একজন সফল নারীর প্রতিদিন

নাহিন আশরাফ

যখন তালিকা করা হয় বিশ্বের সফল মানুষদের সেখানেও দেখা যায় নারীদের নাম। তবে এটা সত্য যে নারীদের সাফল্যের চূড়ায় যেতে নানা ধরনের বাধা অতিক্রম করে যেতে হয়। একজন নারীর আশেপাশে সব সময় থাকে অদৃশ্য একটি দেয়াল। যে দেয়াল তাকে অনেক সময় তার সাফল্যের চূড়ায় যেতে বাধা দেয়। একজন নারীকে সফল হতে হলে সে অদৃশ্য দেয়াল পার করতে হয়। একজন পুরুষ তার কাজের ক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য যেসব সহযোগিতা তার পরিবার এবং সমাজ থেকে পায়, অনেক ক্ষেত্রে নারীরা সেসব সহযোগিতা পায় না। আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা না পেলে একজন নারীর জীবন হয়ে ওঠে আরো কঠিন। তবুও আজ যারা নিজেদের সফল বলে দাবি করতে পারে, সেসব নারীরা অনেক কিছু আমলে না নিয়ে নিজের মতো কাজ চালিয়ে গেছে। তবে সফল নারীদের কিছু বিশেষ রুটিন ফলো করতে হয়। যে রুটিন তাকে অন্য সব মানুষ থেকে ভিন্ন করে তোলে। সফল নারীদের থাকে নিজস্বতা। বিশ্বের কিছু সফল নারীদের জীবনী পড়ে জানা যায় যে কিছু রুটিন তাদের সকলের মধ্যেই এক। রুটিন ও সময়মতো তারা জীবনকে গুছিয়ে নিতে পেরেছে বলে আজ তারা সফল। জেনে নেওয়া যাক কেমন হতে পারে একজন সফল নারীর রুটিন:

রাতে পরিকল্পনা করে রাখা

সফল নারীরা সময় অপচয় করতে পছন্দ করে না। তাই তারা পরের দিন সকালের পরিকল্পনা আগের দিন রাতেই করে ফেলে। যেকোনো কাজের পূর্ব পরিকল্পনা করে রাখলে পরের দিন তাড়াহুড়া করতে হয় না এবং সময় নষ্ট হয় না। এক্ষেত্রে পরের দিন কি কি কাজ, তার একটি তালিকা করে রাখা যেতে পারে। এবং কোন কাজের জন্য কতটুকু সময় বরাদ্ধ আছে তাও মাথায় রাখতে হবে। কারণ সফল হওয়ার জন্য সময় জ্ঞান থাকা অনেক বেশি প্রয়োজন। সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে অনেকের থেকে পিছিয়ে পড়তে হয়।

নিজেকে গুছিয়ে রাখা

সফল নারীরা চেষ্টা করেন নিজেদের সবসময় গুছিয়ে রাখতে। যেমন নিজের রুম গুছিয়ে রাখা, ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখা, কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়া। এমনকি কর্মক্ষেত্রের ডেস্কও তারা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে এবং তাদের সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তারা একটি ফাইলে রাখে। নিজেকে সবসময় গুছিয়ে রাখলে কাজে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং কাজ করার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। তাছাড়া দৈনন্দিন জীবনে যেসব জিনিসের প্রয়োজন পড়ে; যেমন পানি, ছাতা ইত্যাদি তারা সবসময় নিজেদের হাতের কাছে রাখে, যাতে বিপদের সময় তা কাজে লাগে। নিজেকে গুছিয়ে রাখার মধ্যেই সফল নারীরা আত্মতৃপ্তি পায়। সব সময় এলোমেলো থাকলে এবং প্রয়োজনের সময় জিনিস খুঁজে না পেলে কাজ করার শক্তি এবং সময় দুটিই নষ্ট হয়।

স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন

বেশিরভাগ সফল নারী চেষ্টা করে একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে। কারণ অর্থ এবং সফলতা যতই জীবনে থাকুক না কেন দিনশেষে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই জীবনের সফলতাকে উপভোগ করার জন্য সুস্থ থাকা জরুরি। সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করতে হবে। সফল নারীরা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে এবং দ্রুত ঘুমাতে চলে যায়। কারণ শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুম না হলে পরের দিন কর্মশক্তি পাওয়া যাবে না। এছাড়া দিনের কিছুটা সময় ব্যায়াম করা এবং সময়মতো পরিমাণ মতো খাদ্য গ্রহণ করা।

