উল্টো স্রোতে গা ভাসিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দাপুটে সিরিজ জয় বাংলাদেশের

সালেক সুফী

কাল ১০ অক্টোবর ছিল আমাদের নাতি আব্দুল্লাহ জোহায়ের জন্মদিন। দিনটি ছিল ক্রিকেটময়। রাওয়ালপিন্ডিতে টেস্ট ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা দারুন ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ১-১ সিরিজ সমতা অর্জন করলো। অস্ট্রেলিয়া শক্তিশালী ভারতকে এডিলেড ওভালে হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের পর ২ উইকেটে জয়ী হয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ সিরিজ জিতে নিলো। বাঁচো অথবা মরো ম্যাচে জিতে ভারতের মেয়ে ক্রিকেট দল নিউজিলান্ড মেয়েদের হারিয়ে সেমি ফাইনালে উঠলো। বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিপর্যস্ত করে ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় করলো।

স্পিন বিষাক্ত কালো মাটির উইকেটে ব্যাতিক্রমী ব্যাটিং করে ভুলতে বসা ওডিআই সিরিজ জয়ের নায়ক সৌম্য সরকার আর সাইফ হাসান কাল তিন ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণী শেষ ম্যাচটিতে মীরপুর শের এ বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ঘূর্ণি উইকেটে চার ছক্কার সুনামী সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশের ওপেনার জুটি। যে উইকেটে সাচ্ছন্দে ব্যাটিং করতে ব্যার্থ সফরকারী দল ওয়েস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ সবাই মিলে ৩০.১ ওভার ব্যাটিং করে ১১৭ রানেই গুটিয়ে গেছে সেখানেই সাইফ – সৌম্য ব্যাটিং তান্ডবে যুক্ত হয়েছিল ১৭৬ রান। যে উইকেটে টিকে থাকাই দায় সেখানেই এই জুটি দুজনে মিলে ১০ ছক্কা আর ১৩ চারের নক্ষত্রখচিত ইনিংসে ৮০ আর ৯১।  আর সেই জোয়ারে ভেসে ইনিংস শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ৮ উইকেটে ২৯৬। কালো মাটির উইকেট কিন্তু চরিত্র পাল্টায়নি। রিশাদ, নাসুম, মিরাজদের ঘূর্ণিতে বিপর্যস্ত হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস গুটিয়ে গেলো ১১৭ রানে। ১৭৯ রানের বিশাল জয়ে ২-১ সিরিজ জিতে বাংলাদেশ ফিরে গেলো ওডিআই ক্রিকেটে জয়ের পরিক্রমায়। সবার স্মরণে আছে একই মাঠে একই উইকেটে প্রথম ম্যাচে হেসে খেলে ৭৪ রানের বিশাল জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ স্পিনার খেলিয়ে নাটকীয় ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো অতিথি দল ম্যাচ টাই করে সুপার ওভারে বাংলাদেশের কৌশলগত ভুলের কারণে ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা এনেছিল। কাল বিশাল জয়ে বাংলাদেশ সিরিজ জয় করে সরাসরি ২০২৭ বিশ্ব কাপ খেলার স্বপ্ন যেমন বাঁচিয়েছে ঠিক তেমনি ফিকে হয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনা। এক সময়ের দুরন্ত দুর্বার সৌম্য সরকার দ্যুতিময় ব্যাটিং করে কাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ছিল। আর তরুণ সাইফ হাসান একই ধারার দানবীয় ব্যাটিং করে বিবেচিত হয়েছে সিরিজ সেরা।


