একজন অনন্য মামুন

মৌ সন্ধ্যা

পর্দার আড়ালে থেকে একজন মানুষ কলকাঠি নাড়েন। তার ইশারায় চলে অনেকগুলো মানুষ। ঠিক যেন কোনো জাহাজের ক্যাপ্টেন তিনি। তার হুকুম শুনে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পর্দার পেছনে কাজ করেন আরও এক দল মানুষ। পর্দার সামনে যারা হাসেন, কাঁদেন, গান করেন, নাচ করেন তারাও অপেক্ষা করেন এই মানুষটির জন্য। কখন তিনি বলে উঠবেন ‘লাইট, ক্যামেরা অ্যাকশান’। আর চলতে শুরু করবে সবকিছু। আলো জ্বলবে, ক্যামেরা চলবে, ডায়ালগ বলবেন তারকারা। ‘কাট’ বললেই নিরবতা নামবে, থেমে যাবে সবকিছু। এতক্ষণে নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে কথা হচ্ছে নির্মাতাদের প্রসঙ্গে। বর্তমান সিনে মিডিয়ার হাল ধরে আছে এক ঝাঁক তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। যারা একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। সমানভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন বড় পর্দার ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য। এসব তরুণ তুর্কীদের মধ্যে অন্যতম একজন অনন্য মামুন।

পথচলা

অনন্য মামুন ১৯৮৬ সালের ১ মার্চ বগুড়া জেলার উত্তর চেলোপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএসএস সম্পন্ন করেছেন তিনি। চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত অনন্য মামুন। তবে বর্তমানে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে নাম ডাক তার। প্রথমে কাহিনীকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও পরে অনন্ত জলিল প্রযোজিত ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ সিনেমার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে পথচলা শুরু হয় তার। অনন্য মামুনের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে মোস্ট ওয়েলকাম, আমি শুধু চেয়েছি তোমায়, অস্তিত্ব, আবার বসন্ত, নবাব এলএলবি, মেকআপ ও কসাই।

কর্মজীবন

চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে অনন্য মামুন ২০১০ সালে তার কর্মজীবন শুরু করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র জগতে অনন্য মামুনের লেখা অনেক ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র রয়েছে। তাছাড়াও, তিনি টালিউড চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর পাণ্ডুলিপি লিখেছেন। ২০১২ সালে তিনি তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ পরিচালনা করেন। তারপরে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ-প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ পরিচালনা করেন। ২০১৫ সালে ‘ব্ল্যাকমেল’ এবং ‘ভালবাসার গল্প’ দুটি ছবি মুক্তি পায়। ২০১৬ সালে আরিফিন শুভ এবং নুসরাত ইমরোজ তিশা অভিনীত ‘অস্তিত্ব’ মুক্তি পায়। ২০১৬ সালে বাপ্পি চৌধুরী এবং বিদ্যা সিনহা সাহা মিম অভিনীত ‘অমি তোমার হতে চায়’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।

যতো চলচ্চিত্র

অনন্য মামুন তার কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন সব সময়। নিয়মিত এেেকর পর এক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে গেছেন তিনি। তার মধ্যে কয়েকটি চলচ্চিত্র বেশ জনপ্রিয় ও ব্যাবসাসফল হয়েছে। অনন্য মামুন পরিচালিত সিনেমাগুলো হলো – ওয়ান্টেড (২০১০), মোস্ট ওয়েলকাম (২০১২), আমি শুধু চেয়েছি তোমায় (২০১৪), ব্ল্যাকমেইল ও ভালবাসার গল্প (২০১৫), অস্তিত্ব (২০১৬), আমি তোমার হতে চাই ও তুই শুধু আমার (২০১৮), বন্ধন ও আবার বসন্ত (২০১৯), নবাব এলএলবি (২০২০), মেকআপ ও কসাই (২০২১), অমানুষ ও সাইকো (২০২২), রেডিও (২০২৩)।

ওয়েব সিরিজ নির্মাণ

কয়েকটি ওয়েব সিরিজও নির্মাণ করেছেন অনন্য মামুন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইন্দুবালা (২০১৮), ফোন এক্স, ধোকা ও যাত্রা (২০২০)। আরও বেশ কিছু ওয়েব ফিল্ম ও ওয়েব সিরিজ নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন অনন্য মামুন।

সমালোচনা

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অজুহাতে ৫৭ জনকে পাচারের অভিযোগে একবার মালয়েশিয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর আই থিয়েটারে তার পরিচালিত নবাব এলএলবি চলচ্চিত্র অর্ধাংশ মুক্তি দেওয়ায় তিনি দর্শকদের কাছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলেন। ২৪ ডিসেম্বর ঐ চলচ্চিত্রে পুলিশকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল তাকে।

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি বেশ কয়েকবার অনন্য মামুনের পরিচালক সমিতির সদস্য পদ স্থগিত করে। এমন চলচ্চিত্রের সংগঠন আছে অনেকগুলো। এসব সংগঠন নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি অনন্য মামুন। একবার গণমাধ্যমে অনন্য মামুন বলেন, ‘দেশের চলচ্চিত্র বাঁচাতে চলচ্চিত্রের কোনো সংগঠনের কোনো রকম প্রয়োজন নেই।’ ‘আন্দোলন, সংগ্রাম, মুখে আশ্বাস, অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলে চলচ্চিত্রের মানুষদের চলচ্চিত্রের কথা বলা জরুরি’ বলে মনে করেন ‘অমানুষ’ সিনেমার এই পরিচালক। সংগঠনের লোকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এসব সংগঠনের মানুষদের মুখের কথা আর মনের কথা এক নয়।

অনন্য মামুন বলেন, ‘আমি নিজে দশটা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছি। এ ছাড়া সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রের ১৯টি সংগঠন রয়েছে। এত এত সংগঠনে থেকে কি লাভ, যদি তারা সিনেমা মুক্তির সময় অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করে। সিনেমা মুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করে, বাঁকা চোখে দেখে, সিনেমার পাশে থাকে না। সিনেমা যখন একটু একটু করে বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে, তখন বিভিন্ন প্রসঙ্গে এনে সিনেমার পাশে থাকছে না। অনেকের কথা কাজে মিল নেই।’

শেষ কথা

বর্তমানে মুক্তির অপেক্ষায় আছে অনন্য মামুন পরিচালিত ‘দরদ’ সিনেমা। এই সিনেমা নিয়ে অনন্য মামুন বলেন, ‘দরদ’ একটা পুরাদস্তুর বলিউড ফিল্ম হচ্ছে। দারুণভাবে বলিউডে শাকিব খানের এন্ট্রি হচ্ছে। আগামী এপ্রিলে পরবর্তী প্রজেক্টে অনেক বড় একটা ধামাকা অপেক্ষা করছে। দরদ সিনেমাটি প্রায়  ১০ কোটি টাকার প্রজেক্ট।

‘দরদ’ সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করছে ভারতের এস কে মুভিজ, ওয়ান ওয়ার্ল্ড মুভিজ, বাংলাদেশের অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট ও কিবরিয়া ফিল্মস। এতে আরো অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, এলিনা শাম্মী, জেসিয়া ইসলাম, ভারতের রাহুল দেব প্রমুখ। ছবিটি বাংলাসহ হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মালয়ালাম, কর্ণাটক – এই ছয় ভাষায় মুক্তি পাবে। শুভ কামনা অনন্য মামুনের জন্য।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: শুভেচ্ছা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 − six =