ইউরোপা লিগের সপ্তম শিরোপা জয় করলো সেভিয়া

রোমাকে টাই ব্রেকারে ৪-১ গোলে পরাজিত করে ইউরোপা লিগে নিজেদের শিরোপার ধারাবাহিকতা ধরে রাখলো সেভিয়া। এ নিয়ে সাতবারের ফাইনালে কোন প্রতিপক্ষই সেভিয়াকে হারাতে পারেনি। বুদাপেস্টের পুসকাস এরেনায় নির্ধারিত সময়ের ম্যাচটি ১-১ গোলে শেষ হয়। পাওলো দিবালার গোলে রোমা প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল। ৫৫ মিনিটে রোমা ডিফেন্ডার গিয়ানলুকা মানচিনির আত্মঘাতি গোলে সেভিয়া সমতায় ফিরে। এরপর ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়। কিন্তু সেখানেও কোন গোল না হওয়া ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারনে টাই ব্রেকারের প্রয়োজন হয়। সেভিয়া গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনু দুটি শট রক্ষা করে ম্যাচের নায়ক বনে যান।

২০২২ বিশ্বকাপ ফাইনালে পেনাল্টিতে জয়সূচক গোলটি করা আর্জেন্টাইন গঞ্জালো মনটিয়েল কালও শিরোপা নির্ধারনী শটটি নিয়েছেন। রোমার পক্ষে পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মানচিনি ও রজার ইবানেজ।

৬২ বছর বয়সী কোচ হোসে লুইস মেনডিলিবারের অধীনে বদলে যাওয়া সেভিয়ার জন্য এই শিরোপা ছিল এক অনন্য অর্জন। মার্চে মেন্ডিবিলিয়ার সেভিয়ার দায়িত্ব নেন। দুই মাসেই বড় শিরোপা স্বাদ নিয়ে নিজেকে প্রমান করেছেন এই স্প্যানিশ কোচ।

যদিও আগামী মৌসুমে সেভিয়াতে তার থাকা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কাল ম্যাচ শেষে মেন্ডিবিলিয়ার বলেছেন, ‘আমরা এখন এই শিরোপা জয় উদযাপন করবো। কারন এর পিছনে অনেক শ্রম রয়েছে। আমি এখনো জানিনা চুক্তি নবায়ন করবো কিনা, এনিয়ে চিন্তা করছি না।’

অভিজ্ঞ এই কোচের অধীনে লা লিগায় সেভিয়া রেলিগেশন এড়িয়েছে। আর এখন ইউরোপীয়ান শিরোপা ঘরে তুলেছে। মেন্ডিবিলিয়ার আরো বলেছেন, ‘আমি যখন এই ক্লাবে আসি তখন খেলোয়াড়দের বলেছিলাম তারা সবাই অত্যন্ত ভাল মানের খেলোয়াড়। কিন্তু মানসিকভাবে তাদের সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে হবে। আমার দায়িত্ব ছিল সেই জায়গায় তাদের সহযোগিতা করা। দিনের শেষে তারা প্রমান করেছেন আসলেই তারা ভাল খেলোয়াড়।’

এদিকে ফাইনালে পরাজয়টা ছিল রোমা বস হোসে মরিনহোর জন্য সত্যিই হতাশার। পাঁচটি সফল ইউরোপীয়ান ফাইনালে শেষে এই প্রথম মরিনহো হারের তিক্ত স্বাদ পেলেন। ৩৪ মিনিটে গোল করে মরিনহোর আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দিবালা। মানচিনির থ্রু বলে ঠান্ডা মাথায় তিনি বুনুকে পরাস্ত করেন। সেভিয়া অবশ্য পিছিয়ে পড়ে নার্ভাস হয়ে পড়েনি । বেশ কিছু কাউন্টার এ্যাটাকে তারা সমতায় ফেরার চেষ্টা করেছে। ইভান রাকিটিচের বা পায়ের জোড়ালো শট কোনমতে আটকে দেন রোমা গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও।

বিরতির পর  অলিভার তোরেস ও ব্রায়ান গিলের স্থানে সুসো ও এরিক লামেলাকে মাঠে নামান কোচ । স্প্যানিশ দলটি দ্বিতীয়ার্ধে আগ্রাসী হয়ে মাঠে নামে। ১০ মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফিরে সেভিয়া। ডানদিক থেকে জেসুস নাভাসের ক্রসে পোস্টের খুব কাছ থেকে মানচিনির আত্মঘাতি গোলে রোমার কপাল পুড়ে। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে রোমা আবারো এগিয়ে যাবার বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সেভিয়া ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় তা সম্ভব হয়নি।

মধ্য-এপ্রিলের পর থেকে প্রথমবারের মত মূল একাদশে খেলার সুযোগ পান দিবালা। ৬৮ মিনিটে তার স্থানে মাঠেন নামেন জর্জিনিও উইজনালডাম। ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে সেভিয়াকে পেনাল্টি উপহার দেন রেফারি এন্থনি টেইলর। লুকাস ওকাম্পোসকে ফাউলের অপরাধে ইবানেজের বিরুদ্ধে এই পেনাল্টির নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভিএআর সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। বদলী খেলোয়াড় আন্দ্রে বেলোত্তি গোলরক্ষককে একা পেয়েও ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি রোমার।

অতিরিক্ত সময়ে দুই দল তেমন কোন সুযোগ তৈরী করতে পারেনি। ডিফেন্ডার ক্রিস স্মলিংয়ের শট পোস্টে লাগলে আবারো হতাশ হতে হয় রোমাকে। পুরো ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে ১৩টি হলুদ কার্ড পেয়েছে যা উয়েফা ইউরোপা লিগের কোন ম্যাচে সর্বোচ্চ।

প্রথম তিনটি স্পট কিক সফল হবার পর বুনো যখন মানচিনির শট রুখে দেন ও পরের শটে ইবানেজ পোস্টে লাগান তখন সেভিয়া রাকিটিচের গোলে ৩-১ ব্যবধানের লিড নেয়। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি ছিল। মন্টিয়েলের শট প্যাট্রিসিও প্রথম প্রচেষ্টায় রুকে দেন। কিন্তু গোলরক্ষকের ভুলে শটটি আবারো নেবার নির্দেশ দিলে এবার আর কোন ভুল করেননি মন্টিয়েল।

বর্তমানে লা লিগায় ১১তম স্থানে রয়েছে সেভিয়া। মৌসুম শেষ হতে আর মাত্র এক ম্যাচ বাকি। অন্যদিকে ইতালিয়ান ক্লাব রোমা সিরি-এ লিগে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। তাদেরও হাতে আর এক ম্যাচ বাকি রয়েছে।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 + 15 =