জিনে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছিল ৩ উইকেটে, দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ড বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছিলো ১৩২ রানের বিশাল ব্যাবধানে। শেষ ম্যাচ জয় বাংলাদেশের ওডিআই ফরম্যাটে ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলো।

প্রথম ব্যাটিং করে বাংলাদেশ সাকিব (৭৫) , মুশফিক (৭০) ,শান্ত (৫৩) তিন অর্ধশতকের কল্যাণে ২৪৬ করেছিল। শুষ্ক, ঘূর্ণি  উইকেটে সাকিব (৪/৩৫), তাইজুল (২/৫২) আর এবাদত (২/৩৮) কোণঠাসা করে ইংল্যান্ডকে গুটিয়ে দিয়েছিলো ১৯৬ রানে। ফলাফল ৫০ রানে স্বস্তিদায়ক জয়।

তাসকিনকে বিশ্রাম দিয়ে ইবাদাতকে আনার সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড পক্ষান্তরে রেহান আহমেদ নামের ১৮ বছর বয়সী তরুণকে ওডিআই ক্যাপ উপহার দিয়ে ওদের তরুণতম খেলোয়াড় মাইলফলক গড়লো। এই ম্যাচে সাকিব মাহমুদের জায়গায় ফিরে এসেছিলো জোফরা  আর্চার।

বাংলাদেশ টস জয়ী হয়ে ব্যাটিং নিলো। সূচনাটা শুভ হয়নি। স্যাম কুরানের প্রথম স্পেলে লিটন, তামিম সহসাই বিদায় নিলে আবারো ব্যাটিং ধসের।  নিজেদের পছন্দের উইকেটে মানিয়ে নিয়ে শান্ত, মুশফিক সাচ্ছন্দে খেলে তৃতীয় উইকেটে ৯৮ রান জুড়ে দিলো। শান্ত ৫৩ রান করে নিজের ভুলে রান আউট না হলে পার্টনারশিপ সম্প্রসারিত হতে পারতো।

যাহোক সাকিব উইকেটে আসার পরেও রানের গতি সচল ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্বলতা লেগ স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে। আদিল রাশিদ আক্রমণে এসেই ফেরালো ভালো খেলতে থাকা মুশফিককে (৭৫)। ওর গুগলি  বলটি বুঝতে ভুল করে ৭৫ রানের মাথায় সরাসরি বোল্ড হলো মুশফিক। মাহমুদল্লাহ রশিদের সোজা বলটি ক্রস বাটে খেলে উইকেট হারালো।

 

সৌভাগ্য বাংলাদেশের সাকিব এই দিন নিজ মূর্তিতে সক্রিয় থেকে ৭৫ রান করে দলের স্কোর ২৪৬ নিয়ে যায়। ধীর গতির উইকেটে এটি ছিল ম্যাচ জয়ী সংগ্রহ। যদিও ইনিংস ব্রেকের সময় সংগ্রহ ২০-২৫ কম মনে হয়েছিল।

ইংল্যান্ড দলের ইনিংসে নির্দিষ্ট বিরতিতে আঘাত হেনেছে সাকিব, এবাদত, তাইজুল।  জেমস ভিন্স (৩৮), ফিল সল্ট (৩৫), ক্রিস ওকস (৩৪), জোস্ বাটলার (২৪), স্যাম কুরান (২৬) ভালো সূচনা করেও দলকে জয়ের বন্দরে ভেড়াতে পারেনি। এই প্রথম সিরিজে ইংল্যান্ড উপমহাদেশীয় উইকেটে ওদের চ্যালেঞ্জ উপলব্ধি করলো।

সাকিব (৪/৩৫) বিচক্ষণতার সঙ্গে ওর নিখুঁত লাইন, লেংথ বজায় রেখে আর আর্মার অস্ত্র ব্যবহার করে জয় ছিনিয়ে নেওয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছে। সঙ্গে জয় করেছে ম্যান অফ দি ম্যাচ। একই সঙ্গে পৌঁছে গেছে ৩০০ ওডিআই উইকেটের মাইল ফলকে।

এই জয় বাংলাদেশকে ভীষণ স্বস্তি দিয়েছে। সিরিজ ধবল ধোলাই রক্ষা সঙ্গে নিজেদের  ফিরে পাওয়া। সিরিজ থেকে অনেক কিছুই শিখার আছে। তিন ম্যাচের কোনোটিতেই বাংলাদেশ ৫০ ওভার খেলতে পারেনি। তামিম, রিয়াদের ব্যাটে মরচে ধরেছে। লিটন নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছে। আফিফ, মেহেদী ব্যাট হাতে বার্থ। বাংলাদেশ লেগ স্পিন খেলায় আনাড়ি।  হয়তো এগুলো হাতুরাসিংহের নজর এড়ায়নি।

৯ তারিখ শুরু হওয়া টি২০ মিশনে তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ থাকবে না। তরুন দল নিয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে লড়তে হবে সাকিব বাহিনীকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

one × five =