ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমার হালচাল

২০০৯ সালের পর এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সর্বোচ্চসংখ্যক ১১টি সিনেমা। সিনেমাগুলো হলো ‘রাজকুমার’, ‘কাজলরেখা’, ‘ওমর’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘মেঘনা কন্যা’, ‘গ্রীন কার্ড’, ‘আহারে জীবন’, ‘লিপস্টিক’, ‘সোনার চর’, ‘মোনা: জ্বীন ২’ ও ‘মায়া: দ্য লাভ’। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর হালচাল নিয়ে এই প্রতিবেদন।

এগিয়ে রাজকুমার ওমর

ঈদ এলেই আলোচনার কেন্দ্রে থাকে শাকিব খানের সিনেমা। হলমালিকেরাও শাকিবের সিনেমা প্রদর্শনের অপেক্ষায় দিন গোনেন। এবারও সর্বাধিক ১২৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘রাজকুমার’। সিঙ্গেল স্ক্রিনের পাশাপাশি মাল্টিপ্লেক্সেও দর্শক টানছে হিমেল আশরাফ পরিচালিত সিনেমাটি। দর্শক চাহিদায় দ্বিতীয় দিন থেকে স্টার সিনেপ্লেক্সে শো বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজকুমারের। গত ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘প্রিয়তমা’র মতো হাইপ তুলতে না পারলেও শাকিব খানের অভিনয় ও হিমেল আশরাফের নির্মাণ নতুন করে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষই বলছেন, প্রিয়তমার চেয়ে রাজকুমার সিনেমার নির্মাণ গোছানো ও পরিকল্পিত মনে হয়েছে। শাকিবের অভিনয় মন ছুঁয়েছে ভক্তদের।

রাজকুমারের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক ২১টি হলে মুক্তি পেয়েছে মোস্তফা কামাল রাজের সিনেমা ‘ওমর’। মাল্টিপ্লেক্সের পাশাপাশি সিঙ্গেল স্ক্রিনেও প্রশংসা কুড়াচ্ছে শরিফুল রাজ অভিনীত সিনেমাটি।

এদিকে মুক্তির প্রথম দিন থেকে স্টার সিনেপ্লেক্সে সবচেয়ে বেশি শো পেয়েছিল শরিফুল রাজের আরেক সিনেমা ‘দেয়ালের দেশ’। তবে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি সিনেমাটি। মন্থর চিত্রনাট্য ও নকলের অভিযোগে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দেয়ালের দেশ। এক সপ্তাহ শেষ না হতেই শো কমে গেছে সিনেমাটির। তবে মিশুক মনি পরিচালিত সরকারি অনুদানের এ সিনেমায় রাজ ও বুবলীর অভিনয় প্রশংসা কুড়াচ্ছে দর্শকের।

সিনেপ্লেক্স থেকে নেমে গেছে তিন সিনেমা

শাকিবে দখলে বেশির ভাগ সিঙ্গেল স্ক্রিন চলে যাওয়ায় বাকি সিনেমার নির্মাতাদের নজর ছিল সিনেপ্লেক্সের দিকে। সেখানেও হতাশ করছে বেশিরভাগ সিনেমা। এক সপ্তাহ না পেরোতেই স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে ছটকু আহমেদের ‘আহারে জীবন’, কাজী হায়াতের ‘গ্রীন কার্ড’ ও ফুয়াদ চৌধুরীর ‘মেঘনা কন্যা’। ঈদের ১১ সিনেমার মধ্যে ‘মায়া’ ছাড়া বাকি দশটি সিনেমা চলছে লায়ন সিনেমাসে। সিনেমার নাম উল্লেখ না করলেও হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজকুমারসহ তিনটি সিনেমা ভালো চলছে। তিনটি সিনেমার দর্শক এভারেজ। বাকি সিনেমার দর্শকই পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় একই পরিস্থিতি যমুনা ব্লকবাস্টারে। তবে এই সিনেপ্লেক্স থেকে এরই মধ্যে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে আহারে জীবন ও গ্রিন কার্ড।

হল নিয়ে পলিটিকসের অভিযোগ

হল-সংকটের এই সময়ে এত সিনেমা মুক্তি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছিলেন সিনেমা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সেই শঙ্কাই সত্যি হয়েছে। বেশির ভাগ সিনেমাই হলের সংখ্যা ১০ ছুঁতে পারেনি। হল না পেয়ে অনেক নির্মাতা-প্রযোজক অভিযোগ করছেন, তাঁরা পলিটিকসের শিকার হয়েছেন। প্রত্যাশিত হল না পেয়ে ঈদের দুদিন আগে ‘লিপস্টিক’ সিনেমার নায়ক ও প্রযোজক আদর আজাদ এক ভিডিওতে দাবি করেন, আলোচনায় থাকলেও একটি চক্রের কারণে তাঁর সিনেমাটি বেশি হল পায়নি। ঈদের চার-পাঁচ দিন আগেও তিনি আরও যে সব হলের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন, সেই হলগুলোর মালিকেরাও পিছিয়ে গেছেন। আদর জানান, লিপস্টিক সিনেমায় নিজের সব টাকা লগ্নি করেছেন। নিজের গাড়ি বিক্রি করেছেন, এমনকি মায়ের জমানো টাকাও খরচ করেছেন। হল না পাওয়ার কারণ হিসেবে অপরাজনীতিকে দুষছেন এই নায়ক। অভিযোগ করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়তেও দেখা গেছে তাঁকে।

অন্যদিকে, ‘মায়া’ সিনেমার প্রযোজক আলীনুর আসিক ভূঁইয়াও ফিল্ম পলিটিকসের শিকার হয়েছেন বলে জানান। তাঁর দাবি, মায়া সিনেমার গল্প, নির্মাণ ও অভিনয়শিল্পীরা পরিচিত হলেও অদৃশ্য এক শক্তির কারণে হল পায়নি সিনেমাটি। এমনকি সিনেপ্লেক্সগুলোতেও মায়া সিনেমার পর্যাপ্ত শো দেওয়া হয়নি।

 শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ায় সিনেমা

এক মাস আগে থেকেই ঈদে সিনেমা মুক্তি দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছিলেন নির্মাতা-প্রযোজকেরা। মুক্তির তালিকায় ছিল ১৩টি সিনেমা। হলের সংখ্যা কম থাকায় এত সিনেমা কোথায় চলবে, তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবু মুক্তির সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন নির্মাতা-প্রযোজকেরা। নিজেদের মতো করে চালিয়ে গেছেন প্রচার। তবে শেষ মুহূর্তে এসে ঈদের সিনেমার তালিকা থেকে সরে দাঁড়ায় মোহাম্মদ ইকবালের ‘ডেডবডি’ ও আহমেদ হুমায়ুনের ‘পটু’। আগামী ৩ মে মুক্তি পাবে ডেডবডি। তবে পটু মুক্তির নতুন তারিখ জানানো হয়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 − 5 =