২৫.২ ওভার একসঙ্গে থেকে ১৭৬ রানের ওপেনিং জুটি গড়েছেন সাইফ-সৌম্য, যা শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি। অবশ্য ২০২০ সালে তামিম ইকবাল-লিটন দাসের ২৯২ রানের পর ওয়ানডেতেই আজকের ১৭৬ এখন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি। ২০১৮ সালের জানুয়ারির পর ওয়ানডেতে মিরপুরে বাংলাদেশের প্রথম ৫০ ছোঁয়া উদ্বোধনী জুটিও। আর দলীয় সংগ্রহ ২৯৬ গত সাত বছরের মধ্যে মিরপুরের মাঠে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
মিরপুর ঘাতক উইকেট নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। কালো সূচনা থেকেই উইকেটে বাড়তি ঘূর্ণি ছিল। কিন্তু এমন উইকেটে খুনে মেজাজে ব্যাটিং করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভড়কে দিবে সৌম, সাইফ ছিল কল্পনার বাইরে। ক্রিকেট এমনি খেলা। প্রথম ম্যাচে উইকেটের ধরণ দেখে দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে কোন পেসার ছিলনা। বাংলাদেশ  দলে একমাত্র পেসার ছিলেন শুধু মোস্তাফিজুর রহমান। পুরো ৫০ ওভার স্পিনারদের দিয়ে করিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মোস্তাফিজের ৮ ওভার বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ৪২ ওভারসহ সে ম্যাচে ৯২ ওভার স্পিনারদের করাটাও বিশ্ব রেকর্ড। তৃতীয় ম্যাচটিতেও দুই দল অপরিবর্তিত ছিল। খেলা হয়েছে প্রথম ম্যাচের উইকেটে। উইকেটের চরিত্র বদলায়নি। শুধু বদলে গাছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। বহুদিন পর সৌম্য নিজের মত করে ব্যাটিং করলো। ৮৬ বলে ৭ চার আর চার ছক্কার ইনিংস দেখে অনেকের আফসোস হয়েছে এই সৌম্য কেন ধারাবাহিক হতে পারেনা। বিকশিত হতে থাকা তরুণ সাইফ হাসান সৌম্যর সঙ্গে সমান তালে ব্যাটিং ঝড় তুলে ৭২ বলে ছয় চার আর ছয় ছক্কায় কাল করেছে ৮০। দুইজনের অন্তত একজন শতরান করে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশ কাল ৩৫০ করলেও অবাক হতাম না। কিন্তু সাইফ, সৌম্য আউট হবার পর কঠিন উইকেটে রানের গতি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ইনিংস শেষ হয় ৮ উইকেটে ২৯৬ রানে।
বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বাংলাদেশের চতুর্মুখি স্পিন আক্রমণের মুখে দাঁড়াতেই পারেনি। নাসুম (৩/১১), রিশাদ (৩/৫৪), তানভীর (২/১৬), মেহেদী মিরাজ (২/৩৫) ধসিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১১৭ রানে। মুস্তাফিজকে বোলিং করতে হয়নি।
বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে ২-১। কৌশলের ভুল না হলে হতে পারতো ৩-০। যাহোক ফিরে তাকিয়ে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ অবশ্যই ঘরের মাঠে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে টেকসই উন্নয়নে মনোযোগ দিবে।
ওডিআই সিরিজ শেষ। অভিনন্দন বাংলাদেশকে। এবার টি ২০ সিরিজের পালা। ওডিআই সিরিজে জয়ের ধারায় ফেরা বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ কিন্তু শেষ হয়নি।

ম্যাচ সার-সংক্ষেপ
বাংলাদেশ ২৯৬/৮ (সৌম্য সরকার ৯১, সাইফ হাসান ৮০, নাজমুল হাসান শান্ত ৪৪, তাওহীদ হৃদয় ২৮, আকিল হুসেন ৪/৪১. আলিক এখানেজ ২/৩৭)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩০.১ ওভারে ১১৭ অল আউট (আকিল হুসেন ২৭, ব্রেন্ডন কিং ১৮, নাসুম আহমেদ ৩/১৮, রিশাদ হোসেন ৩/৫৪, ইসলাম ২/১৬, মেহেদী মিরাজ ২/৩৫।
বাংলাদেশ ১৭৯ রানে জয়ী।
বাংলাদেশ ২-১ সিরিজ জয়।
ম্যাচ সেরা সৌম্য সরকার, সিরিজ সেরা সাইফ হাসান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 − fifteen =