দক্ষতা বৃদ্ধি করা

সফল নারীরা প্রতিদিনই কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করে। প্রতিটি সকালে নতুন সম্ভাবনা জীবনকে নতুন করে শুরু করার জন্য। সফল নারীরা প্রতিদিনই চেষ্টা করে নিজের স্কিল বাড়ানোর জন্য এবং নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে দক্ষতা বাড়াতে। তারা সব সময় মনে করে তারা যা জানে তা যথেষ্ট নয়, তাদের আরো জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন। সফল নারীরা নতুন কোনো বিষয়ে দক্ষতা বাড়ায় কিংবা পুরানো স্কিল নিয়ে সবসময় চর্চা করে। একজন সফল ব্যক্তি হতে হলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনার কোন কাজের প্রতি আগ্রহ রয়েছে এবং কী করলে আপনি সেখানে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।

নিজেকে সময় দেওয়া

প্রতিটি মানুষেরই কিছু শখের কাজ রয়েছে। একজন সফল নারী যত ব্যস্তই থাকুক না কেন দিনের কিছুটা সময় তার শখের জন্য রাখে। নিজেকে সময় দেওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে সময় দিলে তবেই নিজেকে আরো বেশি চেনা সম্ভব। আমরা জীবনের বেশিরভাগ সময় অন্যের সঙ্গে পার করে দেই। কিন্তু নিজের সঙ্গে একান্ত সময় কাটানোর গুরুত্ব ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। একজন সফল নারী তার কর্মব্যস্ততার মধ্যেও নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখে এবং সেই সময়টা  সে তার শখের কাজ করে। যেমন গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা, রান্না করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি।

সঠিক পোশাক

দৈনন্দিন জীবনে সঠিক পোশাক নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একজন সফল নারী জানে কখন তার কি ধরনের পোশাক পরা উচিত। কারণ পোশাক সাধারণ কিছু নয়, এটি ফুটিয়ে তোলে ব্যক্তিত্ব ও পরিচয়। কেমন ধরনের পোশাক ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে পারে, সে অনুযায়ী পোশাক বাছাই করে নিতে হবে। কারণ সব ধরনের পোশাক সব জায়গায় এবং সব মানুষের জন্য মানানসই নয়। তাই একজন সফল নারীর থাকে অসাধারণ পোশাক বাছাই করার দক্ষতা।

সকালের রুটিন

বলা হয়ে থাকে, সারাদিন কেমন যাবে তা নির্ভর করছে সকালের উপর। এই কথাটি সুচারুরূপে পালন করে সফল নারীরা। সকালকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তোলার জন্য খুব ভোরে ওঠা প্রয়োজন। তবেই নিজের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখা যায়। সফল নারীরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যাতে তাদের তাড়াহুড়া করতে না হয়। ঘুম থেকে উঠে তারা ফ্রেশ হয়ে নিজের জন্য সময় বের করে, নিজের পছন্দের কাজ করে এবং একটি পরিপূর্ণ নাস্তা করে। সফল হতে হলে সেলফ কেয়ার করা অনেক বেশি প্রয়োজন। যত্ন নেওয়া এবং নিজেকে ভালো রাখার জন্য সব ধরনের কাজ করতে হবে। কর্মব্যস্ততায় সারাদিন হয়তো নিজেকে তেমন সময় দেওয়া কিংবা সেলফ কেয়ার করা সম্ভব হয় না। তাই সফল নারীরা খুব ভোরে ওঠে যাতে সেই সময়টা তারা নিজের জন্য কাটাতে পারে।

আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত না নেওয়া

একজন সফল নারী কখনোই সে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আবেগতাড়িত হয়ে নেয় না। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার আগে সে বাস্তবধর্মী চিন্তা করে এবং এর ফলাফল কি হতে পারে তা ভেবে দেখে।

মানসিক যত্ন নেওয়া

একজন সফল নারী অবশ্যই তার মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখে। কারণ মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে সে অনেকের কাছ থেকে পিছিয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই নিজের মনের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন এবং সকল পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার অনুশীলন করা প্রয়োজন। শান্ত থাকার এই অনুশীলন একদিনে হয় না। দিনের পর দিন মেডিটেশন কিংবা ইয়োগার মাধ্যমে মানসিক যত্ন নিয়ে তবেই নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে হয়। কারণ সফল হতে হলে অনেক বেশি ধৈর্যের প্রয়োজন হয়।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ইন্টারপ্রেনিয়র

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty − 8 =