একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার মাসুম আজিজ মারা গেছেন ( (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (১৭ অক্টোবর) বেলা ৩টার দিকে ক্যানসারের কাছে হার মেনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। খবরটি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন অভিনেতার ছেলে উৎস। ৮ অক্টোবর থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই জ্যেষ্ঠ অভিনেতা। দীর্ঘ সময় ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। ১৩ অক্টোবর থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো।
মাসুম আজিজের ছেলে উৎস জামান জানান, আজ সোমবার (১৭ অক্টোবর) তার বাবার মরদেহ হাসপাতালেই থাকবে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) অভিনেতার মরদেহ নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে রাষ্ট্রীয় ও সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে মঙ্গলবার শহীদ মিনারে রাখা হবে মাসুম আজিজের মরদেহ। সেখানে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
অভিনেতার ছেলে উৎস জানিয়েছিলেন, ‘এ বছরের শুরু থেকে বাবা ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসা চলছিলো। কিন্তু গত মাস থেকে তার শরীরটা খারাপ। সেজন্য তখন একবার হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম। তারপর কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর বাসায় ফেরেন। কিন্তু এই মাসের শুরুর দিকে আবারও অবস্থার অবনতি হয়। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সে কারণে গত ৮ অক্টোবর আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই।’ চিকিৎসকের বরাতে তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ক্যানসারের কেমো থেরাপি দেওয়ার পর অভিনেতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এছাড়া ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়াও সংক্রমিত হয়। এসব কারণে ওষুধ কাজ করছিলো না।
মঞ্চ, টিভি নাটক ও সিনেমা সবখানেই অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছেন মাসুম আজিজ। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি টিভিতে কাজ করছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হলো- ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, ‘সাকিন সারিসুরি’, ‘তিন গ্যাদা’, ‘দুই দুকুনে চার’ ইত্যাদি। অভিনেতা ছাড়াও মাসুম আজিজ চিত্রনাট্যকার ও নাট্যনির্মাতা হিসেবে পরিচিত। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খ্যাতি রয়েছে তার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তিনি থিয়েটারে কাজের মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন। হুমায়ূন আহমেদের ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, সালাউদ্দিন লাভলুর ‘তিন গ্যাদা’সহ অনেক টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
‘ঘানি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে রাইসুল ইসলাম আসাদের সঙ্গে যুগ্মভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মাসুম আজিজ। এছাড়া ২০২২ সালে একুশে পদক পেয়েছেন মাসুম আজিজ। ‘গহীনে শব্দ’, ‘এই তো প্রেম’, ‘গাড়িওয়ালা’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন মাসুম আজিজ। সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সনাতন গল্প’ পরিচালনা করেছেন তিনি। সিনেমাটি ২০১৮ সালে মুক্তি পায়।