এই চার দিনে আমি ওই চার বছর ভুলে গেছি: শাহরুখ খান

অবশেষে গণমাধ্যমের সামনে এলেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। শুধু এলেনই না; নাচে, গানে, কথায়, হাসিতে তিনি মাতিয়ে রেখেছিলেন সংবাদ সম্মেলন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন, জন আব্রাহাম আর পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ।

‘পাঠান’ ছবি দুর্বার গতিতে ছুটছে। বলিউডের ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার করে শীর্ষে পৌঁছে গেছে শাহরুখের এ ছবি। ছবি মুক্তির ৫ দিনে ৫০০ কোটি ক্লাবে পৌঁছে গেছে যশরাজ ফিল্মসের অ্যাকশনধর্মী মশালা ছবিটি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। শাহরুখ, দীপিকা, জন, সিদ্ধার্থ সব প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিয়েছিলেন। শাহরুখ ‘পাঠান’–এর দুরন্ত সফলতার কৃতিত্ব তাঁর লাখ লাখ অনুরাগী আর সংবাদমাধ্যমকে দিয়েছেন। তাঁকে এর আগে সর্বশেষ পর্দায় দেখা গিয়েছিল ‘জিরো’ ছবিতে। দীর্ঘ চার বছর পর আবার বড় পর্দায় ফিরলেন তিনি।

এই চার বছর তিনি কী করেছেন, জবাবে কিং খান বলেন, ‘এই চার বছর আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু বেশ কিছু ভালো বিষয় আমার সঙ্গে ঘটেছে। আরিয়ান, সুহানা, আব্রামকে বড় হতে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে।’

মজার ছলে শাহরুখ বলেন, ‘আমার শেষ ছবিটা চলেনি। আর সেই ভয় থেকে আমি দ্বিতীয় ব্যবসার কথা ভাবতে শুরু করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, “রেড চিলিজ ফুড ইটারি”  নামের রেস্তোরাঁ খুলব। আমি ওই সময়ে ইতালিয়ান খাবার বানানো শিখেছিলাম। আমি আমার ছবির শুটিংয়ের সময় আদিকে (আদিত্য চোপড়া) পিৎজা খাইয়েছিলাম। সে আমায় বলেছিল, আগামী দিনেও আমায় কাজ দেবে।’

জন আব্রাহামের প্রসঙ্গে শাহরুখ বলেন, ‘আমি আর জন ভালো বন্ধু। কিন্তু এই প্রথমবার আমরা একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলাম। আমি জনকে খুব ভালোবাসি। ছবিতে একটা-দুটো দৃশ্যে আমি জনকে চুমু খেতে চেয়েছিলাম (মজার ছলে)। আর এটা মোটেও একতরফা ভালোবাসা নয়। সে-ও আমায় চুমু খেতে চেয়েছিল।’

এদিন শাহরুখকে প্রশ্ন করা হয় যে রুপালি পর্দায় আসার জন্য তাঁর কি খুব তাড়া ছিল? জবাবে কিং খান বলেন, ‘আমি কোনো দিন তাড়াহুড়ো করে কোনো ছবি শেষ করি না। আমি সবচেয়ে বেশি দুঃখী হই যখন মানুষকে নিরাশ করি। আমাকে “পাঠান”-এ অভিনয় করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আদিত্য চোপড়া আর সিদ্ধার্থ আনন্দের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এই চার দিনে আমি ওই চার বছর ভুলে গেছি।’

শাহরুখ আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই আমায় এত স্নেহ–ভালোবাসা দিয়েছেন। আমার বয়স এখন ৫৭। আমি তরুণদের বলতে চাই যে সিনেমা মানুষকে আনন্দ, আর খুশি দেওয়ার জন্য বানানো হয়। আমরা ভুলভ্রান্তি করে থাকি। উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ, যে ভাষাতেই ছবি নির্মাণ হোক না কেন, আমাদের লক্ষ্য থাকে মানুষের মধ্যে খুশি, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। এমনকি আমি বা জন খলচরিত্রে অভিনয় করলেও সেটা একটা চরিত্রমাত্র। আমরা সবাই কোনো না কোনো চরিত্রে অভিনয় করি মানুষকে আনন্দ দেব বলে। আমরা কখনোই কারও মনে আঘাত দিতে চাই না। আমরা শুধুই বিনোদন দিতে চাই। এখানে আমরা সবাই মিলেমিশে, হাসিঠাট্টা করে কাজ করি। দীপিকা অমর, আমি আকবর, আর জন অ্যান্টনি। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। ১০০ কোটি, ৫০০ কোটি বা হাজার কোটি আমার কাছে প্রাধান্য পায় না। আপনারা আমার ছবি দেখে যে আনন্দ পান, আর আপনাদের মুখে হাসি দেখে যে খুশি আমি পাই, তার চেয়ে কোনো পুরস্কার বা পরিণাম বড় নয়।’

‘পাঠান’ সুপারহিটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব অনেক দিন পর সুখের মুখ দেখেছে। আমরা ছবির জগতের মানুষেরা যতই আমাদের পরিবারকে সিনেমাজগতের থেকে দূরে রাখতে চাই না কেন, তারা ছবির জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।’ এদিনের সংবাদ সম্মেলনে ‘পাঠান টু’-কে ঘিরে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। শাহরুখ বলেন, ‘“পাঠান”–এর সিকুয়েলে কাজ করা আমার জন্য সম্মানজনক হবে। এর চেয়ে বড় আর আরও ভালো করব। “পাঠান টু”-র জন্য নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’

‘পাঠান’ ছবিকে ঘিরে সব সময় শাহরুখ আর জন আব্রাহামের ঠান্ডা লড়াইয়ের কথা উঠে এসেছে। কিন্তু এদিন সাফ হয়ে যায় যে এ রকম কিছু নয়। জন শাহরুখের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি ভাবতাম যে আমি এক নম্বর অ্যাকশন হিরো, কিন্তু শাহরুখ দেশের এক নম্বর অ্যাকশন হিরো। আমি সব কৃতিত্ব আদিত্যকে (চোপড়া) দিতে চাই। কারণ, সে আমাকে শাহরুখের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। আমার মনে হয় না যে সে (শাহরুখ) একজন অভিনেতা, সে এক আবেগ। আর সেই জন্য আমি তাকে চুমু দিতে চাই।’ জনের প্রসঙ্গে কিং খান বলেন, ‘পাঠান’-এর শিরদাঁড়া, আর ‘পাঠান’-এর সবচেয়ে ভালো জিনিস হলো ‘জিম’-এর চরিত্র, যাতে জন অভিনয় করেছে।’

দীপিকা ‘পাঠান’-এর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অ্যাকশনের জন্য আমাকে এত দিন ঠিকমতো ব্যবহার করা হয়নি। আমার একটা খেলাধুলার ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। কিছু ছবিতে আমি একটু–আধটু অ্যাকশন করেছি। অ্যাকশন আমার কাছে নাচের মতো।’ ‘পাঠান’-এর আকাশছোঁয়া সাফল্যে দীপিকা এদিন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি আবেগের সঙ্গে বলেন, ‘সবার থেকে এত ভালোবাসা পেয়ে আমি অভিভূত। ছবিটা খুশির জোয়ার নিয়ে এসেছে। আমার দারুণ অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমরা উৎসবে শামিল হয়েছি।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

6 − 2 =